হাওর অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। নির্র্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি বাঁধের নির্মাণ কাজ। এমনিতইে বাঁধ নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা। এর মধ্যে শুক্রবার রাতে এ উপজেলা ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বছরের প্রথম কালবৈশাখী হওয়ায় ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই কৃষকদের। একদিকে বাঁধের কাজ অসমাপ্ত থাকা, অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় কৃষকদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
গত শুক্রবার সরজমিন নলুয়ার হাওর ঘুরে দেখা যায়, শালিকার বাঁধে এখনও কোনো মাটি পড়েনি। এছাড়া হালেয়ার পতিত, রাজনগরের পতিত, ডুমাখালি বাঁধের পূর্বে মংলা বাড়ির সামনের ভাঙন ও ভুরাখালি রাখাল গাছের নিকটবর্তী স্থানে মাঠির কোনো কাজ হয়নি। এর মধ্যে ২০১০ সালে শালিকার বাঁধ ভেঙে পুরো নলুয়ার হাওরের পাকা ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। নলুয়ার হাওরের ভুরাখালির রাখাল গাছ, ডুমাখালী, আমআমি বাঁধে মোটামুটি কাজ ভালো হয়েছে। তবে এখনো বাঁধগুলোর পুরো কাজ শেষ হয়নি। কৃষকদের অভিযোগ বাধঁ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির মহোৎসব চলছে।
শালিকার বাঁধ পরির্দশনকালে কথা হয় হাওরপাড়ের কৃষক নেতা সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, শালিকার বাঁধ নলুয়ার হাওরের ফসলরক্ষার জন্য সব চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এ বাঁধ ভেঙে বিগত বছরে পুরো হাওরের ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়। আমরা খুবই শঙ্কিত এই বাঁধসহ হাওরের অধিকাংশ বাঁধে এখনো মাটি পড়েনি। এসব স্থানে কোনো কাজ না করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু ব্যক্তিরা বরাদ্দের অর্থ লুটপাটের চেষ্টা করছেন। তিনি হাওরের ফসল বাঁচাতে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য দাবি জানান সংশ্লিষ্ট কৃর্তৃপক্ষের নিকট।
প্রতিটি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) কাজের বিবরণ উল্লেখ করে সাইনবোর্ড সাঁটানোর কথা থাকলেও সরজমিন কোনো প্রকল্পেই সাইনবোর্ড চোখে পড়েনি।
স্থানীয় কৃষি অফিস ও কৃষকরা জানান, এ বছর এ উপজেলার সর্ব বৃহৎ নলুয়ার, মইয়া, পিংলাসহ ছোট-বড় ১৫টি হাওরে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিনে বোরো ফসলের চাষাবাদ করা হয়েছে। বছরের ১লা জানুয়ারি হতে ২৮শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওরের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পযর্ন্ত হাওরের কাজ শেষ হয়নি। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন নলুয়া হাওরের ফিল্টার-২ এর কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী রানীগঞ্জ- বাগময়না-হলিকোনা সড়কের নলুয়া হাওরের ৪টি পিআইসি’র কাজ এখনও হয়নি। এর মধ্যে একটি সিআইসিতে সামান্য মাঠির কাজ হলেও অপর তিনটি পিআইসিতে কোনো মাটি পড়েনি। পিআইসি’র সদস্যরা দায়সারভাবে কাজ করলেও ঠিকাদারদের চেহারা এ পর্যন্ত দেখাই যাচ্ছে না। কৃষকরা দাবি করেছেন ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
নলুয়ার হাওর পাড়ের ভুরাখালী গ্রামের কৃষক আবদুুস সবুর বলেন, আর কয়েকদিন পর ফসল ঘরে তোলার ধুম পড়বে। কিন্তু হাওরের বাঁধগুলোর কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় আমরা দুশ্চিতায় আছি। গত বছর শিলা বৃষ্টির কারণে ১২ কেদার জমির সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে। এ বছর যদি ফসল গোলায় না তুলতে পারি তাহলে না খেয়েই হয়তো মরতে হবে। একই গ্রামের আরেক কৃষক এনামুল হক বলেন, তিনিও গত বছর ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। জমিনের সব পাকা ফসল শিলা বৃষ্টিতে বিনষ্ট হয়ে যায়। এ বছর তিনি ২০ কেদারা জমিনে আবাদ করেছেন। কিন্তু বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিনি। তাদের দাবি দ্রুত বাঁধগুলো নির্মাণ কাজ শেষ করে হাওরের ফসল রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে জগন্নাথপুরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ্ সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বেড়িবাঁধের কাজ সঠিকভাবে না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, হাওরের বেড়িবাঁধের কাজ মন্থরগতিতে চলছে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জগন্নাথপুর উপজেলার ৩৩টি পিআইসি’র (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) অনুকূলে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে দুইজন ঠিকাদারের মাধ্যমে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জগন্নাথপুর অঞ্চলের মাঠ কর্মকর্তা (এসও) মোসাদ্দেক আহমদ জানান, অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এবার বরাদ্দ অপ্রতুল থাকায় কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। তিনি হাওরের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করে বলেন, অপর ৩০ ভালো কাজ ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করা হবে।
সংবাদ শিরোনাম
হাওরগুলো অরক্ষিত
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ১২:১৯:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মার্চ ২০১৭
- ৩০৪ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ