এবারো বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন না এমপিওভুক্ত (বেতনের সরকারি অংশ) বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষকরা। এ নিয়ে গত এক বছর ধরে সারাদেশে সাড়ে ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে চরম হতাশা ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বৈশাখী ভাতার দাবিতে কয়েক দফা আন্দোলনও করেছেন তারা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য উৎসব ভাতা হিসেবে বাংলা নববর্ষ ভাতা চালু করে বর্তমান সরকার।
জানা গেছে, বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষক ও কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশের (এমপিও) টাকা ছাড় করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যাংক হতে শিক্ষক ও কর্মচারীরা স্ব-স্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। সেখানে বৈশাখী ভাতা প্রদানের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো বৈশাখী ভাতার দাবি জানিয়েছে। অবিলম্বে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বৈশাখী ভাতা ও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট চালুর দাবি জানান শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর খান। তিনি বলেন, সার্বজনীন উৎসব হিসেবে বাংলা নববর্ষের আনন্দ থেকে
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষক ও বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি
অধ্যক্ষ আসাদুল হক স্যার বলেন, এ ভাতা শিক্ষকদের অবশ্যই দিতে হবে। বৈশাখ শুধু সরকারি শিক্ষক বা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আসে না। সবার জন্য আসে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা দেয়ার মতো সক্ষমতা বর্তমান সরকারের রয়েছে।
জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের মুখ্য সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ স্যার বলেন, শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতা থেকে বঞ্চিত করবেন না। যেদিন থেকে নতুন এ ভাতা চালু হয়েছে বেসরকারি শিক্ষকরা সে দিন থেকেই এটি পাওয়ার অধিকার রাখেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি রঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারের নীতিমালা অনুসারেই এমপিভুক্ত হয়েছে। প্রতিটি সরকারি বেতন স্কেলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যুক্ত হয়েছেন। এখন ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাঁচে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৫ শতাংশকে বঞ্চিত করা সঠিক হবে না।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নন-এমনটাই দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কোনো প্রস্তাবনা বা চাহিদাপত্র পাঠানো হয়নি। এমনিতেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অসন্তোষ রয়েছে। এমপিও নীতিমালা সংশোধন হচ্ছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রতি দু’মাস পরপর এমপিওতে নতুন নতুন শিক্ষক যুক্ত হচ্ছেন। বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য এ ধরনের সুবিধা যুগ যুগ ধরে চলতে পারে না।