ঢাকা ০৯:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাউয়ার’ পর এখন আওয়ামী লীগে ‘ফার্মের মুরগি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৫৯:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৭
  • ২৯৪ বার

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কম কথা বলতেন। দলের নেতা-কর্মীরাও নাকি সহজে তাঁর সাক্ষাৎ পেতেন না। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেই তুলনায় খুবই তৎপর। দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই ওবায়দুল কাদেরকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ তিনি কীভাবে মোকাবিলা করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এ কথা ঠিক যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এখন চাইলেই সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। অনেকে মনে করেন, আগের সাধারণ সম্পাদকের চেয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর জানাশোনাও ভালো। সেই জানাশোনা থেকে কি না জানি না, তিনি দলের মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নেতারা অন্য দল নিয়ে যত কথা বলেন, নিজ দলের জন্য তার সিকিভাগও করেন না। সেদিক থেকে ওবায়দুল কাদের কিছুটা ব্যতিক্রম।

প্রথমে তিনি বললেন, আওয়ামী লীগে ‘কাউয়া’ ঢুকে পড়েছে। আওয়ামী লীগের মতো এ রকম সাচ্চা গণতন্ত্রী ও দেশপ্রেমী দলে কাউয়া ঢুকে পড়াটা মোটেই স্বস্তিকর নয়। দলে কাউয়া বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিলেও আমাদের বুঝে নিতে কষ্ট হয় না।

কোনো বাড়িতে বা দোকানে উন্মুক্ত স্থানে উপাদেয় খাবার থাকলে কাউয়া ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে ঢুকে কারা কাউয়ার মতো ছোঁ মেরে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছে, সেটি জানালে দল তো বটেই, দেশবাসীও উপকৃত হতো। এই কাউয়াদের কারণে যে দলের ত্যাগী ও সাচ্চা নেতা-কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই সমস্যার সমাধান তো শুধু কথা বলে হবে না। এ জন্য কাউয়াদের খুঁজে বের করে দলকে কলুষমুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগ অনেক কিছু নিয়েই জরিপ করে। তারা কাউয়াদের নিয়েও একটি জরিপ করে দেখতে পারে।

গতকাল সোমবার মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগে ফার্মের মুরগি ঢুকেছে। ফার্মের মুরগির কারণে দেশি মুরগি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। দেশি মুরগি দরকার, ফার্মের মুরগি নয়। ফার্মের মুরগি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। চারদিকে আতি নেতা, পাতি নেতায় ভরে গেছে। তবে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করা চলবে না। তাহলে কাউকে ক্ষমা করা হবে না। দেশ বাঁচাতে হলে, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে।’

ফার্মের মুরগি দলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না হলেও মানবদেহের জন্য অস্বাস্থ্যকর—এই তথ্য তিনি কোথায় পেলেন? বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ফার্মের মুরগি খেয়েই বেঁচে আছে। তাঁর এই বক্তব্য বাংলাদেশের পোলট্রিশিল্পকে বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে। সত্যিকার ফার্মের মুরগির বিষয়টি স্বাস্থ্য ও খাদ্য বিশেষজ্ঞদের হাতে ছেড়ে দেওয়াই উত্তম।

আশা করি, ফার্মের মুরগি বলতে তিনি দলের ফুলেফেঁপে ওঠা নেতা-কর্মীদের বুঝিয়েছেন। তবে দেশি মুরগি বোঝাতে যদি তিনি সৎ ও ত্যাগী কর্মীদের বুঝিয়ে থাকেন আর ফার্মের মুরগি বলতে সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীদের বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে পরিস্থিতিকে হতাশাজনক মানতেই হবে। কেননা, আট বছর একটানা ক্ষমতায় থাকা দলটিতে ফার্মের মুরগির দৌরাত্ম্যই বেশি। বলতে গেলে তাদের দাপটে দেশি মুরগিদেরই কোণঠাসা অবস্থা।

আমাদের ভয় হয়, ফার্মের মুরগি বের করতে গিয়ে ওবায়েদুল কাদের সাহেবের যেন ‘লোম বাছতে কম্বল উজাড়’ অবস্থা না নয়। এই যে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ হরেক রকম লীগের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, কোন্দল, মারামারি, ঝগড়াঝাঁটি, তার পেছনে ওই স্বার্থের বিরোধ, আদর্শের বিরোধ নয়। এ কারণেই বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাচ্চা কর্মী হয়ে যাচ্ছেন।

ওই সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেছেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না বলে ১৭ এপ্রিল পালন করে না। আর দলটি নাকি এখন নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। যাকে পায়, তার কাছে সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করতে থাকে। তারা চোরাবালিতে আটকে গেছে। খুবই খাঁটি কথা। বিএনপি নালিশ পার্টি হলে আওয়ামী লীগের উচিত সেই নালিশের কারণগুলো দূর করা।

আর মুজিবনগর দিবস পালন করে আওয়ামী লীগ বাহবা নিতে চাইছে! দিবস পালন তো নিছক আনুষ্ঠানিকতা বা স্মৃতিতর্পণ নয়। যে চেতনা নিয়ে একাত্তরের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিল, সেই চেতনা ধারণ করাই হলো দিবস পালনের প্রকৃত তাৎপর্য।

মৌলবাদী হেফাজতের সঙ্গে আপস করে আর যা-ই হোক, মুজিবনগর দিবসকে ধারণ করা যায় না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কাউয়ার’ পর এখন আওয়ামী লীগে ‘ফার্মের মুরগি

আপডেট টাইম : ০৮:৫৯:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কম কথা বলতেন। দলের নেতা-কর্মীরাও নাকি সহজে তাঁর সাক্ষাৎ পেতেন না। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেই তুলনায় খুবই তৎপর। দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই ওবায়দুল কাদেরকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ তিনি কীভাবে মোকাবিলা করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এ কথা ঠিক যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এখন চাইলেই সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। অনেকে মনে করেন, আগের সাধারণ সম্পাদকের চেয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর জানাশোনাও ভালো। সেই জানাশোনা থেকে কি না জানি না, তিনি দলের মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নেতারা অন্য দল নিয়ে যত কথা বলেন, নিজ দলের জন্য তার সিকিভাগও করেন না। সেদিক থেকে ওবায়দুল কাদের কিছুটা ব্যতিক্রম।

প্রথমে তিনি বললেন, আওয়ামী লীগে ‘কাউয়া’ ঢুকে পড়েছে। আওয়ামী লীগের মতো এ রকম সাচ্চা গণতন্ত্রী ও দেশপ্রেমী দলে কাউয়া ঢুকে পড়াটা মোটেই স্বস্তিকর নয়। দলে কাউয়া বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিলেও আমাদের বুঝে নিতে কষ্ট হয় না।

কোনো বাড়িতে বা দোকানে উন্মুক্ত স্থানে উপাদেয় খাবার থাকলে কাউয়া ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে ঢুকে কারা কাউয়ার মতো ছোঁ মেরে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছে, সেটি জানালে দল তো বটেই, দেশবাসীও উপকৃত হতো। এই কাউয়াদের কারণে যে দলের ত্যাগী ও সাচ্চা নেতা-কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই সমস্যার সমাধান তো শুধু কথা বলে হবে না। এ জন্য কাউয়াদের খুঁজে বের করে দলকে কলুষমুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগ অনেক কিছু নিয়েই জরিপ করে। তারা কাউয়াদের নিয়েও একটি জরিপ করে দেখতে পারে।

গতকাল সোমবার মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগে ফার্মের মুরগি ঢুকেছে। ফার্মের মুরগির কারণে দেশি মুরগি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। দেশি মুরগি দরকার, ফার্মের মুরগি নয়। ফার্মের মুরগি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। চারদিকে আতি নেতা, পাতি নেতায় ভরে গেছে। তবে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করা চলবে না। তাহলে কাউকে ক্ষমা করা হবে না। দেশ বাঁচাতে হলে, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে।’

ফার্মের মুরগি দলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না হলেও মানবদেহের জন্য অস্বাস্থ্যকর—এই তথ্য তিনি কোথায় পেলেন? বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ফার্মের মুরগি খেয়েই বেঁচে আছে। তাঁর এই বক্তব্য বাংলাদেশের পোলট্রিশিল্পকে বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে। সত্যিকার ফার্মের মুরগির বিষয়টি স্বাস্থ্য ও খাদ্য বিশেষজ্ঞদের হাতে ছেড়ে দেওয়াই উত্তম।

আশা করি, ফার্মের মুরগি বলতে তিনি দলের ফুলেফেঁপে ওঠা নেতা-কর্মীদের বুঝিয়েছেন। তবে দেশি মুরগি বোঝাতে যদি তিনি সৎ ও ত্যাগী কর্মীদের বুঝিয়ে থাকেন আর ফার্মের মুরগি বলতে সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীদের বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে পরিস্থিতিকে হতাশাজনক মানতেই হবে। কেননা, আট বছর একটানা ক্ষমতায় থাকা দলটিতে ফার্মের মুরগির দৌরাত্ম্যই বেশি। বলতে গেলে তাদের দাপটে দেশি মুরগিদেরই কোণঠাসা অবস্থা।

আমাদের ভয় হয়, ফার্মের মুরগি বের করতে গিয়ে ওবায়েদুল কাদের সাহেবের যেন ‘লোম বাছতে কম্বল উজাড়’ অবস্থা না নয়। এই যে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ হরেক রকম লীগের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, কোন্দল, মারামারি, ঝগড়াঝাঁটি, তার পেছনে ওই স্বার্থের বিরোধ, আদর্শের বিরোধ নয়। এ কারণেই বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাচ্চা কর্মী হয়ে যাচ্ছেন।

ওই সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেছেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না বলে ১৭ এপ্রিল পালন করে না। আর দলটি নাকি এখন নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। যাকে পায়, তার কাছে সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করতে থাকে। তারা চোরাবালিতে আটকে গেছে। খুবই খাঁটি কথা। বিএনপি নালিশ পার্টি হলে আওয়ামী লীগের উচিত সেই নালিশের কারণগুলো দূর করা।

আর মুজিবনগর দিবস পালন করে আওয়ামী লীগ বাহবা নিতে চাইছে! দিবস পালন তো নিছক আনুষ্ঠানিকতা বা স্মৃতিতর্পণ নয়। যে চেতনা নিয়ে একাত্তরের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিল, সেই চেতনা ধারণ করাই হলো দিবস পালনের প্রকৃত তাৎপর্য।

মৌলবাদী হেফাজতের সঙ্গে আপস করে আর যা-ই হোক, মুজিবনগর দিবসকে ধারণ করা যায় না।