ঢাকা ১২:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফুল যাচ্ছে পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইন দিবসের বাজারে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:০৬:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
  • ১৫১৫ বার

পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইন দিবসে ফুলের বাড়তি চাহিদা পূরণে বাজারে যাচ্ছে নাটোরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ফুল। দিবস দু’টি উপলক্ষে জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলায় পরিকল্পিতভাবে উৎপাদন করা হয়েছে রজনীগন্ধা ও গ্লাডিওলাস।

১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্তের প্রথম দিন এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবসে বাজারে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ফুলের দর। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিস এলাকার ৫০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান ও ২টি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কৃষকরা এমনভাবে জমিতে ফুল চাষ করেছেন- যাতে করে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে গাছের ফুলগুলো পরিপক্ক হয়।

চলতি মৌসুমে বাগাতিপাড়া উপজেলায় প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চায়না বেলী, গাঁদা, রজনীগন্ধা ও গ্লাডিওলাস উল্লেযোগ্য। বিগত ৩ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ফুল চাষে উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ক্রমশ বেড়েছে।

জমিতে প্রচলিত শস্য আবাদের চেয়ে ফুল চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় এলাকার কৃষকেরা ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। উপজেলার ঠ্যাঙ্গামারা এলাকার কৃষক জয়নাল আবেদীন ও মাঈনুল ইসলাম জানান, ধান, পাট, সবজির মত ফসলের উৎপাদনে আবাদি জমির রূপান্তর ঘটিয়ে ফুল চাষ শুরু করেছেন।

ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী রবিউল আওয়াল ফুল চাষের আগ্রহ সম্পর্কে বলেন, পড়াশুনা করতে করতে লালপুর এলাকার ফুলচাষি মামা পড়াশুনার ব্যয় নির্বাহে তার জমির উৎপাদিত ফুল নাটোরে বাজারজাত করণের দায়িত্ব প্রদান করেন। ঐসময় ফুলের উৎপাদন ও বিপণন সম্পর্কে ধারণা পেয়ে নিজেই বিগত ৫ বছর ধরে ফুল চাষ করছি।

রবিউল আওয়াল জানান, পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইন দিবসে ফুলের খুচরা বাজারে যেন আগুন ধরে। দাম ৩ থেকে ৪ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। দর বৃদ্ধির এই ছোঁয়া উৎপাদক পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়ে।

এই পর্যবেক্ষণ থেকে কৃষি বিভাগের কাজ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য পরিকল্পিতভাবে ফুল চাষ করা হয়েছে- যেন ফলন উঠে দিবস দু’টির প্রাক্কালে। নাটোর ছাড়াও রাজধানী ও নীলফামারীতে তিনি এবার ভ্যালেন্টাইন দিবসের ফুল পাঠাচ্ছেন বলে জানান।

একই এলাকার স্থানীয় গার্মেন্টস্ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘদিনের পেশা পাল্টে যুগপৎ ভাবে ফুল উৎপাদক ও ব্যবসায়ী হয়েছেন। ৩ বছর আগে ফুল চাষ শুরু করে ক্রমাগত আবাদি জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন। চলতি বছরে প্রায় ৩০ বিঘায় চাষাবাদকৃত জমির মধ্যে বেশির ভাগটাই চায়না বেলী।

এছাড়া চাষ করেছেন রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস ও গাঁদা। এবারের ভ্যালেন্টাইন দিবসে ঢাকা ছাড়াও বগুড়া, রাজশাহী, ঝিনাইদহ ও ফরিদপুরের ফুলবাজারে যাচ্ছে তার ফুল।

এছাড়াও জাহাঙ্গীর আলম বাগাতিপাড়া উপজেলার মালঞ্চি বাজারে একটি ফুলের বিপণী বিতান করেছেন। প্রতিদিন সেখানে জমির উৎপাদিত ফুল ছাড়াও বাইরে থেকে গোলাপ এনে বিক্রি করেন।

দীর্ঘ মেয়াদে জমি ইজারা পাওয়ার চেষ্টার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে গোলাপ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।

বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাবলু কুমার সুত্রধর জানান, আবাদি জমিতে প্রচলতি ফসল উৎপাদনে প্রাপ্ত মুনাফার চেয়ে ফুল উৎপাদনে মুনাফার পরিমাণ বেশী হওয়ায় এলাকার কৃষকরা ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এব্যাপারে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বাসসকে বলেন, নাটোরের কৃষি বৈচিত্রে ভরপুর। বর্তমানে বাগাতিপাড়া ও লালপুর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। নাটোর সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় ফুল চাষের অভিষেক হবে, দ্রুতই আবাদি জমির একটা অংশ ফুল চাষের আওতায় আসবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ফুল যাচ্ছে পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইন দিবসের বাজারে

আপডেট টাইম : ০৯:০৬:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইন দিবসে ফুলের বাড়তি চাহিদা পূরণে বাজারে যাচ্ছে নাটোরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ফুল। দিবস দু’টি উপলক্ষে জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলায় পরিকল্পিতভাবে উৎপাদন করা হয়েছে রজনীগন্ধা ও গ্লাডিওলাস।

১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্তের প্রথম দিন এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবসে বাজারে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ফুলের দর। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিস এলাকার ৫০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান ও ২টি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কৃষকরা এমনভাবে জমিতে ফুল চাষ করেছেন- যাতে করে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে গাছের ফুলগুলো পরিপক্ক হয়।

চলতি মৌসুমে বাগাতিপাড়া উপজেলায় প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চায়না বেলী, গাঁদা, রজনীগন্ধা ও গ্লাডিওলাস উল্লেযোগ্য। বিগত ৩ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ফুল চাষে উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ক্রমশ বেড়েছে।

জমিতে প্রচলিত শস্য আবাদের চেয়ে ফুল চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় এলাকার কৃষকেরা ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। উপজেলার ঠ্যাঙ্গামারা এলাকার কৃষক জয়নাল আবেদীন ও মাঈনুল ইসলাম জানান, ধান, পাট, সবজির মত ফসলের উৎপাদনে আবাদি জমির রূপান্তর ঘটিয়ে ফুল চাষ শুরু করেছেন।

ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী রবিউল আওয়াল ফুল চাষের আগ্রহ সম্পর্কে বলেন, পড়াশুনা করতে করতে লালপুর এলাকার ফুলচাষি মামা পড়াশুনার ব্যয় নির্বাহে তার জমির উৎপাদিত ফুল নাটোরে বাজারজাত করণের দায়িত্ব প্রদান করেন। ঐসময় ফুলের উৎপাদন ও বিপণন সম্পর্কে ধারণা পেয়ে নিজেই বিগত ৫ বছর ধরে ফুল চাষ করছি।

রবিউল আওয়াল জানান, পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইন দিবসে ফুলের খুচরা বাজারে যেন আগুন ধরে। দাম ৩ থেকে ৪ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। দর বৃদ্ধির এই ছোঁয়া উৎপাদক পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়ে।

এই পর্যবেক্ষণ থেকে কৃষি বিভাগের কাজ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য পরিকল্পিতভাবে ফুল চাষ করা হয়েছে- যেন ফলন উঠে দিবস দু’টির প্রাক্কালে। নাটোর ছাড়াও রাজধানী ও নীলফামারীতে তিনি এবার ভ্যালেন্টাইন দিবসের ফুল পাঠাচ্ছেন বলে জানান।

একই এলাকার স্থানীয় গার্মেন্টস্ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘদিনের পেশা পাল্টে যুগপৎ ভাবে ফুল উৎপাদক ও ব্যবসায়ী হয়েছেন। ৩ বছর আগে ফুল চাষ শুরু করে ক্রমাগত আবাদি জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন। চলতি বছরে প্রায় ৩০ বিঘায় চাষাবাদকৃত জমির মধ্যে বেশির ভাগটাই চায়না বেলী।

এছাড়া চাষ করেছেন রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস ও গাঁদা। এবারের ভ্যালেন্টাইন দিবসে ঢাকা ছাড়াও বগুড়া, রাজশাহী, ঝিনাইদহ ও ফরিদপুরের ফুলবাজারে যাচ্ছে তার ফুল।

এছাড়াও জাহাঙ্গীর আলম বাগাতিপাড়া উপজেলার মালঞ্চি বাজারে একটি ফুলের বিপণী বিতান করেছেন। প্রতিদিন সেখানে জমির উৎপাদিত ফুল ছাড়াও বাইরে থেকে গোলাপ এনে বিক্রি করেন।

দীর্ঘ মেয়াদে জমি ইজারা পাওয়ার চেষ্টার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে গোলাপ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।

বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাবলু কুমার সুত্রধর জানান, আবাদি জমিতে প্রচলতি ফসল উৎপাদনে প্রাপ্ত মুনাফার চেয়ে ফুল উৎপাদনে মুনাফার পরিমাণ বেশী হওয়ায় এলাকার কৃষকরা ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এব্যাপারে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বাসসকে বলেন, নাটোরের কৃষি বৈচিত্রে ভরপুর। বর্তমানে বাগাতিপাড়া ও লালপুর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। নাটোর সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় ফুল চাষের অভিষেক হবে, দ্রুতই আবাদি জমির একটা অংশ ফুল চাষের আওতায় আসবে।