ঢাকা ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপক‚লীয় অঞ্চলের মানুষের মানবেতর জীবনযাপন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৪:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০১৭
  • ২৮৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা অস্বাভাবিকভাবে দিন দিন বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমের জেলা সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলের আবহাওয়া জীববৈচিত্র্যের উপর প্রভাব পড়ছে ব্যাপকভাবে।
জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ১৯৮৮ সালে প্রথম এ উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে। ঘুর্ণীঝড়ের দাপটে নোনা পানির প্রচন্ড শ্রোতে উপকূলীয় এলাকার ফসলি জমি ও মানুষের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরপর উপকূলীয় অঞ্চলে পর্যায় ক্রমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে থাকে।
দেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের উপর দিয়ে ২০০৮ সালের ১৫ নবেম্বর ‘সিডর’ এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ‘আইলা’ নামক দুটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ঝড় বয়ে যায়। সিডর’ ও ‘আইলা’ ঝড়ের ফলে তাৎক্ষতিক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও এর ফলে একটা দীর্ঘ মেয়াদি পরিবেশগত ক্ষতি ও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিহয় আইলায় ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সমুদ্রের লোনাপানি প্রায় দুই লাখ একর ফসলি জমির ভেতর ঢুকে পড়ে আর বের হতে পারেনি। এর ফলে তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদি অনেক ক্ষতি হয়েছে। মিষ্টি পানির ফসল উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক বৃক্ষ ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ মারা গেছে। এবং লোনাপানির বদ্ধতার কারণে অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। অনেক বন্যপ্রাণী ও স্থানীয়ভাবে পালন করা হাস, গরু, ছাগল,প্রভৃতির খাদ্য সংকট সৃষ্টি হওয়ায় এ অঞ্চলে সকল গৃহপালিত পশুপালন ব্যাহত হয়েছে।
আর এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার নানা দিকের একটি হলো এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্য পুষ্টি ঘাটতি।
আইলায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও ও সংস্থা সাহায্য কারলেও, আইলার আট বছর পরেও এ এলাকা মানুষের বসবাসের উপযোগী করে গড়েতুলতে পারিনি। পারিনি এই উপকূলীয় মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা, পুষ্টি ও খাদ্য নিশ্চিত করতে।
ছবিতে, আইলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার পদ্মাপুকুর ইউনিয়নের শিক্ষা ও চিকিৎসাহীন গুচ্ছগ্রামের অপুষ্টো শিশুরা। এই গুচ্ছগ্রামে ৮১ পরিবারে দু’শোরও বেশি অপুষ্ট শিশু রয়েছে। শিক্ষা চিকিৎসাহীন অপুষ্ট শিশুরা ব্যাবহার হচ্ছে এনজিও ও সংস্থাগুলোর কাছে।
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের এই উপকূলীয় অঞ্চল। এইমর্মে, বিশ্বের বড় বড় দাতাসংস্থার কাছে অপুষ্ট মা শিশু ও অসহায় মানুষের করুণচিত্র তুলেধরে বিশাল অঙ্কের অর্থ সহযোগিতা নিয়ে নিজেরাই পকেট ভর্তি করছে এনজিও ও সংস্থাগুলো। শুধুই খাতা কলমে কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ রেখেছেন। মুখে বলেন উপকূলের মানুষের সুপেয়পানি, পুষ্টি, চিকিৎসা, শিক্ষা, নিশ্চিত করা হয়েছে। সৃষ্টি করা হয়েছে বনায়ন ও কর্মসংস্থানের। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এ সবের উল্টো, উপকূলীয় মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।
আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত এউপকূলীয় অঞ্চলে বনায়ন সৃষ্টিকরা হয়নি, চাষাবাদের অযোগ্য রয়ে গেছে সমতল ভূমি। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

উপক‚লীয় অঞ্চলের মানুষের মানবেতর জীবনযাপন

আপডেট টাইম : ১১:৫৪:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা অস্বাভাবিকভাবে দিন দিন বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমের জেলা সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলের আবহাওয়া জীববৈচিত্র্যের উপর প্রভাব পড়ছে ব্যাপকভাবে।
জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ১৯৮৮ সালে প্রথম এ উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে। ঘুর্ণীঝড়ের দাপটে নোনা পানির প্রচন্ড শ্রোতে উপকূলীয় এলাকার ফসলি জমি ও মানুষের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরপর উপকূলীয় অঞ্চলে পর্যায় ক্রমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে থাকে।
দেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের উপর দিয়ে ২০০৮ সালের ১৫ নবেম্বর ‘সিডর’ এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ‘আইলা’ নামক দুটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ঝড় বয়ে যায়। সিডর’ ও ‘আইলা’ ঝড়ের ফলে তাৎক্ষতিক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও এর ফলে একটা দীর্ঘ মেয়াদি পরিবেশগত ক্ষতি ও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিহয় আইলায় ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সমুদ্রের লোনাপানি প্রায় দুই লাখ একর ফসলি জমির ভেতর ঢুকে পড়ে আর বের হতে পারেনি। এর ফলে তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদি অনেক ক্ষতি হয়েছে। মিষ্টি পানির ফসল উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক বৃক্ষ ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ মারা গেছে। এবং লোনাপানির বদ্ধতার কারণে অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। অনেক বন্যপ্রাণী ও স্থানীয়ভাবে পালন করা হাস, গরু, ছাগল,প্রভৃতির খাদ্য সংকট সৃষ্টি হওয়ায় এ অঞ্চলে সকল গৃহপালিত পশুপালন ব্যাহত হয়েছে।
আর এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার নানা দিকের একটি হলো এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্য পুষ্টি ঘাটতি।
আইলায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও ও সংস্থা সাহায্য কারলেও, আইলার আট বছর পরেও এ এলাকা মানুষের বসবাসের উপযোগী করে গড়েতুলতে পারিনি। পারিনি এই উপকূলীয় মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা, পুষ্টি ও খাদ্য নিশ্চিত করতে।
ছবিতে, আইলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার পদ্মাপুকুর ইউনিয়নের শিক্ষা ও চিকিৎসাহীন গুচ্ছগ্রামের অপুষ্টো শিশুরা। এই গুচ্ছগ্রামে ৮১ পরিবারে দু’শোরও বেশি অপুষ্ট শিশু রয়েছে। শিক্ষা চিকিৎসাহীন অপুষ্ট শিশুরা ব্যাবহার হচ্ছে এনজিও ও সংস্থাগুলোর কাছে।
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের এই উপকূলীয় অঞ্চল। এইমর্মে, বিশ্বের বড় বড় দাতাসংস্থার কাছে অপুষ্ট মা শিশু ও অসহায় মানুষের করুণচিত্র তুলেধরে বিশাল অঙ্কের অর্থ সহযোগিতা নিয়ে নিজেরাই পকেট ভর্তি করছে এনজিও ও সংস্থাগুলো। শুধুই খাতা কলমে কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ রেখেছেন। মুখে বলেন উপকূলের মানুষের সুপেয়পানি, পুষ্টি, চিকিৎসা, শিক্ষা, নিশ্চিত করা হয়েছে। সৃষ্টি করা হয়েছে বনায়ন ও কর্মসংস্থানের। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এ সবের উল্টো, উপকূলীয় মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।
আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত এউপকূলীয় অঞ্চলে বনায়ন সৃষ্টিকরা হয়নি, চাষাবাদের অযোগ্য রয়ে গেছে সমতল ভূমি। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা।