খালেদার টার্গেট দল ঢেলে সাজানো

দল ঢেলে সাজানোর টার্গেট নিয়েই এগোচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে ক্লিন ইমেজ ও আন্দোলনে মাঠে থাকা ত্যাগীদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। চেয়ারপারসনের কার্যালয় সংশ্লিষ্টরা অবশ্য বলছেন, দল পুনর্গঠনে এবার অত্যন্ত ‘কঠোর’ ও ‘নির্মোহ’ হতে যাচ্ছেন বিএনপিপ্রধান। কারণ দুই দফায় দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। পদধারী অধিকাংশ নেতাকে মাঠে না পেলেও পদবঞ্চিতদের বড় একটি অংশ তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তাই এখন দল গোছাতে গিয়ে তিনি এসব পদধারীর বিষয়ে শক্তভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। সামনে নিয়ে আসবেন পদ না থাকা দায়িত্বশীল নেতাদের। গুরুত্ব পাবেন অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের তরুণ নেতারা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল- সব স্তরে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের বাকি সময়জুড়েই বিএনপিতে পুনর্গঠন কার্যক্রম চলবে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে ফিরলেই শুরু হবে এ প্রক্রিয়া। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল কবির রিজভীসহ অন্য নেতাদের কারামুক্তিরও অপেক্ষায় আছেন বেগম জিয়া। জানা গেছে, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল দিয়েই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান গ্রেফতার হওয়ায় সংগঠনের কমিটি ঘোষণা কিছুটা ঝুলে গেছে। চলতি বছর ঘর গোছানোর প্রক্রিয়া একটি যৌক্তিক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারলে আগামী বছর ফের নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে মাঠে নামবে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে দল পুনর্গঠনের কোনো বিকল্প নেই। এ চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। সরকারবিরোধী দুর্বার আন্দোলনের জন্য দল গোছাতেই হবে। সৎ, যোগ্য ও আন্দোলনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে। দলের নীতিনির্ধারকরা সে বিষয়টি ভাবছেন।’ দলের যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, ‘যেসব পদধারী নেতা পেছনের দুটি আন্দোলনে ভূমিকা রাখেননি তাদের ব্যাপারে অবগত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আবার যেসব নেতা পদ না থাকা সত্ত্বেও বিএনপিপ্রধানের ডাকে সাড়া দিয়ে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন তাও কারও অজানা নয়। বিএনপিতে পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যারা আন্দোলনের মাঠে ছিলেন, আমার বিশ্বাস খালেদা জিয়া তাদের সামনের কাতারে নিয়ে আসবেন।’

সূত্র মতে, চেইন অব কমান্ড বজায় রাখতেও কঠোর অবস্থানে খালেদা জিয়া। দলের শৃঙ্খলা প্রশ্নে কোনো ছাড় নয় বলে নেতাদের তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। সরকার কিংবা অন্য কোনো দলের সঙ্গে বিএনপির কিছু নেতার যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ক্ষুব্ধ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ নিয়ে খালেদা জিয়া দল ও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে রেখে ভাঙন ধরানোর তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার দিকগুলো আমলে নিয়ে দলীয় বন্ধন অটুট রাখতে তিনি উদ্যোগী ভূমিকাও নেন। বিএনপিপ্রধান সাফ জানিয়ে দেন, ‘যদি কেউ এ সরকারের মন্ত্রী-এমপি হতে চান, তাহলে তারা যেতে পারেন। দলে তাদের কোনো প্রয়োজন নেই। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস আছে। তারাই দলের দুর্দিনে হাল ধরবেন।’

বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের নেতৃত্বের কথা ভাবছেন তা বাস্তবায়ন করা হবে অত্যন্ত কঠিন কাজ। কারণ, বর্তমান কমিটির বড় একটি অংশই সুবিধাবাদী চরিত্রের। ক্লিন ইমেজের নেতার সংখ্যা খুবই কম। তা ছাড়া মাঠপর্যায়ে ত্যাগী যেসব নেতা রয়েছেন তাদের সামনে নিয়ে এলে চেইন অব কমান্ড বজায় রাখা খুবই জটিল হবে। এ ক্ষেত্রে যারা দুর্নীতি কিংবা সুবিধাবাদী চরিত্রের তাদের কাছ থেকে এক ধরনের অঙ্গীকারনামা নেওয়া উচিত। যদি তারা দল ও দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হন, সঙ্গে সঙ্গেই যেন দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।’ অবশ্য তৃণমূল থেকে অনেক ক্লিন ইমেজের ত্যাগী ও দক্ষ নেতা বের করে আনা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। নেতারা বলছেন, শিগগিরই মূল দল ছাড়াও অঙ্গ-সহযোগী ১১টি সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পর্যায়ক্রমে ভেঙে দেওয়া হবে। শুরুতেই যুবদলের নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। যদিও সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদের ওপর হামলার ঘটনায় এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এরপর স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, জাসাস, শ্রমিক দল, তাঁতী দল, ওলামা দল, মৎস্যজীবী দল পুনর্গঠন করা হবে। ঢাকা মহানগর বিএনপিতে অপেক্ষাকৃত নতুন নেতৃত্ব আনা হবে। দুই ভাগে কমিটি ঘোষণা করা হবে।

বিএনপি আশা করছে, আগামী বছর যে কোনো সময় সরকার একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দেবে। সেক্ষেত্রে ওই নির্বাচন কার অধীনে হতে পারে- এ নিয়ে বিএনপি একটি রূপরেখাও দিতে চায়। ক্ষমতাসীনরা চাইলে এ নিয়ে সংলাপে বসবে দলটি। তা না হলে আগামী বছর ফের আন্দোলনে নামবে বিএনপি। তবে জ্বালাও-পোড়াওয়ের অভিযোগ থেকে বের হয়ে শান্তিপূর্ণ বড় ধরনের শোডাউনের কথা ভাবছেন নীতিনির্ধারকরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘নাম যা-ই হোক একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা একটি নির্বাচন চাই। এ দাবি আমাদের আগেরই।

সরকারের জনপ্রিয়তা যদি থাকে তাহলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে বাধা কোথায়? আশা করি সরকার দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে খুব শিগগিরই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর