সরকার নিজেদের বৈধতার জন্য হলেও একটি আগাম নির্বাচন দেবে। এই অভিমত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের। তিনি বলেন, ‘স্বঘোষিত’ এ সরকারের দেশ-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরকার নির্ধারিত মেয়াদের আগেই একটি নির্বাচন দেবে। সে নির্বাচনেও বিএনপিকে বাইরে রাখতে পারে ক্ষমতাসীনরা। এ জন্যই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে দায়ের মামলায় সাজা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। আবার দলের কাউকে ভাগিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করছে। কিন্তু এটা করে বিএনপি ভাঙতে পারবে না। কারণ বিএনপি একটি আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সারা দেশে এ দলের অসংখ্য নেতা-কর্মী সমর্থক রয়েছে। বিএনপি থেকে সিনিয়র দু-চারজন নেতা চলে গেলেও বিএনপির কোনো ক্ষতি হবে না। যিনি যাবেন, তাকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। অতীত ইতিহাস তাই বলে। গতকাল নয়াপল্টনের নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন সদ্য কারামুক্ত বিএনপির এই শীর্ষপর্যায়ের নেতা। তার মতে, এ সরকার ‘অ্যাবনর্মাল’। কারণ তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। ক্ষমতা দখল করেছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। তাই এ সরকার ভবিষ্যতে কখনোই গণতান্ত্রিক পথে হাঁটবে না। এর বিপরীতে তথা চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য যত ধরনের শক্তি প্রয়োগের দরকার তাই করবে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তারা ব্যবহার করবে। দল পুনর্গঠন প্রসঙ্গে গয়েশ্বর রায় বলেন, দল পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা সময় বেঁধে কিংবা দিনক্ষণ নির্ধারণ করে করা যায় না। যখন যা প্রয়োজন তাই করা হবে। তবে দল পুনর্গঠনের জন্য চলমান পরিস্থিতি অনুকূল নয়। এখন গোঁজামিল দিয়ে সংগঠন গোছানো যাবে না। কিংবা ঢাকায় বসে পকেট কমিটি করলেও চলবে না। আগামী দিনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের মাধ্যমে কমিটি করতে হবে। দেশে প্রায় ৪৫ হাজার ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন আছে। মাঠের নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এসব কমিটি করতে হবে। ঘরে বসে চাপিয়ে দেওয়া নেতৃত্ব দিলে তৃণমূল গ্রহণ করবে না।
তিনি বলেন, পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ত্যাগী নেতাদের সামনে নিয়ে আসাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এটা অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু তা আমাদের করতেই হবে। নইলে আমাদের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, রাজনীতি ঘরে বসে হয় না। মাঠে বেরোতে হবেই। এ জন্য তৃণমূলে কার্যকর কমিটি করতে হবে। আর আন্দোলনে মূলত শাখা বা ইউনিট কমিটিই শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে থাকে। কেন্দ্রীয় কমিটির ভূমিকা এখনে গৌণ। তৃণমূলে কমিটি নিষ্ক্রিয় থাকলে কোনো আন্দোলনের সফলতা আসবে না। এটা পরীক্ষিত বাস্তবতা। গয়েশ্বর রায় বলেন, গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনা আমাদের সহ্য করতে হবে। আবার সাবধানও থাকতে হবে। গণমাধ্যমের কথা ধরে নেতাদের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস গড়ে তোলা যাবে না। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এর আগে নিজেদের মধ্যে কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তা দূর করে ফেলতে হবে। এতে একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় এ ধরনের সন্দেহ-অবিশ্বাস থাকলে কাজ করাই কঠিন। সরকার তো বসেই আছে বিরোধী দলে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য। কিন্তু আমাদের সেই ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।