পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ শনিবার তাঁকে প্রত্যাহার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় আফসার উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাউবোর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যাহারের বিষয়ে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মো. আফসার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে কাগজপত্র পাইনি।’
আফসার উদ্দিন ও স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে হাওরের ফসলরক্ষায় ২৮টি বাঁধ নির্মাণের ২৫কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানে বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের কমিটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৪০টি হাওরের বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এতে জেলার দুই লাখ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফসল হারিয়ে আহাজারি করছেন তাঁরা। জেলায় এবার পাঁচ লাখ ৫২হাজার ৯০৯ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। কৃষকদের দাবি, জেলা ৯০শতাংশ বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কৃষি অফিস বলছে, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় তিন লাখ একর।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পাউবো হাওরের এই ফসল রক্ষায় ৬৮কোটি ৮০লাখ টাকা ব্যয়ে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে। এর মধ্যে ৪৮ কোটি টাকায় ৭৬টি বাঁধের কাজ করছেন ঠিকাদারেরা। বাকি ২০ কোটি ৮০লাখ টাকার কাজ হচ্ছে স্থানীয়ভাবে গঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে। কৃষকদের অভিযোগ, বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে না হওয়া এবং কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই হাওরে অসময়ে এই ফসলহানি ঘটেছে।
হাওরে ফসলহানির ঘটনায় গত ১৫দিন থেকে সুনামগঞ্জে কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন আন্দোলন করছেন। ফসলহারা কৃষকদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এবার সুনামগঞ্জে কোনো উৎসব হয়নি। তার বদলে হয়েছে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাদের দাবি, ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিময়-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির পাশাপাশি ফসলহারা কৃষকদের বাঁচাতে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার। এই দাবিতে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জে পাউবো কার্যালয় ঘেরাও এবং কৃষক-জনতার সমাবেশ হয়েছে।