পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস, নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, সততা ও জাতীয় পর্যায়ে অবদানকে সেনা সদস্যদের যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সব মাপকাঠির ভিত্তিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যদের প্রাধান্য দিতে সেনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
রোববার (২৬ জুলাই) সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদের বৈঠকে জেনারেলদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে এই পবিত্র দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন। যোগ্য অফিসারদের পদোন্নতির জন্য নির্বাচিত করবেন।”
পদোন্নতির ক্ষেত্রে উন্নত পেশাগত মান ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের অবশ্যই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলেও মত দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আদর্শগতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামরিক বাহিনীর জন্য মৌলিক এবং মুখ্য বিষয়। লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ন্যস্ত হয় তাদেরই হাতে যারা দেশপ্রেমিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী” বাহিনীতে শৃঙ্খলার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, শৃঙ্খলার বিষয়টি অন্য কোনো গুণাবলির সঙ্গে তুলনা চলে না।
শৃঙ্খলার সঙ্গে কোনো প্রকার আপস থাকতে পারে না বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। নৈতিক মনোবল ও সৎ গুণাবলীসম্পন্ন কর্মকর্তা অবশ্যই পদোন্নতির দাবিদার, এই মত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক বাহিনীর একজন নেতার জন্য সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য আবশ্যকীয় গুণ।
ঢাকা সেনানিবাসের সেনাসদর কনফারেন্স হল হেলমেটে ২০১৫ সালের সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদের ওই বৈঠক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেনা কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য পাঁচ দিনের এই বৈঠক ৩০ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
এ পর্ষদের মাধ্যমে কর্নেল থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে কর্নেল পদবিতে পদোন্নতির জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তাদের মূল্যায়ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশ ও জাতির প্রয়োজনে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
জেনারেলদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণ বিচার-বিশ্লেষণ রয়েছে। আমার প্রত্যাশা, এই নির্বাচনী পর্ষদ উপযুক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করবে।”
শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে, ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে উপযুক্ত নেতৃত্ব নির্বাচনে সর্বতোভাবে সফল হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বৈঠকে ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি সামরিক একাডেমিতে প্রথম ব্যাচের অফিসারদের উদ্দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ থেকে খানিকটা উদ্ধৃত করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “মনে রেখ, শাসন করা তারেই সাজে, সোহাগ করে যে। তোমরা শাসন করবে, তাই সোহাগ করতেও শিখবে। তাদের দুঃখের দিনে পাশে দাঁড়িয়ো, তাদের ভালবেসো। কারণ, তোমাদের হুকুমেই তারা জীবন দেবে। তোমাদের শ্রদ্ধাও অর্জন করতে হবে। আর, সে-শ্রদ্ধা অর্জন করতে হলে শৃঙ্খলা শিখতে হবে, নিজেদের সৎ হতে হবে। নিজেদের দেশকে ভালবাসতে হবে, মানুষকে ভালবাসতে হবে এবং চরিত্র ঠিক রাখতে হবে। অন্যথায় কোনো ভালো কাজ করা যাবে না।”
সেনাবাহিনীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর জাতির পিতা একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সেনাবাহিনী গড়ে তোলার কাজে হাত দেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই জাতির পিতা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিসহ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। বিদেশ থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সাজ-সরঞ্জাম সংগ্রহ করেন।”
আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং, বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার এবং এনসিও’স একাডেমি প্রতিষ্ঠার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সেনাবাহিনীর আবাসন সমস্যা সমাধানে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও বলেন তিনি।
তার সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর সামর্থ্যকে বহুগুণে বৃদ্ধি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোপূর্বে কোনো সরকার সেনাবাহিনীর জন্য এত উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেনি।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ আস্থা ও শৃঙ্খলার প্রতীক, বলেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে সেনা প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও মেজর জেনারেলরা উপস্থিত ছিলেন।