ঢাকা ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে বহুমুখী উদ্যোগ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৫:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০১৭
  • ৬৫১ বার

সৌরশক্তি থেকে জ্বালানি উৎপাদন এখন সহজলভ্য হচ্ছে। সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে, নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে জ্বালানি উৎপাদন করা হচ্ছে। এটি যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি সাশ্রয়ী। এ কারণে বিশ্বব্যাপীই সৌর জ্বালানির কদর বাড়ছে। সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তর করে ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন খরচ কমছে, তেমনি পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে। এসব প্রযুক্তি তুলে ধরতে এবং সৌরশক্তিকে জনপ্রিয় করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জাতীয় নবায়নযোগ্য শক্তি ও পরিবেশবান্ধব মেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আয়োজিত চার দিনব্যাপী এই মেলা গত ১৫ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত চলেছে।

উদ্যোক্তারা জানান, এ দেশে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রায় ৪৭টি প্রকল্প থেকে ১৫ হাজার ৫৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এর বিপরীতে উৎপাদিত হচ্ছে ১২ হাজার ৬৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু সৌরশক্তি থেকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার মাত্র ৩ শতাংশ। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের অনেক মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। অথচ বিভিন্ন দেশে এখন কয়লার পরিবর্তে সৌরশক্তি ব্যবহারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাত্রা বাড়ছে। বিশেষ করে জার্মানি ও সুইডেন এ ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে। জার্মানিতে তারা প্রায় সব ট্রেন সৌরবিদ্যুতে চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সুইডেনও। সৌরশক্তি বিকাশের লক্ষ্য নিয়ে এই মেলার আয়োজন করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মেলায় এবার ৪৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান এবার বিভিন্ন  ধরনের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছিল।

মেলার প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. এসএম নাসিফ শামস বলেন, মেলার প্রধান উদ্দেশ্য হলো, জনগণকে নবায়নযোগ্য শক্তি এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। এ উপলক্ষে মেলায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিতর্কের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ‘নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার’ বিষয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল ‘এনার্জি অলিম্পিয়ার্ড’।

তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের  নবায়নযোগ্য শক্তির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক আগে থেকেই নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে ৯ শতাংশ হারে ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু দেশের অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের সুদ কমালেও এই খাতে এখনো আগের হার বহাল আছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে এই খাতের উন্নয়নে সুদের হার কমানোর আহ্বান জানান তিনি। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইনস্টিটিউট গবেষণার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের উপযোগী প্রযুক্তিনির্ভর নতুন নতুন পদ্ধতির ব্যবহার বাড়াচ্ছে, উদ্ভাবন করছে এবং এ খাতে বিনিয়োগ করতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করছে। সংশ্লি­ষ্ট বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণও দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে অনেক বিনিয়োগকারী এই বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তাদের আগ্রহ বাড়াতে এবং বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।

মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠান সোলারল্যান্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল করিম জানান, জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হতে পারে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এটি ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণ কমবে। দেশে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ হচ্ছে না। ফলে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী নতুন নতুন যন্ত্র-যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় ঘটছে না মানুষের।

এসএল রিনিউএবেল এনার্জির পরিচালক মো. নাজমুল হাসান বলেন,  নবায়নযোগ্য শক্তি বা জ্বালানির নতুন নতুন অনেক প্রযুক্তির সঙ্গে গ্রাহকের যোগাযোগ নেই। এসব প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়াই মেলার অন্যতম লক্ষ্য। কীভাবে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো যায় তার ওপর মেলায় গবেষণাধর্মী বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে বহুমুখী উদ্যোগ

আপডেট টাইম : ১০:৩৫:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০১৭

সৌরশক্তি থেকে জ্বালানি উৎপাদন এখন সহজলভ্য হচ্ছে। সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে, নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে জ্বালানি উৎপাদন করা হচ্ছে। এটি যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি সাশ্রয়ী। এ কারণে বিশ্বব্যাপীই সৌর জ্বালানির কদর বাড়ছে। সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তর করে ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন খরচ কমছে, তেমনি পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে। এসব প্রযুক্তি তুলে ধরতে এবং সৌরশক্তিকে জনপ্রিয় করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জাতীয় নবায়নযোগ্য শক্তি ও পরিবেশবান্ধব মেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আয়োজিত চার দিনব্যাপী এই মেলা গত ১৫ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত চলেছে।

উদ্যোক্তারা জানান, এ দেশে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রায় ৪৭টি প্রকল্প থেকে ১৫ হাজার ৫৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এর বিপরীতে উৎপাদিত হচ্ছে ১২ হাজার ৬৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু সৌরশক্তি থেকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার মাত্র ৩ শতাংশ। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের অনেক মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। অথচ বিভিন্ন দেশে এখন কয়লার পরিবর্তে সৌরশক্তি ব্যবহারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাত্রা বাড়ছে। বিশেষ করে জার্মানি ও সুইডেন এ ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে। জার্মানিতে তারা প্রায় সব ট্রেন সৌরবিদ্যুতে চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সুইডেনও। সৌরশক্তি বিকাশের লক্ষ্য নিয়ে এই মেলার আয়োজন করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মেলায় এবার ৪৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান এবার বিভিন্ন  ধরনের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছিল।

মেলার প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. এসএম নাসিফ শামস বলেন, মেলার প্রধান উদ্দেশ্য হলো, জনগণকে নবায়নযোগ্য শক্তি এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। এ উপলক্ষে মেলায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিতর্কের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ‘নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার’ বিষয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল ‘এনার্জি অলিম্পিয়ার্ড’।

তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের  নবায়নযোগ্য শক্তির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক আগে থেকেই নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে ৯ শতাংশ হারে ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু দেশের অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের সুদ কমালেও এই খাতে এখনো আগের হার বহাল আছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে এই খাতের উন্নয়নে সুদের হার কমানোর আহ্বান জানান তিনি। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইনস্টিটিউট গবেষণার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের উপযোগী প্রযুক্তিনির্ভর নতুন নতুন পদ্ধতির ব্যবহার বাড়াচ্ছে, উদ্ভাবন করছে এবং এ খাতে বিনিয়োগ করতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করছে। সংশ্লি­ষ্ট বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণও দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে অনেক বিনিয়োগকারী এই বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তাদের আগ্রহ বাড়াতে এবং বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।

মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠান সোলারল্যান্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল করিম জানান, জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হতে পারে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এটি ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণ কমবে। দেশে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ হচ্ছে না। ফলে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী নতুন নতুন যন্ত্র-যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় ঘটছে না মানুষের।

এসএল রিনিউএবেল এনার্জির পরিচালক মো. নাজমুল হাসান বলেন,  নবায়নযোগ্য শক্তি বা জ্বালানির নতুন নতুন অনেক প্রযুক্তির সঙ্গে গ্রাহকের যোগাযোগ নেই। এসব প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়াই মেলার অন্যতম লক্ষ্য। কীভাবে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো যায় তার ওপর মেলায় গবেষণাধর্মী বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে।