ঢাকা ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪ সেনা সদস্যসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১৭

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৬:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০১৭
  • ২৯০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসে চার সেনা সদস্যসহ অন্তত ১১৭ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার রাত ও আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড়ধসের ঘটনায় এ প্রাণহানি হয়।এর মধ্যে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ১৯ জন ও চন্দনাইশে চারজন, রাঙামাটিতে চার সেনা সদস্যসহ ৮৯ জন এবং বান্দরবানে চারজন নিহত হয়েছেন।

ইউএনও লুফর রহমান বলেন, পাহাড়ধসে গতকাল রাত দুইটার দিকে চন্দনাইশ উপজেলার চাইহ্লাউ খেয়াংয়ের বাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। এ সময় চাইহ্লা উ খেয়াংয়ের মা মকাংঞো খেয়াং (৬০), ছেলে ক্যসা খেয়াং (৭) ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা ভাগনি ম্যাম্রাউ (১৪) মাটি চাপায় মারা যান। ক্যসা খেয়াং দ্বিতীয় শ্রেণিতে ও ম্যাম্রাউ অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। চাইহ্লা উ খেয়াং ও তাঁর মেয়ে সানু খেয়াংকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাঙামাটি: অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী জানান, দুই দিনে পাহাড়ধসে সেনাসদস্যসহ ৮৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটি সদরে ৪৫ জন, কাউখালীতে ২৩ জন, কাপ্তাইয়ে ১৬ জন, বিলাইছড়িতে তিনজন ও জোড়াছড়িতে দুজন প্রাণ হারিয়েছেন।

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক রাশেদুল হাসান জানান, পাহাড়ধসে সেনাবাহিনীর চার সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। তারা উদ্ধারকাজে গিয়েছিলেন। তারা হলেন মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, করপেরাল আজিজ ও সৈনিক শাহীন। ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, একজন সেনাসদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক আজ বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ পরিদর্শন করেন।

বান্দরবান: দুই দিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ধসে জেলায় চারজন নিহত, দুজন নিখোঁজ এবং ছয়জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বান্দরবান জেলা শহরের কালাঘাটায় এবং শহরতলির লেমুঝিরিপাড়া ও লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় বাসাবাড়িতে পাহাড় ধসে পড়ে। এ সময় লেমুঝিরিপাড়ায় একই পরিবারের ঘুমন্ত তিন শিশু ও কালাঘাটায় একজন কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন।

লেমুঝিরিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত স্বপন বড়ুয়ার বাড়িতে পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে। স্বপন বড়ুয়ার বাড়িটি কাদা আকারে নেমে আসা পাহাড়ের মাটির সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। প্রতিবেশী সুমন বড়ুয়া বলেন, গতকাল রাত তিনটার দিকে ভারী বৃষ্টি হলে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি বাড়িতে ঢুকতে থাকে। তখন স্বপন বড়ুয়া ও তার স্ত্রী বাড়ির নালায় পানি সরানোর জন্য বের হয়েছিলেন। তাঁদের তিন শিশু সন্তান ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় বিকট আওয়াজে পাহাড়টি বাড়িতে ঘুমন্ত শিশুদের ওপর পড়ে। প্রতিবেশীরা কাদা সরিয়ে সেতু বড়ুয়া (১০), হৃদয় বড়ুয়া (৭) ও লতা বড়ুয়াকে (৩) উদ্ধারের চেষ্টা করেন। পরে মৃত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করা হয়। সন্তানদের উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হন স্বপন বড়ুয়া নিজেও।

গতকাল রাত একটার দিকে জেলা শহরের কালাঘাটায় একটি বাসায় পাহাড় ধসে পড়ে। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় রেভা ত্রিপুরা (২২) নামের একজন কলেজছাত্র মাটিচাপা পড়ে মারা যান।

বান্দরবান সদর থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ বেলাল জানিয়েছেন, বান্দরবানে নিহত চারজনের মরদেহ সৎকারের জন্য আত্মীয়দের কাছে দেওয়া হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

৪ সেনা সদস্যসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১৭

আপডেট টাইম : ১১:২৬:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসে চার সেনা সদস্যসহ অন্তত ১১৭ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার রাত ও আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড়ধসের ঘটনায় এ প্রাণহানি হয়।এর মধ্যে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ১৯ জন ও চন্দনাইশে চারজন, রাঙামাটিতে চার সেনা সদস্যসহ ৮৯ জন এবং বান্দরবানে চারজন নিহত হয়েছেন।

ইউএনও লুফর রহমান বলেন, পাহাড়ধসে গতকাল রাত দুইটার দিকে চন্দনাইশ উপজেলার চাইহ্লাউ খেয়াংয়ের বাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। এ সময় চাইহ্লা উ খেয়াংয়ের মা মকাংঞো খেয়াং (৬০), ছেলে ক্যসা খেয়াং (৭) ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা ভাগনি ম্যাম্রাউ (১৪) মাটি চাপায় মারা যান। ক্যসা খেয়াং দ্বিতীয় শ্রেণিতে ও ম্যাম্রাউ অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। চাইহ্লা উ খেয়াং ও তাঁর মেয়ে সানু খেয়াংকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাঙামাটি: অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী জানান, দুই দিনে পাহাড়ধসে সেনাসদস্যসহ ৮৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটি সদরে ৪৫ জন, কাউখালীতে ২৩ জন, কাপ্তাইয়ে ১৬ জন, বিলাইছড়িতে তিনজন ও জোড়াছড়িতে দুজন প্রাণ হারিয়েছেন।

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক রাশেদুল হাসান জানান, পাহাড়ধসে সেনাবাহিনীর চার সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। তারা উদ্ধারকাজে গিয়েছিলেন। তারা হলেন মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, করপেরাল আজিজ ও সৈনিক শাহীন। ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, একজন সেনাসদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক আজ বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ পরিদর্শন করেন।

বান্দরবান: দুই দিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ধসে জেলায় চারজন নিহত, দুজন নিখোঁজ এবং ছয়জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বান্দরবান জেলা শহরের কালাঘাটায় এবং শহরতলির লেমুঝিরিপাড়া ও লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় বাসাবাড়িতে পাহাড় ধসে পড়ে। এ সময় লেমুঝিরিপাড়ায় একই পরিবারের ঘুমন্ত তিন শিশু ও কালাঘাটায় একজন কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন।

লেমুঝিরিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত স্বপন বড়ুয়ার বাড়িতে পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে। স্বপন বড়ুয়ার বাড়িটি কাদা আকারে নেমে আসা পাহাড়ের মাটির সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। প্রতিবেশী সুমন বড়ুয়া বলেন, গতকাল রাত তিনটার দিকে ভারী বৃষ্টি হলে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি বাড়িতে ঢুকতে থাকে। তখন স্বপন বড়ুয়া ও তার স্ত্রী বাড়ির নালায় পানি সরানোর জন্য বের হয়েছিলেন। তাঁদের তিন শিশু সন্তান ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় বিকট আওয়াজে পাহাড়টি বাড়িতে ঘুমন্ত শিশুদের ওপর পড়ে। প্রতিবেশীরা কাদা সরিয়ে সেতু বড়ুয়া (১০), হৃদয় বড়ুয়া (৭) ও লতা বড়ুয়াকে (৩) উদ্ধারের চেষ্টা করেন। পরে মৃত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করা হয়। সন্তানদের উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হন স্বপন বড়ুয়া নিজেও।

গতকাল রাত একটার দিকে জেলা শহরের কালাঘাটায় একটি বাসায় পাহাড় ধসে পড়ে। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় রেভা ত্রিপুরা (২২) নামের একজন কলেজছাত্র মাটিচাপা পড়ে মারা যান।

বান্দরবান সদর থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ বেলাল জানিয়েছেন, বান্দরবানে নিহত চারজনের মরদেহ সৎকারের জন্য আত্মীয়দের কাছে দেওয়া হয়েছে।