ঢাকা ১০:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিটিং ‘নিষিদ্ধ কাণ্ডে’ বাড়ল লোকালের ভাড়াও

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৬:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৭
  • ২৮৬ বার

রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধ করে আবার চালুর ঘটনায় ভাড়ার নৈরাজ্য আরও বেড়েছে। যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, যাত্রাপথে তাদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাজে আচরণ করছে পরিবহন শ্রমিকরা। আর অভিযানের আগে মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকা থাকলেও এখন নেয়া হচ্ছে সাত টাকা।

বিআরটিএ বাসের যে ভাড়া নির্ধারণ করে তাতে বড় বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা আছে সাত টাকা। আর মিনিবাসের ক্ষেত্রে পাঁচ টাকা। কোনো গাড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী নিক আর না নিক এর চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায়ের কোনো সুযোগ নেই।

তবে আইন আছে আইনের জায়গায়, বাস্তবে আছে নৈরাজ্য। সিটিং, ডাইরেক্ট বার এ রকম বহুবিধ নামে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। গত রবিবার থেকে সিটিংবিরোধী অভিযান চারদিন চালিয়ে ক্ষান্ত দিয়েছে বিআরটিএ। ১৫ দিনের জন্য অবৈধ সিটিং সার্ভিস বৈধ করে দিয়েছে তারা।

আর এই অভিযানের ফাঁকে প্রচার হয়েছে বড় বাসের ন্যূনমত ভাড়া সাত টাকা। আর এই সুযোগ এখন নিচ্ছে ছোটবাসের শ্রমিকরা। সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকার জায়গায় সিটিং হিসেবে চলা বাসগুলো ১০, ১৫ বা ২০-আদায় করছে যে যার মত করে। আর লোকাল হিসেবে চলা বাসগুলোই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? তারাও আদায় করছে তাদের খেয়াল খুশি মত। কোথাও সাত, কোথাও আট, কোথাও বা তার চেয়ে বেশি।

আইন অনুযায়ী বাসের ভেতরে বিআরটিএর ভাড়ার চার্ট থাকার কথা। কিন্তু চার দিন আগেও যে চার্ট টানানো হয়েছে, সেগুলো এরই মধ্যে ছিড়ে ফেলা হয়েছে। আর মিনিবাসে বড়বাসের চার্ট সাঁটিয়ে সেটি দেখেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

টঙ্গী থেকে রামপুরা হয়ে যাত্রাবাড়ী যায় সুপ্রভাত পরিবহণ। এই কোম্পানির কিছু বাস সিটিং এবং কিছু বাস লোকাল হিসেবে এই রুটে চলাচল করে। কিন্তু বুধবার নতুন করে সিটিং সার্ভিসকে বৈধতা দেওয়ার পরপরই বেড়ে গেছে সুপ্রভাত পরিবহনের লোকাল বাসের ভাড়াও। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সুপ্রভাত পরিহণের সিটিং বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ১৫-২০ টাকা ভাড়া আদায় করছে।

টঙ্গী থেকে উত্তরার হাউজবিল্ডিংয়ে যেতে সুপ্রভাত পরিবহণের লোকাল বাসে উঠেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে আব্দুর রহমান। তিনি ভাড়া পাঁচ টাকা ভাড়া দিলে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। সহকারী ওই যাত্রীর কাছ থেকে সাত টাকা বলে দাবি করেন।

আবদুর রহমান প্রতিবাদ করলে বাসের সহকারী বলেন, ‘লোকাল বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া সাত টাকা। গেলে যান, না গেলে বাস থেইকা নাইমা যান’। এসময় যাত্রীরা কন্ট্রাকটারকে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট দেখাতে বললেও চার্ট দেখাতে পারেনি ওই শ্রমিক।

পরে ওই শ্রমিক ঢাকাটাইমসকে জানান, তাদেরকে লোকাল ভাড়া সর্বনিম্ন সাত টাকা করে আদায় করতে বলেছে মালিকপক্ষ। কিন্তু খুচরা না থাকলে তারা নেন আট থেকে ১০ টাকা। তিনি বলেন, ‘আমাগো এক্সট্রা (বাড়তি) কিছু থাকে।’

তুরাগ পরিবহণ, আজমেরী পরিবহন, প্রভাতি বনস্রীসহ অন্যান্য পরিবহণের বাসগুলোতেও একই চিত্র দেখা গেছে।

‘মিরপুর মেট্রো সার্ভিস’ মিরপুর-১ থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর যায় বাসটি। এ বাসে আসন আছে ৩২ টি। কিন্তু এ বাসেও সর্বনিম্ন ভাড়া সাত টাকার চার্ট লাগানো দেখা গেছে।

মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া তো পাঁচ টাকা, এখানে এই চার্ট কেন- জানতে চাইলে বাসের চালকের সহকারী দাবি করেন, তাদের আসন ৩২টির বেশি। কিন্তু আসনগুলো গুনে দেখা যায় ৩২ টি। পরে চালকের পেছনে একটি অস্থায়ী ফোম দিয়ে সেখানে দুইজন যাত্রী বসায়। সেটাকেও আসন হিসেবে ধরার কথা জানায় সহকারী।

আজিমপুর থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত চলাচলকারী নিসর্গ পরিবহন চলে লোকাল হিসেবেই। সিটিংবিরোধী অভিযানের আগেও এরা সর্বনিন্ম ভাড়া রাখতো পাঁচ টাকা। সেই বাসেই আজ নীলক্ষেত থেকে জিগাতলা যাওয়ার সময় ভাড়া রাখলো সাত টাকা। ভাড়া কেন বাড়লো- চালকের সহকারী কোনো জবাবই দিলেন না। ভাড়ার চার্ট কই জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ড্রাইভারকে জিগান।’

অন্য একজন যাত্রী ভাড়া নিয়ে বাক বিতণ্ডা করলে বাস শ্রমিক উল্টো ক্ষেপে যান। বলেন, ‘যান আপনার ভাড়াই লাগবো না।’

শাহবাগ থেকে মিরপুর প্রতিনিয়তেই যাতায়াতকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দুই দিন আগেও তো ছোট গন্তব্যে গেলে পাঁচ টাকা লাগতো। সিটিং নিষিদ্ধ করে আবার তা চালু করায় এখন তো আরও দুই টাকা বেশি লাগছে। কী লাভ হলো এসব করে?’।

ধানমিন্ডির ল্যাবএইডের সামনে ভিআইপি পরিবহন কাউন্টারে দেখা যায় তারা টিকিট কেটে যাত্রী ওঠাচ্ছে। বাসটি আজিমপুর থেকে চন্দ্রা যায়। ল্যাবএইড থেকে ফার্মগেট গেলেও ২০ টাকার টিকিট কেনে উঠতে হবে। কাউন্টার থেকে জানানো হলো, এটাই তাদের সর্বনিম্ন ভাড়া। টিকিট মাস্টার বলেন, ‘আমাগোআগে ৫০ টাকা ও ৭০ টাকার টিকিট আছিল। এখন আমরা ২০ টাকার টিকিটও রাখছি। ৫০ টাকার টিকিটে এয়ারপোর্ট যাওয়া যায়।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সিটিং ‘নিষিদ্ধ কাণ্ডে’ বাড়ল লোকালের ভাড়াও

আপডেট টাইম : ১০:২৬:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৭

রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধ করে আবার চালুর ঘটনায় ভাড়ার নৈরাজ্য আরও বেড়েছে। যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, যাত্রাপথে তাদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাজে আচরণ করছে পরিবহন শ্রমিকরা। আর অভিযানের আগে মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকা থাকলেও এখন নেয়া হচ্ছে সাত টাকা।

বিআরটিএ বাসের যে ভাড়া নির্ধারণ করে তাতে বড় বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা আছে সাত টাকা। আর মিনিবাসের ক্ষেত্রে পাঁচ টাকা। কোনো গাড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী নিক আর না নিক এর চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায়ের কোনো সুযোগ নেই।

তবে আইন আছে আইনের জায়গায়, বাস্তবে আছে নৈরাজ্য। সিটিং, ডাইরেক্ট বার এ রকম বহুবিধ নামে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। গত রবিবার থেকে সিটিংবিরোধী অভিযান চারদিন চালিয়ে ক্ষান্ত দিয়েছে বিআরটিএ। ১৫ দিনের জন্য অবৈধ সিটিং সার্ভিস বৈধ করে দিয়েছে তারা।

আর এই অভিযানের ফাঁকে প্রচার হয়েছে বড় বাসের ন্যূনমত ভাড়া সাত টাকা। আর এই সুযোগ এখন নিচ্ছে ছোটবাসের শ্রমিকরা। সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকার জায়গায় সিটিং হিসেবে চলা বাসগুলো ১০, ১৫ বা ২০-আদায় করছে যে যার মত করে। আর লোকাল হিসেবে চলা বাসগুলোই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? তারাও আদায় করছে তাদের খেয়াল খুশি মত। কোথাও সাত, কোথাও আট, কোথাও বা তার চেয়ে বেশি।

আইন অনুযায়ী বাসের ভেতরে বিআরটিএর ভাড়ার চার্ট থাকার কথা। কিন্তু চার দিন আগেও যে চার্ট টানানো হয়েছে, সেগুলো এরই মধ্যে ছিড়ে ফেলা হয়েছে। আর মিনিবাসে বড়বাসের চার্ট সাঁটিয়ে সেটি দেখেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

টঙ্গী থেকে রামপুরা হয়ে যাত্রাবাড়ী যায় সুপ্রভাত পরিবহণ। এই কোম্পানির কিছু বাস সিটিং এবং কিছু বাস লোকাল হিসেবে এই রুটে চলাচল করে। কিন্তু বুধবার নতুন করে সিটিং সার্ভিসকে বৈধতা দেওয়ার পরপরই বেড়ে গেছে সুপ্রভাত পরিবহনের লোকাল বাসের ভাড়াও। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সুপ্রভাত পরিহণের সিটিং বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ১৫-২০ টাকা ভাড়া আদায় করছে।

টঙ্গী থেকে উত্তরার হাউজবিল্ডিংয়ে যেতে সুপ্রভাত পরিবহণের লোকাল বাসে উঠেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে আব্দুর রহমান। তিনি ভাড়া পাঁচ টাকা ভাড়া দিলে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। সহকারী ওই যাত্রীর কাছ থেকে সাত টাকা বলে দাবি করেন।

আবদুর রহমান প্রতিবাদ করলে বাসের সহকারী বলেন, ‘লোকাল বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া সাত টাকা। গেলে যান, না গেলে বাস থেইকা নাইমা যান’। এসময় যাত্রীরা কন্ট্রাকটারকে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট দেখাতে বললেও চার্ট দেখাতে পারেনি ওই শ্রমিক।

পরে ওই শ্রমিক ঢাকাটাইমসকে জানান, তাদেরকে লোকাল ভাড়া সর্বনিম্ন সাত টাকা করে আদায় করতে বলেছে মালিকপক্ষ। কিন্তু খুচরা না থাকলে তারা নেন আট থেকে ১০ টাকা। তিনি বলেন, ‘আমাগো এক্সট্রা (বাড়তি) কিছু থাকে।’

তুরাগ পরিবহণ, আজমেরী পরিবহন, প্রভাতি বনস্রীসহ অন্যান্য পরিবহণের বাসগুলোতেও একই চিত্র দেখা গেছে।

‘মিরপুর মেট্রো সার্ভিস’ মিরপুর-১ থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর যায় বাসটি। এ বাসে আসন আছে ৩২ টি। কিন্তু এ বাসেও সর্বনিম্ন ভাড়া সাত টাকার চার্ট লাগানো দেখা গেছে।

মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া তো পাঁচ টাকা, এখানে এই চার্ট কেন- জানতে চাইলে বাসের চালকের সহকারী দাবি করেন, তাদের আসন ৩২টির বেশি। কিন্তু আসনগুলো গুনে দেখা যায় ৩২ টি। পরে চালকের পেছনে একটি অস্থায়ী ফোম দিয়ে সেখানে দুইজন যাত্রী বসায়। সেটাকেও আসন হিসেবে ধরার কথা জানায় সহকারী।

আজিমপুর থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত চলাচলকারী নিসর্গ পরিবহন চলে লোকাল হিসেবেই। সিটিংবিরোধী অভিযানের আগেও এরা সর্বনিন্ম ভাড়া রাখতো পাঁচ টাকা। সেই বাসেই আজ নীলক্ষেত থেকে জিগাতলা যাওয়ার সময় ভাড়া রাখলো সাত টাকা। ভাড়া কেন বাড়লো- চালকের সহকারী কোনো জবাবই দিলেন না। ভাড়ার চার্ট কই জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ড্রাইভারকে জিগান।’

অন্য একজন যাত্রী ভাড়া নিয়ে বাক বিতণ্ডা করলে বাস শ্রমিক উল্টো ক্ষেপে যান। বলেন, ‘যান আপনার ভাড়াই লাগবো না।’

শাহবাগ থেকে মিরপুর প্রতিনিয়তেই যাতায়াতকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দুই দিন আগেও তো ছোট গন্তব্যে গেলে পাঁচ টাকা লাগতো। সিটিং নিষিদ্ধ করে আবার তা চালু করায় এখন তো আরও দুই টাকা বেশি লাগছে। কী লাভ হলো এসব করে?’।

ধানমিন্ডির ল্যাবএইডের সামনে ভিআইপি পরিবহন কাউন্টারে দেখা যায় তারা টিকিট কেটে যাত্রী ওঠাচ্ছে। বাসটি আজিমপুর থেকে চন্দ্রা যায়। ল্যাবএইড থেকে ফার্মগেট গেলেও ২০ টাকার টিকিট কেনে উঠতে হবে। কাউন্টার থেকে জানানো হলো, এটাই তাদের সর্বনিম্ন ভাড়া। টিকিট মাস্টার বলেন, ‘আমাগোআগে ৫০ টাকা ও ৭০ টাকার টিকিট আছিল। এখন আমরা ২০ টাকার টিকিটও রাখছি। ৫০ টাকার টিকিটে এয়ারপোর্ট যাওয়া যায়।’