২৫ ও ২৬ জুলাই ২০১৫ ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৮তম সম্মেলন হচ্ছে। আমি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাছি। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই বিশ্বাস করে এই দেশের রাজনীতির এবং রাজনৈতিক নেতাদের গুণগত মান প্রতিষ্ঠিত হয় ছাত্র সংগঠনের মান ও চারিত্রিক গুণাবলীর ওপর। মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক মাননীয় মন্ত্রীর রাজনীতির হাতেখড়ি এই ছাত্রলীগের মাধ্যমে। এছাড়াও অন্য দলের অনেক মন্ত্রী মিনিস্টার ও রাজনৈতিক বিজ্ঞ নেতাদেরও রাজনীতি শুরুও কিন্তু ছাত্রলীগ থেকেই
এছাড়াও বামঘেঁষা ছাত্র সংগঠন, স্বাধীনতা উত্তর জাসদভিত্তিক এবং ৮০র দশকের পরে জাতীয়তাবাদী ছাত্র সংগঠন থেকে অনেক রাজনৈতিক নেতার জন্ম হয়েছে। ছাত্র রাজনীতি নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও আমার ব্যক্তিগত অভিমত ছাত্র রাজনীতির ভালো কোনো বিকল্প এখনও আমরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সৃষ্টি করতে পারিনি এবং চেষ্টাও করিনি। ক্ষমতায় গেলে সবাই বিপক্ষ ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে বড় বড় বুলি আওড়াই, কিন্তু নিজেদের ছাত্র সংগঠনের কার্যকলাপ নিয়ে কোনো রা করি না বরং ছাত্রদের আরও উসকিয়ে দিই।
যানজটে পিষ্ট এবং ঈদ ফেরত মানুষদের নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরার পথে মরার উপরে খারার ঘা সম্মেলনের নামে সারা দেশের ছাত্রদের ঢাকায় এনে সদাশয় সরকার জনগণকে কী মেসেজ দিতে চাচ্ছে তা জনগণ ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারছে না। ভাব সাব দেখে মনে হচ্ছে এখন ছাত্রলীগ কারা করে তা সম্ভবত সরকার বাহাদুর জানে না। তবে বর্তমান ছাত্রলীগ কী এবং তারা কোন রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তার জ্বলন্ত উদাহরণ তারা ইতিমধ্যেই জাতির সামনে তুলে ধরেছে। তারা যে দলের চেইন অব কমান্ড মানে না তা কিন্তু দিবালোকের মতো স্পষ্ট করে দিয়েছে।
বার হাত কাকরের তের হাত বিচি। ১১০টি জেলা ইউনিট নিয়ে গঠিত ছাত্রলীগের এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদে ৬৪ জন এবং সাধারন সম্পাদক পদে ১৪২ জন প্রার্থী হয়েছে। সরকারি দলের অনেক প্রভাবশালী কোনো প্রকার নির্বাচন ছাড়া নেতা নির্ধারণ করে দিতে চাচ্ছেন। আর এতো প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচন করেই বা কী হবে। দেড় ইউনিটের ভোট পেয়ে সভাপতি এবং পৌনে এক ইউনিটের ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক হবে। নির্বাচনের কী মাহাত্ম তা জাতিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমার ছাত্রলীগের সন্তানেরা। তাই তারা গো ধরেছে নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত করতে হবে।
গত বছরের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে সরকার বাহাদুর জাতিকে দেখিয়েছে নির্বাচনে প্রার্থী না থাকলেও এবং নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলেও বৈধ হয় এবং এবার ছাত্রলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে দেখাতে যাচ্ছে ১১০টি জেলা ছাত্রলীগের ভোটে ১.৫% ভোট পেয়েও সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে অবজ্ঞা করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়া যায়। এভাবে যারা সংগঠনের নেতা হয়ে তারা দেশ ও জাতির কী উপকারে আসবে তা নিয়ে জনগণ সঙ্গত কারণেই উৎকণ্ঠিত। ৬৪ জন সভাপতি ও ১৪২ জন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী প্রকাশ্যভাবে বলে দিল তারা কাউকে মানে না। তারা তাদের সঙ্গের সাথীদেরও মানে না, অনৈক্য তাদের নিজেদের মধ্যে, প্রকাশ্যে প্রার্থীর ঘোষণা দিয়ে আবার নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের দাবি দিয়ে তারা প্রমাণ করে দিল তারা কারো নয়। তারা কারো কথা শুনে না। তারা নিজেরাই রাজা তাদের নিজ রাজত্যে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন যদি তাদের দাবি মতো নির্বাচন দেয়া হয় সে নির্বাচন যে জনগণের কাছে হাস্য রসিকতার খোরাক হবে তাতে যেমন সন্দেহ নাই। তেমনি কোনো নেতা-নেত্রী যদি তার ক্ষমতাবলে নেতা নির্ধারণ করে দেন তাহলে আগামীদিনে এই নতুন কমিটির সকল বিরূপ ও অসন্তোষের দায়ভার তার কাঁধে নিতে হবে।
এই ৬৪ ও ১৪২ রা আগামী দিনে সরকারের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। এই ৬৪ ও ১৪২এর প্রভাবে কেউ কাজ করতে পারবে না, তারা নিজেরাও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে না এবং তারা কেউ কাউকে মানবেও না। তাদেরকে বাদ দিয়েও কেন্দ্রীয় কমিটি করা যাবে। সরকারকে এই ৬৪ ও ১৪২ উভয় সংকটে ফেলে দিয়েছে বলেই জনগণের ধারণা। তাই জনগণ শংকিত, ভীত। এবারের ছাত্রলীগের সম্মেলন জনমনে যে ভীতির সঞ্চার করেছে তার আলামত অচিরেই দেখা যাবে বলে জনবিশ্বাস। তবে এই ব্যাপারে সরকার ও সরকার প্রধান সজাগ থাকবেন তা জনগণের প্রত্যাশা।
লেখক: সাবেক সংসদ সদস্য।