হাওর বার্তাঃসুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ত্রাণ নিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে এক ইউপি সদস্যার স্বামীসহ আটক করে গণধোলাই দিয়েছে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা। খবর পেয়ে পুলিশ ইউপি সদস্যার স্বামীসহ জনতার কাছ থেকে উদ্ধার করে।
গণধোলাইয়ের শিকার ইউপি সদস্যা ও স্বামী গুরুত্ব আহত হলে প্রথমে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার সময় উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের লামাগাঁও বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাতার চ্যারিট্যাবল ট্রাষ্ট হাওরাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা দিতে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নামের তালিকা সংগ্রহের জন্য। এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নামের তালিকা আসে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ৮৯৬জনকে ত্রাণ সহায়তা দেয় সংগঠনটি। ত্রাণ সহায়তার মধ্যে জনপ্রতি প্রায় দুই হাজার টাকার সমপরিমাণ চাল, ডাল, ছানা, তেল, খেজুরসহ বিভিন্ন প্রকার পণ্য ছিল।
চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ রায়, সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে ত্রাণগ্রহীতাদের তালিকা প্রণয়ন করেন। প্রায় দুই-তিন হাজার টাকার জিনিস দেয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৃষ্টপুর, গড়েরড়াও, মাহমুদপুর, রামসিংহপুর, দু-মালসহ ১০টি গ্রামের ২৯৬জনের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০০করে টাকা হাতিয়ে নেন ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের সদস্য ও লামাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা হাফসা বেগমের স্বামী কয়েস মিয়া ও তার লোকজন।
ত্রাণ না পেয়ে সন্ধ্যা ৮টার দিকে লামাগাঁও বাজারে সংঘবদ্ধ উত্তেজিত জনতা কয়েস মিয়াকে আটক করেন। আটক স্বামীকে উদ্ধার করতে গিয়ে ইউপি সদস্যা হাফসা বেগমও উত্তেজিত জনতার হাতে আটক হন। স্থানীয় লোকজন জানান, এলাকার ১০জন মেম্বার ও তাদের দালালদের মাধ্যমে প্রত্যেক কার্ডগ্রহীতাদের কাছ থেকে ত্রাণ বিতরণের দোহাই দিয়ে চেয়ারম্যান নিজে নগদ পার্সেন্টিস গ্রহণ করেন।
স্থানীয়রা জানান, চিহ্নিত দালালরা হচ্ছে রামসিংহপুরের খোকন মিয়া, কালাম, মজমপুরের তপন বাবু, দূর্লভপুরের সারোয়ার, গোলাবাড়ীর আব্দুর রউফ, লিটন মিয়া, লামাগাওয়ের শ্যামনূর, আব্দুল হাইয়্যুম, সাইফুল ইসলাম ও মাহমদপুরের জুবায়ের প্রমুখ। এরা চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রত্যেকের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে তালিকায় নাম উত্তোলন করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,রামসিংহপুর গ্রামের খোকন মিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিত সরাকরে ঘনিষ্ঠ সহযোগী সেই সাথে অপর আর একজন তপন তার গ্রামের তার আত্মীয়। তাছাড়া ইউপি সদস্যা হাফছা আক্তারও ইউনিয়ন পরিষদে অন্যান্যের চাইতে তার সাথে ঘনিষ্ট।
ত্রাণ বিতরণ শুরু হলে ত্রাণ প্রদানকারীদের বক্তৃতার একপর্যায়ে সকল ত্রাণ গ্রহীতারা কর্তৃপক্ষকে জানান, তাদের কাছ থেকে চেয়ারম্যানের কথা বলে মেম্বার ও তাদের দালালরা নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ঘটনাস্থলে আসার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানকে কল করা হলে তিনি সুকৌশলে পালিয়ে যান।
অভিযোগের ব্যাপারে চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, যারা আমার নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা আদায় করেছেন বলে শুনা যাচ্ছে তারা আমার ঘনিষ্ট কেউ নয় তারা আমার ভোটার। আমি তাদের কে কখনও বলিনি কারো কাছ থেকে আমার নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা আদায় করতে।
ইউপি সদস্যরা বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশেই মহিলা সদস্যা, তাদের স্বামী ও চেয়ারম্যানের দালালরা রিলিফ গ্রহণকারীদের কাছ থেকে নগদ ঘুষ নিয়েছেন। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত উপজেলা ত্রাণ কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত দাস জানান, ত্রাণ বিতরণকালে ভুক্তভোগীরা তাদের কাছ থেকে ৫শ টাকা করে হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাহিরপুর থানার ওসি তদন্ত বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে এসআই তপন,এসআই আমীর ও পিএসআই ইমাম এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। এসআই আমির হোসেন রাত সাড়ে ১০টায় জানান,জনতা কর্তৃক আটককৃত ইউপি সদস্যা ও তার স্বামীকে গুরুত্ব আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাতেই থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়া হয়। পরে রাতেই ইউপি সদস্যা ও তার স্বামীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।