ঢাকা ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোলার পাম্প দিয়ে সেচ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০৬:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মার্চ ২০১৭
  • ৬৩২ বার

বোরো ক্ষেতে সেচ দিতে বিদ্যুৎ বা ডিজেলের উপর নির্ভর না করে সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে সেচকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সেলার পাম্প। আর সোলার পাম্পের মাধ্যমে চলতি মওসুমে অতিরিক্ত ব্যয় ছাড়াই প্রায় ৫০ একর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের কৃষক সোলেমান আলী এতদিন বৈদ্যুতিক পাম্প ব্যবহার করে নিজের বোরো ক্ষেত ও নিজস্ব মাছের হ্যাচারিতে পানি সরবরাহ করে আসছিলেন। এতে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার টাকা বৈদ্যুতিক বিল পরিশোধ করতে হত। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি সোলার প্যানেল দিয়ে পানি সেচ দেওয়ার পাম্প উদ্ভাবন করেন।
২০১৬ সালে তার সে প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখে। প্রথম দিকে তিনি ওই পাম্প দিয়ে ৫ একর বোরোর জমি ও মাছের হ্যাচারিতে পানি সরবরাহ দিলেও এ বছর প্রথম বারের মতো বোরো ক্ষেতে সেচ দিয়ে আসছেন। ৪টি সৌর পাম্প দিয়ে ৫০ একর জমিতে সেচ দিচ্ছেন তিনি।

মোলানী গ্রামের সোলেমান আলী আগে সোলার আইপিএস তৈরি করতেন। দেশে সৌর সেচযন্ত্র চালু হওয়ার পর তিনি এই প্রযুক্তি আরো সহজলভ্য করতে কাজ শুরু করেন। বাজারে থাকা সৌর সেচযন্ত্র সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। চলমান সোলার চার্জার গাড়ির মানুষ পরিবহনের বিষয়টি চিন্তায় নিয়ে একের পর এক সৌর প্যানেল, কন্ট্রোলারসহ নানা যন্ত্রপাতি লাগিয়ে দ্রুতগতিতে পানি তুলতে পাম্পে যোগ করেন গিয়ারবক্স। আর এভাবে তিনি নিজের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি করেন সৌর পাম্প।
এজন্য ১০টি সৌরকোষ একত্রে সংযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে সৌর প্যানেল। প্রতিটি সৌরকোষের ধারণ ক্ষমতা ২৫০ ওয়াট। ওই সৌর প্যানেলের উপর সূর্যের আলো পড়তেই ভোল্টেজ তৈরি হয় এবং সংযুক্ত তারের মাধ্যমে এটি থেকে পাওয়া যায় বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে চলে ৩ হর্স পাওয়ারের একটি পাম্প। এই সেচযন্ত্র দিয়ে সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত জমিতে সেচ দেওয়া যায়। সূর্যের তাপ যতই বাড়ে পানির তীব্রতা ততই বাড়ে। ২ হাজার ৫০০ ওয়াটের সৌর প্যানেল দিয়ে মিনিটে ৭শ লিটার পানি ওঠে।
সোলেমানের হিসেবে এক ওয়াট সৌরকোষের দাম পড়ে ৫০ টাকা। সে হিসেবে ২ হাজার ৫০০ ওয়াটের দাম পড়ে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। পানির পাম্প ও সোলারের অবকাঠামো তৈরিতে আরো ব্যয় ২৫ হাজার টাকা। একটি সৌর সেচযন্ত্র তৈরির খরচ পড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর তার উদ্ভাবিত প্রতিটি পাম্প বিক্রি করছেন ২ লাখ টাকা।

স্থানীয় চাষিরা জানান, বিদ্যুৎ চালিত নলকূপ দিয়ে জমিতে সেচ দিতে কার্ডে অগ্রিম টাকা রিচার্জ করতে হয়। তাছাড়াও লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সেচ দিতে না পারলে বোরো ধানের ক্ষেতের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। ডিজেল চালিত শ্যালো দিয়ে পানি সেচ দেওয়াও ঝামেলার। ডিজেল ছাড়া মেশিন চলেনা এবং পানিও ওঠেনা। একমাত্র সোলার পাম্পই ব্যতিক্রম। সোলার পাম্প থাকলে পানি তুলতে এক টাকাও লাগেনা।
সোলেমান আলী জানান, একটি বরেন্দ্র গভীর নলকূপ দিয়ে ৪০ একরের বেশি জমিতে সেচ দেওয়া যায় না। অথচ তিনি ৪টি সৌর পাম্প দিয়ে ৫০ একর জমিতে সেচ দিয়েছেন। কাজেই সরকারি সহযোগিতা পেলে তিনি সারাদেশের বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ সূর্যের আলো দিয়ে চালিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চান।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খন্দকার মো. মাওদুদুল ইসলাম জানান, মোলানী গ্রামের সোলেমান আলী নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে সোলার পাম্প তৈরি করেছেন। ২ হাজার ৫০০ ওয়াটের ৪টি প্যানেল বসিয়ে তিনি ৫০ একর জমিতে সেচ দিচ্ছেন। তার উদ্ভাবিত সোলার পাম্প ভর্তুকি মূল্যে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে সেচ কাজে উৎপাদন ব্যয় অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হত। এতে কৃষকেরা উপকৃত হত এবং দেশে বিদ্যুৎ ও ডিজেলের সাশ্রয় ঘটানো সম্ভব হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সোলার পাম্প দিয়ে সেচ

আপডেট টাইম : ০১:০৬:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মার্চ ২০১৭

বোরো ক্ষেতে সেচ দিতে বিদ্যুৎ বা ডিজেলের উপর নির্ভর না করে সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে সেচকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সেলার পাম্প। আর সোলার পাম্পের মাধ্যমে চলতি মওসুমে অতিরিক্ত ব্যয় ছাড়াই প্রায় ৫০ একর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের কৃষক সোলেমান আলী এতদিন বৈদ্যুতিক পাম্প ব্যবহার করে নিজের বোরো ক্ষেত ও নিজস্ব মাছের হ্যাচারিতে পানি সরবরাহ করে আসছিলেন। এতে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার টাকা বৈদ্যুতিক বিল পরিশোধ করতে হত। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি সোলার প্যানেল দিয়ে পানি সেচ দেওয়ার পাম্প উদ্ভাবন করেন।
২০১৬ সালে তার সে প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখে। প্রথম দিকে তিনি ওই পাম্প দিয়ে ৫ একর বোরোর জমি ও মাছের হ্যাচারিতে পানি সরবরাহ দিলেও এ বছর প্রথম বারের মতো বোরো ক্ষেতে সেচ দিয়ে আসছেন। ৪টি সৌর পাম্প দিয়ে ৫০ একর জমিতে সেচ দিচ্ছেন তিনি।

মোলানী গ্রামের সোলেমান আলী আগে সোলার আইপিএস তৈরি করতেন। দেশে সৌর সেচযন্ত্র চালু হওয়ার পর তিনি এই প্রযুক্তি আরো সহজলভ্য করতে কাজ শুরু করেন। বাজারে থাকা সৌর সেচযন্ত্র সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। চলমান সোলার চার্জার গাড়ির মানুষ পরিবহনের বিষয়টি চিন্তায় নিয়ে একের পর এক সৌর প্যানেল, কন্ট্রোলারসহ নানা যন্ত্রপাতি লাগিয়ে দ্রুতগতিতে পানি তুলতে পাম্পে যোগ করেন গিয়ারবক্স। আর এভাবে তিনি নিজের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি করেন সৌর পাম্প।
এজন্য ১০টি সৌরকোষ একত্রে সংযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে সৌর প্যানেল। প্রতিটি সৌরকোষের ধারণ ক্ষমতা ২৫০ ওয়াট। ওই সৌর প্যানেলের উপর সূর্যের আলো পড়তেই ভোল্টেজ তৈরি হয় এবং সংযুক্ত তারের মাধ্যমে এটি থেকে পাওয়া যায় বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে চলে ৩ হর্স পাওয়ারের একটি পাম্প। এই সেচযন্ত্র দিয়ে সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত জমিতে সেচ দেওয়া যায়। সূর্যের তাপ যতই বাড়ে পানির তীব্রতা ততই বাড়ে। ২ হাজার ৫০০ ওয়াটের সৌর প্যানেল দিয়ে মিনিটে ৭শ লিটার পানি ওঠে।
সোলেমানের হিসেবে এক ওয়াট সৌরকোষের দাম পড়ে ৫০ টাকা। সে হিসেবে ২ হাজার ৫০০ ওয়াটের দাম পড়ে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। পানির পাম্প ও সোলারের অবকাঠামো তৈরিতে আরো ব্যয় ২৫ হাজার টাকা। একটি সৌর সেচযন্ত্র তৈরির খরচ পড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর তার উদ্ভাবিত প্রতিটি পাম্প বিক্রি করছেন ২ লাখ টাকা।

স্থানীয় চাষিরা জানান, বিদ্যুৎ চালিত নলকূপ দিয়ে জমিতে সেচ দিতে কার্ডে অগ্রিম টাকা রিচার্জ করতে হয়। তাছাড়াও লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সেচ দিতে না পারলে বোরো ধানের ক্ষেতের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। ডিজেল চালিত শ্যালো দিয়ে পানি সেচ দেওয়াও ঝামেলার। ডিজেল ছাড়া মেশিন চলেনা এবং পানিও ওঠেনা। একমাত্র সোলার পাম্পই ব্যতিক্রম। সোলার পাম্প থাকলে পানি তুলতে এক টাকাও লাগেনা।
সোলেমান আলী জানান, একটি বরেন্দ্র গভীর নলকূপ দিয়ে ৪০ একরের বেশি জমিতে সেচ দেওয়া যায় না। অথচ তিনি ৪টি সৌর পাম্প দিয়ে ৫০ একর জমিতে সেচ দিয়েছেন। কাজেই সরকারি সহযোগিতা পেলে তিনি সারাদেশের বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ সূর্যের আলো দিয়ে চালিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চান।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খন্দকার মো. মাওদুদুল ইসলাম জানান, মোলানী গ্রামের সোলেমান আলী নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে সোলার পাম্প তৈরি করেছেন। ২ হাজার ৫০০ ওয়াটের ৪টি প্যানেল বসিয়ে তিনি ৫০ একর জমিতে সেচ দিচ্ছেন। তার উদ্ভাবিত সোলার পাম্প ভর্তুকি মূল্যে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে সেচ কাজে উৎপাদন ব্যয় অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হত। এতে কৃষকেরা উপকৃত হত এবং দেশে বিদ্যুৎ ও ডিজেলের সাশ্রয় ঘটানো সম্ভব হবে।