আজ ৩০ মে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ঘাতকের বুলেটের কাছে বীরদর্পে বুক পেতে দিয়ে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে আরো বেশি সিক্ত ও উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর চেতনার কাছে পরাজিত হয়েছে দেশি-বিদেশি ঘাতক শক্তি, অন্ধকারের প্রেতাত্মারা। জিয়াউর রহমান উভয় অবস্থাতেই শক্তিমান, আমাদের জাতীয় জীবনের নায়ক।
বেঁচে থাকাকালে তিনি তো সেই মহান নায়ক, যিনি দেশের ঘনঘোর দুর্দিনে ডাক দিয়েছেন মুক্তির, যখন কারো হিম্মত ছিল না দেশকে মুক্ত করার আহ্বান জানানোর, তখনই আবির্ভূত হলেন নায়ক। মহান নেতা জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান নামটি যেন একটি ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা। যে ইতিহাসের সূচনা ব্রিটিশ ভারতেরও বহু আগে, আগ্রাসী শক্তির হাত থেকে নিজ মাতৃভূমিকে রক্ষার তাগিদ রয়েছে যে ইতিহাসে। যুগে যুগে আবির্ভুত হওয়া বীর আর সাহসী সন্তানদের একজন জিয়াউর রহমান। যিনি শতাব্দীর বাঁক বদলের ইতিহাসের প্রধান অনুঘটক, নায়কদেরও নায়ক।
আজকের দিনে বাংলাদেশের যে ইতিহাস লেখা হয়, সে ইতিহাস অসম্পূর্ণ রয়ে যেত যদি জিয়াউর রহমান নামক মহানায়ক যথাসময়ে আবির্ভূত না হতেন। এ জন্যই জিয়াউর রহমান নামটি আমাদের জাতীয় জীবনে এতটা গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালে পাক-হানাদার বাহিনীর নির্বিচার আক্রমণ-নিপীড়নের দিনে, তিনি হিম্মত নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে।
মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার ঐতিহাসিক ফল বর্ণনা করতে গিয়ে এ কে খন্দকার তাঁর ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ গ্রন্থে বলছেন, ‘যুদ্ধের সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে শুনেছি এবং যুদ্ধের পরবর্তী সময়ও শুনেছি মেজর জিয়ার ঘোষণাটি তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে কতটা উদ্দীপ্ত করেছিল। মেজর জিয়ার ঘোষণায় মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে, হ্যাঁ, এইবার বাংলাদেশ সত্যিই একটা যুদ্ধে নেমেছে।’
রাজনীতির বন্ধ্যা মাঠেও তিনি প্রাণের সঞ্চার করলেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনীতির মাঠকে গতিশীল ও প্রাণবন্ত করে ফিরিয়ে দিলেন মানুষের অধিকার, গতি পেল মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই। একক কর্তৃত্বের ধারণাকে বাদ দিয়ে উৎসাহিত করলেন ভিন্নমত সহিষ্ণুতার সংস্কৃতিকে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং মানুষের মুক্তবাকের ধারণাকে ছড়িয়ে দিলেন চারদিকে। দেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ গণসংগ্রামীদের যথাযত মর্যাদাদানের পাশাপাশি মওলানা ভাসানীদের মতো সূর্যসন্তানদের সম্মান ও বীরত্বকে আর ধুলোয় ধূসরিত হতে দিলেন না।
লোকান্তরের জিয়াউর রহমানও অনেক বেশি শক্তিমান। কারণ তাঁর চেতনার গভীরেই মূলত নিহিত রয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চাবিকাঠি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের সার্বিক অগ্রগতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে লাল-সবুজের দেশকে এ গিয়ে নিতে যে ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন, প্রকৃতপক্ষে জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচির মধ্যেই লুকিয়ে ছিল আজকের এই ভিশনের মূল প্রণোদনা।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চেতনাই মূলত বাংলাদেশের গণমানুষের উন্নয়নের চেতনা, জিয়াউর রহমানের চেতনাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, এ দেশকে রক্ষার চেতনা।
তাঁর দেখানো পথ ধরেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমান, সেই আন্দোলনের সুফল গণমানুষের ঘরে তুলে দিতে পারলেই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এ দেশের সবুজ জমিন। সফল হবে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সংগ্রাম।
লেখক : অধ্যাপক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।