ঢাকা ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রসারে প্রদর্শনী খামার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৬:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
  • ১৪৭৫ বার

জেলার রাণীনগরে নিজ উদ্দ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে পল্লী শ্রী নিকেতন নামের একটি প্রদর্শনী খামার। এই প্রদর্শনী খামারের বিভিন্ন প্রকল্প দেখে উপজেলার অনেক বেকার যুবক গড়ে তুলছেন ছোট ছোট খামার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাই চারদিকের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি।

উপজেলার ২নং ইউপির কাশিমপুর গ্রামে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে প্রদর্শনী খামারটি।বিভিন্ন এলাকা কৃষকদের মাঝে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেওয়ায় এই খামারের মুল লক্ষ্য। এতে কৃষকরা কম পরিশ্রমে এই প্রযুক্তি ও পদ্ধতিগুলোকে ব্যবহার করে আরো অধিক লাভবান হবে বলে মনে করেন খামার কর্তৃপক্ষ।আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রসারে নওগাঁয় প্রদর্শনী খামার (6)

সরেজমিনে জানা যায়, ২০১৫ সালের মে মাসে এই খামার তৈরির কাজ শুরু করেন স্থানীয় সংসদ মো. ইসরাফিল আলম। এই জনপদের অবহেলিত কৃষকদের মাঝে আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই মূলত তিনি নিজ উদ্দ্যোগে এই প্রদর্শনী খামারটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।

বর্তমানে এই খামারে দেশি-বিদেশি ব্রাহ্মা, ফিজিয়ান, সিন্ধুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গরু পালন ও কম সময়ে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এখানে অতি অল্প সময়ে উৎপাদিত হচ্ছে গরুর মাংস ও দুধ।আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রসারে নওগাঁয় প্রদর্শনী খামার (3)

গরুর সেটের টিনের ওপর প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে পানির ঝরণা তৈরি করা হয়েছে। এতে করে গরু-ছাগলকে গরমের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অতিরিক্ত কোনো বৈদ্যুতিক ফ্যানের প্রয়োজন হয় না। ঝরণার পানি একবার প্রবাহিত করলে ২-৩ ঘণ্টা সেট ঠাণ্ডা থাকে। এতে করে সাশ্রয় হচ্ছে অর্থ ও বিদ্যুত।

এখানে এলাকার কৃষকদের মাটি পরীক্ষার জন্য স্থাপন করা হয়েছে সয়েল টেস্ট ল্যাবরেটরি যেখানে কৃষকরা বিনামূল্যে তাদের জমির মাটি পরীক্ষা করাতে পারবেন। এখানে দেশি-বিদেশি মেষ, ভেড়া ও গ্যারল পালন করা হচ্ছে। টার্কি পাখি, চিনা মুরগি ও দেশি-বিদেশি কবুতর পালন করা হচ্ছে।আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রসারে নওগাঁয় প্রদর্শনী খামার (4)

গুরুর গোবর থেকে তৈরি করা হচ্ছে বায়োগ্যাস আর গোবরগুলোকে জৈব সার হিসোবে বিক্রয় ও ব্যবহার করা হচ্ছে। খামারে থাইলান্ডের কেঁচো দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে কম্পোস্ট সার। এই সার গুলো বিক্রয় হচ্ছে ২০-২৩ হাজার টাকা টন হিসাবে। এখান থেকে বিদেশি কেঁচোগুলো সরবরাহও করা হচ্ছে বাহিরে।

খামারে চাষ করা হচ্ছে মাশরুম। অতি অল্প সময়ে এই মাশরুম চাষ করে অধিক লাভ করা সম্ভব। পুষ্টিতে ভরপুর এই মাশরুম নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাহিরে বিক্রয় করা হচ্ছে।মাশরুম চাষ করে আমরা চাপ কমাতে পারি অন্যান্য সবজির প্রতি।

খামারে রয়েছে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মাছের হ্যাচারি। যেখানে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদনসহ চাষ করা হচ্ছে এবং বাহিরে সরবরাহও করা হচ্ছে।

রয়েছে দেশি-বিদেশি মুরগির খামার। খামারের পুকুরের পাড়ে চাষ করা হয়েছে বিভিন্ন ঔষধি ও ফলদ গাছ এবং সবজি। খামারে সব কিছুই তৈরি করা হয় কোনো প্রকারের রাসায়নিক কেমিক্যাল ও সার ছাড়াই। এখানে আধুনিক পদ্ধতিতে পালন করা হচ্ছে কোয়েল পাখি। এই পাখির ডিম ও মাংস খামার থেকে কম মূল্যে সরবরাহ করা হয়।

খামারের মালিক স্থানীয় সংসদ মো. ইসরাফিল আলমের সঙ্গে পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তালেব, উপজেলা সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান প্রমুখ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, এই খামারে চাষাবাদ করা হয় আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

খামারের মালিক স্থানীয় সংসদ মো. ইসরাফিল আলম বলেন, আমার নির্বাচিত এলাকা আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলার মানুষ খুবই অবহেলিত। তাই এলাকার বেকার যুবকদের আর কৃষকদের মাঝে আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তিগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য আমার এই খামার গড়ে তোলা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রসারে প্রদর্শনী খামার

আপডেট টাইম : ১২:৫৬:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

জেলার রাণীনগরে নিজ উদ্দ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে পল্লী শ্রী নিকেতন নামের একটি প্রদর্শনী খামার। এই প্রদর্শনী খামারের বিভিন্ন প্রকল্প দেখে উপজেলার অনেক বেকার যুবক গড়ে তুলছেন ছোট ছোট খামার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাই চারদিকের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি।

উপজেলার ২নং ইউপির কাশিমপুর গ্রামে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে প্রদর্শনী খামারটি।বিভিন্ন এলাকা কৃষকদের মাঝে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেওয়ায় এই খামারের মুল লক্ষ্য। এতে কৃষকরা কম পরিশ্রমে এই প্রযুক্তি ও পদ্ধতিগুলোকে ব্যবহার করে আরো অধিক লাভবান হবে বলে মনে করেন খামার কর্তৃপক্ষ।আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রসারে নওগাঁয় প্রদর্শনী খামার (6)

সরেজমিনে জানা যায়, ২০১৫ সালের মে মাসে এই খামার তৈরির কাজ শুরু করেন স্থানীয় সংসদ মো. ইসরাফিল আলম। এই জনপদের অবহেলিত কৃষকদের মাঝে আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই মূলত তিনি নিজ উদ্দ্যোগে এই প্রদর্শনী খামারটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।

বর্তমানে এই খামারে দেশি-বিদেশি ব্রাহ্মা, ফিজিয়ান, সিন্ধুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গরু পালন ও কম সময়ে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এখানে অতি অল্প সময়ে উৎপাদিত হচ্ছে গরুর মাংস ও দুধ।আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রসারে নওগাঁয় প্রদর্শনী খামার (3)

গরুর সেটের টিনের ওপর প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে পানির ঝরণা তৈরি করা হয়েছে। এতে করে গরু-ছাগলকে গরমের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অতিরিক্ত কোনো বৈদ্যুতিক ফ্যানের প্রয়োজন হয় না। ঝরণার পানি একবার প্রবাহিত করলে ২-৩ ঘণ্টা সেট ঠাণ্ডা থাকে। এতে করে সাশ্রয় হচ্ছে অর্থ ও বিদ্যুত।

এখানে এলাকার কৃষকদের মাটি পরীক্ষার জন্য স্থাপন করা হয়েছে সয়েল টেস্ট ল্যাবরেটরি যেখানে কৃষকরা বিনামূল্যে তাদের জমির মাটি পরীক্ষা করাতে পারবেন। এখানে দেশি-বিদেশি মেষ, ভেড়া ও গ্যারল পালন করা হচ্ছে। টার্কি পাখি, চিনা মুরগি ও দেশি-বিদেশি কবুতর পালন করা হচ্ছে।আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রসারে নওগাঁয় প্রদর্শনী খামার (4)

গুরুর গোবর থেকে তৈরি করা হচ্ছে বায়োগ্যাস আর গোবরগুলোকে জৈব সার হিসোবে বিক্রয় ও ব্যবহার করা হচ্ছে। খামারে থাইলান্ডের কেঁচো দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে কম্পোস্ট সার। এই সার গুলো বিক্রয় হচ্ছে ২০-২৩ হাজার টাকা টন হিসাবে। এখান থেকে বিদেশি কেঁচোগুলো সরবরাহও করা হচ্ছে বাহিরে।

খামারে চাষ করা হচ্ছে মাশরুম। অতি অল্প সময়ে এই মাশরুম চাষ করে অধিক লাভ করা সম্ভব। পুষ্টিতে ভরপুর এই মাশরুম নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাহিরে বিক্রয় করা হচ্ছে।মাশরুম চাষ করে আমরা চাপ কমাতে পারি অন্যান্য সবজির প্রতি।

খামারে রয়েছে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মাছের হ্যাচারি। যেখানে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদনসহ চাষ করা হচ্ছে এবং বাহিরে সরবরাহও করা হচ্ছে।

রয়েছে দেশি-বিদেশি মুরগির খামার। খামারের পুকুরের পাড়ে চাষ করা হয়েছে বিভিন্ন ঔষধি ও ফলদ গাছ এবং সবজি। খামারে সব কিছুই তৈরি করা হয় কোনো প্রকারের রাসায়নিক কেমিক্যাল ও সার ছাড়াই। এখানে আধুনিক পদ্ধতিতে পালন করা হচ্ছে কোয়েল পাখি। এই পাখির ডিম ও মাংস খামার থেকে কম মূল্যে সরবরাহ করা হয়।

খামারের মালিক স্থানীয় সংসদ মো. ইসরাফিল আলমের সঙ্গে পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তালেব, উপজেলা সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান প্রমুখ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, এই খামারে চাষাবাদ করা হয় আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

খামারের মালিক স্থানীয় সংসদ মো. ইসরাফিল আলম বলেন, আমার নির্বাচিত এলাকা আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলার মানুষ খুবই অবহেলিত। তাই এলাকার বেকার যুবকদের আর কৃষকদের মাঝে আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তিগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য আমার এই খামার গড়ে তোলা।