স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কোনো কারণে বনিবনা না হলে বা মনের অমিল হলে অনেকেই একসঙ্গে থাকতে চান না। কেউ আইনসম্মতভাবে বিয়ের অবসান ঘটাতে চান, মানে তালাক চান, আবার অনেকে তালাক না দিয়েও আলাদা বসবাস করতে চান। কিন্তু আইন কি পৃথক থাকার কোনো অনুমতি দিয়েছে? স্বামী-স্ত্রী নিজেরা কি স্বেচ্ছায় পৃথক থাকতে পারেন?
আইন কী বলে
মুসলিম আইনে স্পষ্ট করে আলাদাভাবে বসবাস করার কোনো বিষয় সরাসরি বলা নেই। তবে হিন্দু আইনে তা স্পষ্ট করা আছে। বাংলাদেশে হিন্দুরা বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন না, তবে আলাদা থাকতে পারেন। এ জন্য পৃথক আইনও রয়েছে। সমঝোতার মাধ্যমে বা আদালতের মাধ্যমে পৃথক থাকতে পারেন হিন্দুরা। মুসলমানদের ক্ষেত্রে আছে তালাকের বিধান। তবে দুজন সম্মতিতে আলাদা থাকতে চাইলে কী হবে তা স্পষ্ট করা না থাকলেও এতে কোনো বাধা তৈরিও করেনি। এ জন্য আদালতে না গিয়ে নিজেরা সমঝোতার মাধ্যমে আলাদা থাকতে পারেন এবং প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে চুক্তিনামাও তৈরি করে নিতে পারেন। এ চুক্তিনামা দুজন সাক্ষীর সামনে নোটারি করে রাখা যায়। এ চুক্তিতে নির্দিষ্ট করে নিজেদের মধ্যে আলাদা থাকার জন্য বিভিন্ন শর্ত উল্লেখ করে দেওয়া যেতে পারে।
পারস্পরিক অধিকার কি বজায় থাকে
স্বামী-স্ত্রী আলাদা বসবাস করতে গেলে কিছু বিষয়ে নজর রাখতে হবে। স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক কিছু আইনসম্মত অধিকার কিন্তু বলবৎ থাকে। বিশেষ করে স্ত্রী এবং সন্তানদের ভরণপোষণের বিষয়। স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে বিয়ে বর্তমান থাকা অবস্থায় ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার লাভ করেন। মনে রাখতে হবে নিজেরা আলাদা থাকলেও বিয়ে বর্তমান অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইলে প্রথম স্ত্রী আলাদা থাকলেও সালিসি পরিষদের মাধ্যমে তাঁর লিখিত অনুমতি প্রয়োজন। স্ত্রীকে দেনমোহর থেকেও বঞ্চিত করা যাবে না। তবে স্ত্রী যদি না নিতে চান কিংবা সমঝোতার মাধ্যমে মাফ করে দেন তাহলে ভিন্ন কথা।
আলাদা বসবাস করলেও সন্তান থাকলে তাদের অধিকারের দিকেও নজর দিতে হবে। ছেলেসন্তান সাবালক না হওয়া পর্যন্ত এবং মেয়েসন্তান বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণ লাভ করার অধিকারী, সে যার কাছেই থাকুক না কেন। ছেলে সাত বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত যদি মায়ের কাছে কিংবা মায়ের মা, অর্থাৎ নানির কাছে থাকে, তবু বাবা তার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। এ ছাড়া অক্ষম, পাগল এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী সাবালক সন্তানও বাবার কাছে ভরণপোষণ পাবে।
তবে আলাদা থাকার পর সন্তানেরা কার কাছে থাকবে এ নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নেওয়া যাবে। পারিবারিক আদালত তখন আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন সন্তানেরা কার কাছে থাকবে। তবে আইনের পাশাপাশি আদালতের ক্ষমতা রয়েছে সন্তানের কল্যাণের দিকটি বিবেচনা করার। আদালত সন্তানের সুস্থ, স্বাভাবিক বিকাশের দিকটি বিবেচনা করে বাবা বা মা যে কারও কাছে রাখার জন্য আদেশ দিতে পারেন। অনেক সময় সন্তানের যদি ভালো-মন্দ বোঝার মতো সক্ষমতা থাকে তাহলে সন্তানের মতামতকেও আদালত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। পারিবারিক আদালতে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সন্তানকে কাছে রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে আলাদা থাকা মানেই কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক নয়। তাই নিজেরা যদি পুনরায় একত্রে থাকতে চান তাহলে কোনো বাধা নেই। আর তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে চাইলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী তা করতে হবে।