ঢাকা ১১:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অতিরিক্ত জনসংখ্যা কি সম্পদ জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৮:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ জুন ২০১৭
  • ২৮৮ বার

হাওর বার্তাঃ  ১৯৭৩ সালে জাতীয়ভাবে যখন প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে সাত কোটি। সে সময় জনসংখ্যাকে এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে প্রত্যেক বৎসর আমাদের ৩০ লক্ষ লোক বাড়ে। আমার জায়গা হলো ৫৫ হাজার বর্গমাইল। যদি আমাদের প্রত্যেক বৎসর ৩০ লক্ষ লোক বাড়ে, তাহলে ২৫-৩০ বৎসরে বাংলার কোনো জমি থাকবে না হালচাষ করার জন্য। বাংলার মানুষ বাংলার মানুষের মাংস খাবে। সে জন্য আমাদের পপুলেশন কন্ট্রোল, ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে হবে।’
ইতিমধ্যে আমাদের জনসংখ্যা সরকারি হিসাবেই ১৬ কোটি পেরিয়ে গেছে, কিন্তু দেশের মোট ভূখণ্ড সেই ৫৫ হাজার বর্গমাইলই আছে; বরং কৃষিজমি কমেছে, নদীনালা-খালবিল ভরাট হয়েছে অনেক, বনের পর বন উজাড় হয়েছে এবং কি শহর কি গ্রাম সর্বত্র জনবসতি বেড়েছে বহুগুণ, প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ বিচিত্রমুখী সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যেগুলোর গভীরে রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও অস্বাভাবিক মাত্রার জনঘনত্ব।
কিন্তু বিস্ময়কর সত্য হচ্ছে, অঘোষিতভাবে, অনেকটা অলক্ষ্যেই বলা চলে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের কাছে গুরুত্ব হারিয়েছে। সরকারিভাবে প্রতিবছর পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির পেছনে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে বটে, কিন্তু এই কর্মসূচি যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁদের মধ্যেই একধরনের স্থবির মনোভাব কাজ করছে। এখনো এ দেশে বছরে প্রায় ১৭ লাখ মানুষ মোট জনসংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে না। সর্বশেষ গত চার বছরে তা বাড়েনি বললেই চলে।
সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে সমস্যা বলে দেখা হচ্ছে না; বরং বলা হচ্ছে, এই জনসংখ্যাকে জনসম্পদ হিসেবে দেখতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের জনঘনত্ব ইতিমধ্যে নগররাষ্ট্র ছাড়া পৃথিবীর সব দেশের জনঘনত্বকে ছাড়িয়ে গেছে। অনেক বিজ্ঞানীর মতে, অতিরিক্ত জনঘনত্ব সামাজিকভাবে অসুস্থ বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক জটিল সমস্যার সঙ্গে অতিরিক্ত জনঘনত্বের নিবিড় সম্পর্ক আছে। এটা অস্বীকার করা হলে আমাদের অচিরেই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে গুরুত্বহীন বা কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করার মতো অবিমৃশ্যকারী অবস্থান থেকে সরে আসা প্রয়োজন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অতিরিক্ত জনসংখ্যা কি সম্পদ জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন

আপডেট টাইম : ১২:০৮:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ জুন ২০১৭

হাওর বার্তাঃ  ১৯৭৩ সালে জাতীয়ভাবে যখন প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে সাত কোটি। সে সময় জনসংখ্যাকে এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে প্রত্যেক বৎসর আমাদের ৩০ লক্ষ লোক বাড়ে। আমার জায়গা হলো ৫৫ হাজার বর্গমাইল। যদি আমাদের প্রত্যেক বৎসর ৩০ লক্ষ লোক বাড়ে, তাহলে ২৫-৩০ বৎসরে বাংলার কোনো জমি থাকবে না হালচাষ করার জন্য। বাংলার মানুষ বাংলার মানুষের মাংস খাবে। সে জন্য আমাদের পপুলেশন কন্ট্রোল, ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে হবে।’
ইতিমধ্যে আমাদের জনসংখ্যা সরকারি হিসাবেই ১৬ কোটি পেরিয়ে গেছে, কিন্তু দেশের মোট ভূখণ্ড সেই ৫৫ হাজার বর্গমাইলই আছে; বরং কৃষিজমি কমেছে, নদীনালা-খালবিল ভরাট হয়েছে অনেক, বনের পর বন উজাড় হয়েছে এবং কি শহর কি গ্রাম সর্বত্র জনবসতি বেড়েছে বহুগুণ, প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ বিচিত্রমুখী সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যেগুলোর গভীরে রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও অস্বাভাবিক মাত্রার জনঘনত্ব।
কিন্তু বিস্ময়কর সত্য হচ্ছে, অঘোষিতভাবে, অনেকটা অলক্ষ্যেই বলা চলে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের কাছে গুরুত্ব হারিয়েছে। সরকারিভাবে প্রতিবছর পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির পেছনে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে বটে, কিন্তু এই কর্মসূচি যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁদের মধ্যেই একধরনের স্থবির মনোভাব কাজ করছে। এখনো এ দেশে বছরে প্রায় ১৭ লাখ মানুষ মোট জনসংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে না। সর্বশেষ গত চার বছরে তা বাড়েনি বললেই চলে।
সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে সমস্যা বলে দেখা হচ্ছে না; বরং বলা হচ্ছে, এই জনসংখ্যাকে জনসম্পদ হিসেবে দেখতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের জনঘনত্ব ইতিমধ্যে নগররাষ্ট্র ছাড়া পৃথিবীর সব দেশের জনঘনত্বকে ছাড়িয়ে গেছে। অনেক বিজ্ঞানীর মতে, অতিরিক্ত জনঘনত্ব সামাজিকভাবে অসুস্থ বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক জটিল সমস্যার সঙ্গে অতিরিক্ত জনঘনত্বের নিবিড় সম্পর্ক আছে। এটা অস্বীকার করা হলে আমাদের অচিরেই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে গুরুত্বহীন বা কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করার মতো অবিমৃশ্যকারী অবস্থান থেকে সরে আসা প্রয়োজন।