ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত যান্ত্রিকতার ফাঁকে নির্মল প্রাকৃতিক বাতাস আর পড়ন্ত বিকেলে কাশবনে ছুটে বেড়াতে কার না ভাল লাগে? নৌকায় করে লেকে ঘুরে বেড়ানো আর ঘোড়ার পিঠে চড়া যেনো এক স্বপ্নময় বাস্তবতা।
পাঠক, বলছি রাজধানীর বুকে উত্তরা ১৫ নং সেক্টরের ডিয়াবাড়ি’র অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা। জায়গাটির অপরূপ সৌন্দর্য যে আপনাকে বিমোহিত করবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। শেষ বিকেলের পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়া সূর্যের দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
ইট, কাঠ, কংক্রিটের এই কর্মব্যস্ত শহরে একটু প্রশান্তি ভরে দম নেয়ার স্থান তেমন নেই বললেই চলে। তবুও ডিয়াবাড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে নিয়ে যাবে শুভ্রতায় পরিপূর্ণ কোমল এক রাজ্যে। বিস্তীর্ণ এলাকা যেন শুভ্রতার চাদরে মোড়া। এক অপরুপ সৌন্দর্যের রাজ্য এটি। ছুটির দিনে ডিয়াবাড়ি হয়ে ওঠে বৈশাখী মেলার মত জমজমাট। রং-বেরংয়ের পোশাকে সজ্জিত হয়ে তরুণ-তরুণীরা এখানে এসে আড্ডায় মেতে ওঠেন। কেউ কেউ তো গানের সরঞ্জাম নিয়ে এস এখানে রীতিমত গানের আসর জমায়।
ডিয়াবাড়ী
ডিয়াবাড়ির আরেকটি অন্যতম দর্শণীয় জায়গা হচ্ছে বিশাল বটগাছ। আজকালকার বাংলা নাটকগুলোতে এই বটগাছটি প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায়। এক বিশাল বটগাছ আর তার দুপাশে রাস্তা। এই বটগাছেরও দেখা মিলবে ডিয়াবাড়িতে। প্রায় সময় সেখানে কোন না কোন নাটকের শুটিং চলে। ভাগ্য ভালো থাকলে হয়তো দেখা হয়ে যেতে পারে আপনার প্রিয় কোনো তারকার সঙ্গে। দিনের কর্ম ব্যস্ততার মাঝে অনেক শিল্পী, অভিনেতা, অভিনেত্রীরা ও নিচের গাড়ি চেপে এখানে আসেন দম ফেলতে।
সকাল থেকে ভ্রমণকারীর সংখ্যা স্বাভাবিক থাকলেও বিকেল ৪ টার পর থেকে কয়েক হাজার ভ্রমণকারী জড়ো হতে থাকে। এখানে ভিড় করে মুক্ত আকাশের নিচে লেকের ধারে ফুচকা আর চটপটির স্বাদে জমিয়ে কাটাতে পারেন একটি বিকেল। এছাড়া নৌকা, ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ী এবং ছোটদের জন্য বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা ডিয়াবাড়ীতে যোগ করেছে এক ভিন্ন মাত্রা। তাছাড়া মজার বিষয় হচ্ছে এখানে খুব কাছ থেকে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরন দেখা যায়, শূটিং স্পট হিসেবে ডিয়াবাড়ীর বেশ খ্যাতি রয়েছে।
ডিয়াবাড়ী
বেশ কিছুদূর সামনে গেলে দেখা পাওয়া যায় একটি মরা নদীর। এই মরা নদীর ওপরেই নির্মাণ করা হয়েছে একটি নান্দনিক সংযোগ সেতু। এই সেতু থেকে আঁকা-বাঁকা নদীর নজরকাড়া সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আছে পরিত্যক্ত নৌকা। জাল ফেলে মাছ ধরছে জেলেরা। অদ্ভুত, অসাধারণ, রোমাঞ্চকর ও মনোরম পরিবেশে প্রিয়জনকে নিয়ে কাটিয়ে আসতে পারেন দারুণ এক বিকেল।
ডিয়াবাড়ী
সাবধানতা:
তবে সন্ধ্যার আগেই আপনাকে সেখানে থেকে ফিরতে হবে । সন্ধ্যার পরে সেথানে নেমে আসে ছিনতাইকারী ও চোরের উপদ্রব। তার আগেই আপনাকে টহল পুলিশ নিরাপদে বাড়ি ফিরার ব্যবস্থা করে দিতে। মনে রাখবেন দায়িত্বরত পুলিশের কথা মতো সাথে সাথে ফিরে আসলে আপনাকে কোন বিপদের সমূখীন হতে হবে না।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকার যেকোন প্রান্ত থেকে উত্তরা/গাজীপুর/ টঙ্গীগামী যে কোনো বাসে করে যাবেন উত্তরা হাউস বিল্ডিং। সেখানে নর্থটাওয়ার ও মাসকট প্লাজার সামনেই দেখতে পাবেন দিয়াবাড়ি যাওয়ার জন্য অপেক্ষমান রিক্সা। রিক্সা নিয়ে ডিয়াবাড়ি লেক চলে যেতে পারেন অনায়াসে। আপনি চাইলে লেগুনা দিয়ে ও যেতে পারেন। লেগুনা আপনাকে নামিয়ে দিবে একেবারে ডিয়াবাড়ী বটতলায়। এছাড়া মিরপুর বেড়িবাঁধ হয়ে যেতে পারেন ডিয়াবাড়ী। লেগুনার ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। আর সেখানে রিক্সা ভাড়া উৎসবের দিনে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তবে আপনাকে ডিয়াবাড়ি থেকে ফিরতে একটু বেশি ভাড়া দিতে হতে পারে । কারন সেসময় লোকজনের চাপ একটু বেশি থাকায় ভাড়াটাও একটু বেশি আদায় করে পরিবহনগুলো।