মুক্তির অপেক্ষায় থাকা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’ বিতর্ক নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের ‘দক্ষিণা হওয়া’ বাসায় রোববার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
‘ডুব’ নিয়ে শাওন বলেন, ‘ছবিটি মুক্তিতে তার আপত্তি নেই তবে অবশ্যই শর্ত সাপেক্ষে। মুক্তির পরে যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা অর্থাৎ মামলা করবেন’।
লিখিত বক্তব্যে শাওন আরো বলেন, চলচ্চিত্রের দর্শকদের মধ্যে অনেকে আছেন হুমায়ূন ভক্ত। নতুন প্রজন্মের অনেক দর্শক হুমায়ূন আহমেদকে পড়া শুরু করেছেন মাত্র। আশঙ্কা হয়েছে তারা ছবিটি দেখে ভুল তথ্য পাবেন ও বিভ্রান্তিকর তথ্যে ভরা কাহিনিচিত্রটি পরবর্তীতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে থাকবে হুমায়ূন আহমেদের জীবনী হিসেবে।
‘ডুব’ সিনেমায় হুমায়ূনকে কিভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এমন প্রশ্নে পত্রিকার কাটিং দেখিয়ে শাওন বলেন, এ খবর গুলোতেই ছবি সংশ্লিষ্টরাই স্বীকার করেছেন এটি হুমায়ূন আহমেদের জীবনের গল্প। ছবিতে যদি কোন আপত্তিকর ও বিভ্রান্তিকর কিছু না থাকে তাহলে তার মুক্তির আপত্তি নেই। কিন্তু ফারুকী তো বলেছেন, দেশে না হলে আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি দিবেন যেহেতু যৌথ প্রযোজনার ছবি।
উত্তরে শাওন বলেন, যে দেশের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সে দেশের সেন্সর বোর্ডের অনুমতির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক নিয়ম বা আইন কী আমার জানা নেই। তবে প্রয়োজন
হলে আইনের আশ্রয় নিব।
মুক্তির আগে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘ডুব’ ছবিটি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন বলিউডের ইরফান খান, কলকাতার পার্নো মিত্র ও বাংলাদেশের রোকেয়া প্রাচী এবং নুসরাত ইমরোজ তিশা
জোর গুঞ্জন চলছে, ছবিটি হুমায়ূন আহমেদের জীবনের একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে নির্মিত হয়েছে! অন্যদিকে ফারুকী বলছেন, তার ছবির সব চরিত্র কাল্পনিক। এমন বাহাসের মধ্যে সম্প্রতি চলচ্চিত্র প্রিভিউ কমিটি ‘ডুব’ এর মুক্তিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ।
শাওন তারা লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত বছরের শেষ দিকে ভারতের একটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘আনন্দ বাজার’-এর কাছ থেকে প্রথম ‘ডুব’ ছবিটির পটভূমি সম্পর্কে জানতে পারি। আমাকে জানানো হয়, ছবিটি হুমায়ূন আহমেদ এর জীবনকে ঘিরে। এবং হুমায়ূন পরিবারের কিছু সদস্যের চরিত্রও ছবিটিতে উঠে এসেছে যার মধ্যে আমিও আছি। খবরটি আমাকে বিস্মিত করে। তার পরপরই বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জানতে পারি যে আলোচ্য ছবিটি কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জীবনের কিছু স্পর্শকাতর ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে।
শাওন আরো জানান, হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের তথা বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি লেখক। তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার মানে কি এই যে, তাকে নিয়ে একটি মনগড়া কাহিনিচিত্র বানিয়ে ফেলা যাবে! ‘হুমায়ূন আহমেদ’ নাম বদলে চরিত্রের অন্য যে নামই দেয়া হোক, সেই চরিত্র যদি হয় বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় লেখকের যিনি চলচ্চিত্র নির্মাণও করেন, সংসার জীবনে যার দু’টি অধ্যায় আছে এবং ক্যানসার আক্রান্ত হয়েই যার জীবনাবসান হয়েছে, সেটি কার জীবন এটি বুঝতে কোনও দর্শকের গবেষণা করার প্রয়োজন পড়ে না।
শাওন সেন্সর বোর্ডের চিঠি দেখিয়ে জানান, আমি ছবিটি বন্ধের জন্য কোন আবেদন করিনি। শুধু বলেছি ছবিটিতে যদি হুমায়ূন জীবনী নিয়ে আপত্তিকর কিছু থাকে তাহলে তা যেন পরিবর্তন করে মুক্তি দেয়। সেই আশঙ্কা থেকেই ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে আমি একটি চিঠি সেন্সর বোর্ডে দিই। চিঠিতে অনুরোধ করা হয়, আমি যেই আশঙ্কাগুলো করছি, ছবিটি দেখার সময় সেই বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে যেন তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এ ছবিতে যদি কোনও আপত্তিকর বিষয় থাকে, সেগুলো যেন যথাযথভাবে পরিবর্তন এবং পরিশোধন করে মুক্তি দেওয়া হয়।
শাওন শেষ করেন এই বলেন, আমি নিজেও একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। কোনও নির্মাতা বা তার নির্মাণের সাথে আমার কোনও বিরোধ নেই। আমি কোনও চলচ্চিত্র নিষিদ্ধের কথাও বলিনি। কিন্তু হুমায়ূনের স্ত্রী হিসাবে এবং তার একজন ভক্ত, পাঠক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা কোনও চলচ্চিত্রের পক্ষে আমার অবস্থান থাকবে না- এটাই স্বাভাবিক।