গ্ল্যামারাস হাসি আপনার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। আর এই মুক্তোঝরা হাসির জন্য দরকার সুন্দর দাঁত। তবে অনেক সময় দাঁত নষ্ট হয়ে যেতেই পারে। সুন্দর হাসির জন্য চাই একটু যত্ন আর সঠিকভাবে দাঁতের পরিচর্যা। চাইলে আপনি ফিরিয়ে আনতে পারেন দাঁতের জৌলুস।
মানুষের সৌন্দর্যের জন্য কোনো কোনো সময় দাঁতই যেন হয়ে ওঠে সৌন্দর্যের প্রতীক। কিন্তু এই দাঁতের সঠিক যত্ন না নিলে এটি যেন শারীরিক পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে হাসির সৌন্দর্যটুকুও ম্লান হয়ে যায়।
একটি দিন কোনো কারণে আমাদের দাঁতে ব্যথা থাকলে অথবা দাঁত সঠিকভাবে ব্যবহার না করতে পারলে প্রচণ্ড অস্বস্তি অনুভব করে থাকি। সব বয়সীর জন্যই চাই দাঁতের সঠিক পরিচর্যা। তা না হলে অসময়েই পড়ে যেতে পারে আপনার অতি প্রয়োজনীয় ও সুন্দর দাঁতগুলো।
দাঁতের অযত্নের কারণে কিন্তু মুখেও বিশ্রী গন্ধ হতে পারে, যা খুবই বিরক্তিকর। এ বিষয়ে দন্ত চিকিৎসকরা বলেন, দাঁতের প্রধান শত্রু হচ্ছে দাঁতে জমে থাকা খাদ্যের উচ্ছিষ্ট। আমরা সারা দিনে যা খাই তার একটি অংশ দাঁতে লেগে থাকে। সেটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাশ করে পরিষ্কার না করলে দাঁতে প্লাকের সৃষ্টি হয়। তাই সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। নিয়মিত সঠিক নিয়মে ব্রাশ করলে দাঁত ভালো থাকবে। অটুট থাকবে মুখের সৌন্দর্যও। হাসলে মুক্তোও ঝরবে!
দাঁতের যত্নে কয়েকটি ঘরোয়া টিপস
১. এক চিমটি লবণ ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে মাজলে দাঁত সাদা হয়। এ ছাড়া লেবুর খোসা দিয়ে আপনার দাঁত স্ক্রাবিং করতে পারেন। দাঁত সাদা করতে এটাও বেশ ভালো উপায়।
২. সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি দিয়ে আপনার দাঁত ধুয়ে ফেলুন। তারপর কমলালেবুর খোসা দিয়ে আপনার দাঁত ঘষুন। কমলালেবুর খোসায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সির উপস্থিতি থাকায় দাঁতের অণুজীবের সঙ্গে লড়াই করে। এতে দাঁত আরও সাদা এবং শক্তিশালী হয়।
৩. দাঁত ঝকঝকে করতে মাশরুম খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে পলিস্যাকারাইড থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ও ডেন্টাল প্লাক হতে দেয় না।
৪. গ্রিন টি-তে প্রচুর ফ্লোরাইড থাকে। এ ছাড়া এটি অ্যান্টি অ্যাসিডিক হওয়ার কারণে দাঁতে হলুদ রং পড়তে বাধা দেয়।
৫. এর আগে মানুষের দাঁত পরিষ্কারে ব্যবহৃত হতো কাঠ-কয়লা। কাঠ-কয়লা আপনার দাঁত সাদা করতে সাহায্য করে। তাই মাঝে মাঝে কাঠ-কয়লা মিক্স ব্যবহার করতে পারেন। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এ জিনিস আপনার দাঁতের সুরক্ষা দেবে।
৬. দাঁতের পরিচ্ছন্নতা ও রং সুরক্ষায় ফ্লসও বেশ উপকার দেয়। দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্যের কণা দূর করতে নিয়মিত ফ্লস ব্যবহার করুন। বিশেষত সারা দিন খাবার-দাবার খাওয়ার পর প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফ্লস ব্যবহার করে দাঁত পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখা যায়।
৭. স্ট্রবেরি খেতে যেমন মজাদার, ফলটির দানাও দাঁতের জন্য বেশ উপকারী। স্ট্রবেরি ফলের ছোট ছোট দানা আপনার দাঁতের বাইরের অংশে ঘষুন। সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার এই কাজ করলে দাঁতে জমে থাকা ময়লা সহজেই দূর হয়। একই সঙ্গে দাঁতের রংও হবে উজ্জ্বল।
যেদিকে খেয়াল রাখবেন
* পারলে প্রতিবেলা খাবার খাওয়ার পর ব্রাশ করুন। না পারলে রাতে খাবার খাওয়ার পরে ও সকালে নাশতার পর ব্রাশ করুন।
* দাঁত ব্রাশ করানোর সঠিক নিয়ম তথা ওপর-নিচ করে অভ্যাস করতে হবে।
* কোনো কিছু খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুলি করার অভ্যাস করতে হবে।
* কোনো দাঁতে পোকা লাগলে পাশেরটায় ছড়ানোর আগেই তা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে তা তুলে ফেলতে হবে।
* শিশুদের চকোলেটজাতীয় খাবার খাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
* অন্তত ছয় মাস পর পর দাঁতের চেকআপ করাতে হবে।
আরও কিছু টিপস
স্কেলিং
আমরা রোজ অনেক কিছুই খেয়ে থাকি। এর বেশিরভাগ পেটের ভেতর চলে গেলেও কিছুটা কিন্তু আটকে থাকে দাঁতে। অনেক সময় দেখা যায়, দাঁত ব্রাশ করার পরও কিছুটা থেকে যায়। সেটি স্কেলিং করা হয়। এটি মেশিনের সাহায্যে দাঁত পরিষ্কার করার একটি পদ্ধতি। নির্দিষ্ট সময় পর পর এটি করলে দাঁতের সুরক্ষা হয়।
ফিলিং
অনেক সময় দেখা যায় দাঁতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ফলে এর মধ্যে খাবার জমে থাকে। তখন দাঁত ফিলিং করাতে হয়।
রুট ক্যানেল
এটি দাঁতে ফিলিং করার পরের ধাপ। দাঁতে রোগ সংক্রমণ যাতে না হয়, সেজন্য এটি করা হয়। মেশিনের সাহায্যে দাঁতের মজ্জা বের করে আনা হয়।
শিশুদের দাঁতের যত্ন
চকোলেট, আইসক্রিম, চিপস এগুলো বাচ্চাদের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় থেকেই যায়। আর তা আটকে থাকে দাঁতে। এগুলো দাঁতের প্রধান শত্রু। বাচ্চাদের দাঁতের জন্য চাই একটু বাড়তি যত্ন।