ঢাকা ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর শামীম ওসমানের দাঁড়ি-গোফ যুক্ত ছবি ভাইরাল, যা বলছে ফ্যাক্টচেক ঢাকায় যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা চার-ছক্কা হাঁকানো ভুলে যাননি সাব্বির হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই : ধর্ম উপদেষ্টা একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চেয়ে জামায়াত উল্টো জাস্টিফাই করছে: মেজর হাফিজ ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ’ পিএইচডি করে ১৯ সন্তানের মা শমী কায়সারের ব্যাংক হিসাব তলব আগামী মাসের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক সবাই হাতে পাবে : প্রেস সচিব নিক্কেই এশিয়াকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন মেয়াদে ভুয়া নির্বাচন মঞ্চস্থ করেছেন হাসিনা

অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক প্রয়োগে জনস্বাস্থ্য বিপন্ন বিলুপ্তির পথে ৫৪ প্রজাতির মাছ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০১:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ মে ২০১৭
  • ২৭৬ বার

মৎস্যচাষে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যেমন নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে, তেমনি ধ্বংসের মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। মৎস্যচাষি ও ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় মৎস্যখামারে এবং উৎপাদিত মাছ ও শুঁটকিতে অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় ফরমালিন, হিলডল, ডিডিটি, চুন, আন্টিবায়োটিক এমনকি ধানচাষে ব্যবহৃত কীটনাশকসহ বিভিন্ন ড্রাগ ও কেমিক্যাল ব্যবহার করছেন। মাছের জন্য প্রায় ৯০ প্রকারের বিদেশী ওষধ আমদানি হচ্ছে, অথচ এসবের মধ্যে অনুমোদন আছে মাত্র তিনটির। বাকিগুলো অনুমোদনহীন। মাছে ও মৎস্যখামারে অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে এসব মাছ খেয়ে মানুষ ক্যান্সার, লিভার সমস্যা, কিডনি সংক্রমণসহ নানান জটিল রোগে অতীতের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। রাসায়নিক মেশানো মাছ গত ১০ বছরে দেশে বিকলাঙ্গের সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে গবেষণায় জানা গেছে। অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক ব্যবহার দেশীয় মাছের আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রভাব ফেলেছে।
জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা কয়েকটি মৎস্যখামারে মৎস্যচাষি এবং শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সাথে সরেজমিন আলাপ করে জানা যায় , অনিয়ন্ত্রিত বা প্রয়োজনের অধিক রাসায়নিক দ্রব্য ও ওষধ মেশালে, একই পুকুরে একাধিক রাসায়নিক দ্রব্য মেশালে বা বর্ষাকালে কীটনাশক মেশালে পুকুর, মাছ ও মানুষের স্বাস্থ্যের যে মারাত্মক ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে এক ধরনের উদাসীনতার চিত্র লক্ষ করা গেছে। কাজিপুরের চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের মৎস্যচাষি আব্দুল মান্নান বলেন, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করায় তার পুকুরের মাছ , স্বাস্থ্যবান ও দেখতে তরতাজা হয়। তার ভাষায় ‘আমরা মুনাফার কথা ভাবি, এতে কোনো দোষ নেই, আর পাবলিক তো মাছ কিনতাছে। নিশ্চিয়ই খাইতাছে, তাইলে আপত্তিটা কোথায়?’ শুঁটকি মাছব্যবসায়ীদের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা ধান চাষের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক শুঁটকি মাছে ব্যবহার করে থাকেন। কোনো কোনো শুঁটকিতে এমনকি ডিডিটি পাউডার ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও সেমিনারে দেশের বিশিষ্ট মৎস্য ও কৃষিবিদরা বলেন, ইদানীং দেশে সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি মাছেও রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হচ্ছে। যার ফলে মানুষ নানা ধরনের অসুখের শিকার হচ্ছে। মাছে ফরমালিন ও হিলডল জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে শুধু জীবন নয় পরিবেশও বিপন্ন হচ্ছে। মৎস্যবিজ্ঞানীরা বলেন, ডিডিটি পাউডার বিশ্বের ৫০টি দেশে নিষিদ্ধ। অথচ এখানে হাত বাড়ালেই তা পাওয়া যায়। বিদেশে কোনো রাসায়নিক পদার্থ মেশানো মাছ হিমায়িত করা হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে তা হয়। এসব কারণে বিদেশে রফতানিকৃত অনেক মাছ ফেরত পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। বিজ্ঞানীরা আরো বলেন, বিষাক্ত এসব রাসায়নিক পদার্থ মাছ ও জলাশয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মেশানোর ফলে মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকদের গবেষণার সূত্র তুলে ধরে তারা জানান, অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো খাদ্য ও মাছ খাওয়ার কারণে গত ১০ বছরে দেশে বিকলাঙ্গের সংখ্য প্রায় ১৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জানান, অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক ব্যবহারে দেশে নদনদী ও মুক্ত জলাশায়ের মাছও দূষিত হয়ে উঠেছে। তিনি জানান, অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিকের বিষক্রিয়া প্রায় ৫৪ প্রজাতির দেশীয় মাছ আজ বিলুপ্তির পথে । এভাবে চলতে থাকলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে উত্তরাঞ্চল থেকে ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার

অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক প্রয়োগে জনস্বাস্থ্য বিপন্ন বিলুপ্তির পথে ৫৪ প্রজাতির মাছ

আপডেট টাইম : ১২:০১:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ মে ২০১৭

মৎস্যচাষে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যেমন নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে, তেমনি ধ্বংসের মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। মৎস্যচাষি ও ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় মৎস্যখামারে এবং উৎপাদিত মাছ ও শুঁটকিতে অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় ফরমালিন, হিলডল, ডিডিটি, চুন, আন্টিবায়োটিক এমনকি ধানচাষে ব্যবহৃত কীটনাশকসহ বিভিন্ন ড্রাগ ও কেমিক্যাল ব্যবহার করছেন। মাছের জন্য প্রায় ৯০ প্রকারের বিদেশী ওষধ আমদানি হচ্ছে, অথচ এসবের মধ্যে অনুমোদন আছে মাত্র তিনটির। বাকিগুলো অনুমোদনহীন। মাছে ও মৎস্যখামারে অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে এসব মাছ খেয়ে মানুষ ক্যান্সার, লিভার সমস্যা, কিডনি সংক্রমণসহ নানান জটিল রোগে অতীতের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। রাসায়নিক মেশানো মাছ গত ১০ বছরে দেশে বিকলাঙ্গের সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে গবেষণায় জানা গেছে। অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক ব্যবহার দেশীয় মাছের আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রভাব ফেলেছে।
জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা কয়েকটি মৎস্যখামারে মৎস্যচাষি এবং শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সাথে সরেজমিন আলাপ করে জানা যায় , অনিয়ন্ত্রিত বা প্রয়োজনের অধিক রাসায়নিক দ্রব্য ও ওষধ মেশালে, একই পুকুরে একাধিক রাসায়নিক দ্রব্য মেশালে বা বর্ষাকালে কীটনাশক মেশালে পুকুর, মাছ ও মানুষের স্বাস্থ্যের যে মারাত্মক ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে এক ধরনের উদাসীনতার চিত্র লক্ষ করা গেছে। কাজিপুরের চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের মৎস্যচাষি আব্দুল মান্নান বলেন, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করায় তার পুকুরের মাছ , স্বাস্থ্যবান ও দেখতে তরতাজা হয়। তার ভাষায় ‘আমরা মুনাফার কথা ভাবি, এতে কোনো দোষ নেই, আর পাবলিক তো মাছ কিনতাছে। নিশ্চিয়ই খাইতাছে, তাইলে আপত্তিটা কোথায়?’ শুঁটকি মাছব্যবসায়ীদের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা ধান চাষের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক শুঁটকি মাছে ব্যবহার করে থাকেন। কোনো কোনো শুঁটকিতে এমনকি ডিডিটি পাউডার ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও সেমিনারে দেশের বিশিষ্ট মৎস্য ও কৃষিবিদরা বলেন, ইদানীং দেশে সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি মাছেও রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হচ্ছে। যার ফলে মানুষ নানা ধরনের অসুখের শিকার হচ্ছে। মাছে ফরমালিন ও হিলডল জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে শুধু জীবন নয় পরিবেশও বিপন্ন হচ্ছে। মৎস্যবিজ্ঞানীরা বলেন, ডিডিটি পাউডার বিশ্বের ৫০টি দেশে নিষিদ্ধ। অথচ এখানে হাত বাড়ালেই তা পাওয়া যায়। বিদেশে কোনো রাসায়নিক পদার্থ মেশানো মাছ হিমায়িত করা হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে তা হয়। এসব কারণে বিদেশে রফতানিকৃত অনেক মাছ ফেরত পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। বিজ্ঞানীরা আরো বলেন, বিষাক্ত এসব রাসায়নিক পদার্থ মাছ ও জলাশয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মেশানোর ফলে মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকদের গবেষণার সূত্র তুলে ধরে তারা জানান, অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো খাদ্য ও মাছ খাওয়ার কারণে গত ১০ বছরে দেশে বিকলাঙ্গের সংখ্য প্রায় ১৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জানান, অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক ব্যবহারে দেশে নদনদী ও মুক্ত জলাশায়ের মাছও দূষিত হয়ে উঠেছে। তিনি জানান, অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিকের বিষক্রিয়া প্রায় ৫৪ প্রজাতির দেশীয় মাছ আজ বিলুপ্তির পথে । এভাবে চলতে থাকলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে উত্তরাঞ্চল থেকে ।