বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন পাটের তিনটি জেনোমেরই স্বীকৃতি লাভ। দেশের এই সাফল্যের কথা বৃহস্পতিবার সংসদে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের তিনটি গবেষণায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া এবং সে গবেষণার ফল বিশ্বখ্যাত জার্নাল ন্যাচার প্ল্যান্টে প্রকাশিত হওয়ার কথা জানান তিনি।
আমাদের জাতীয় সম্পদ পাটের প্রধান দুই জাতের জীবনরহস্য উন্মোচন করে পাটকে সম্ভাবনাময় পণ্য হিসেবে ব্যবহারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন বাংলাদেশের প্রয়াত বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম। ২০১০ সালে তোষা ও ২০১৩ সালে দেশি পাটের জিনোম সিকোয়েন্স বা জীবন-সূত্র উন্মোচনের গবেষণায় নেতৃত্ব দেন তিনি। এর ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হয়।
পাটের এই জীবনরহস্য উন্মোচনের এক বছর পর ২০১৪ সালে মারা যান তিনি। কিন্তু তার দেখানো পথে তারই শিষ্যরা পাটের আঁশকে সুক্ষ্ম সুতায় পরিণত করার পথে আরেক ধাপ এগোনোর কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। দেশি ও তোষা পাটের জিনগত গঠনের বিষয়টি আবিষ্কার করেছেন। তাদের এ উদ্ভাবনের বিষয়টি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ন্যাচার প্লান্টে প্রকাশিত হয় গত ৩০ জানুয়ারি।
এক সময় দেশের সবচেয়ে অর্থকরী ফসল ছিল পাট। রপ্তানি বাণিজ্যের বড় অংশও ছিল এই পাট। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কারে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে পাট এবং ধীরে ধীরে তার অবস্থান হারায়। তবে তিন বছর আগে পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কারে হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার আশা তৈরি হয়।
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের উন্মোচিত পাটের জিনোম কোডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের অনুপ্রাণিত করবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। আমাদের আরো বহুদূর এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণা অব্যাহত রাখবেন এবং পাট আবার আগের মত প্রধান অর্থকরী ফসল হয়ে উঠবে।
জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন এবং আমেরিকার বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন সেন্টার থেকে কোড নম্বর পাওয়া পর্যন্ত আর্থিক ও নীতিগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য বর্তমান সরকারকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা মনে করি, ধারাবাহিক এ সাফল্যের পর এখন প্রয়োজন দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে পাটের বাজার সম্প্রসারণে মনোযোগ দেওয়া। সেই সঙ্গে প্রয়োজন পাটচাষিদের জন্য পর্যাপ্ত প্রণোদনা ও উপযুক্ত বাজারমূল্য নিশ্চিত করা। তা না হলে অর্জিত সাফল্যের তাৎপর্য ম্লান হবে।