পড়ন্ত বিকল। ঝিরঝির হিমেল হাওয়া বইছে। শীতের এই সময়ে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থান আহসান মঞ্জিলে ঘুরতে এসেছেন দর্শনার্থীরা। প্রতিদিনই এখানে রয়েছে শতাধিক ভ্রমণপিয়াসীদের আনাগোনা। এছাড়া ছুটির দিনে হাজারো মানুষের ঢল নামে নবাব আমালের এই স্থাপত্য দেখতে।
ঢাকা শহরের মতো ব্যস্ত শহরে নিঃশ্বাস ফেলার জায়গার অভাব। কিন্তু আপনি চাইলেই আহসান মঞ্জিলের মত একটি ঐতিহাসিক স্থানে ঘুরে আসতে পারেন।
টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করেই দেখতে পাবেন সুন্দর একটি রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে নানা রকম ফুলগাছ। মূল প্রাসাদের পাশে রয়েছে ছোট একটি মাঠ। এর পাশে রয়েছে ফুচকা, বেলুন, ঝালমুড়িওয়ালাদের ভিড়। উত্তর-পূর্বে রয়েছে একটি ফুলের বাগান।
প্রাসাদের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী বয়ে গেছে। প্রাসাদ থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর দূরত্ব বেশি নয়। ফলে এখান থেকে সরাসরি নদীতে লঞ্চ, জাহাজ ও ট্রলার, নৌকা দেখতে পাওয়া যায়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দর্শনার্থীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দূর-দূরান্ত থেকে বেড়াতে এসেছেন আহসান মঞ্জিলে। ঘুরাঘুরির পাশাপাশি ছবি তুলছেন অনেকে।
মতিঝিলের তামান্না ফেরদৌসি। তিনি তার পরিবারসহ ঘুরতে এসেছেন। জানান, প্রতিদিন তিনি অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাই ছুটির দিনে সবাই মিলে ঘুরতে এসেছেন এখানে। হাতের কাছেই রয়েছে এরকম একটা ঐতিহাসিক স্থান, তাই তিনি এ প্রাসাদ সম্পর্কে তার বাচ্চাদের জ্ঞান ও বিনোদিত করার জন্য আহসান মঞ্জিলে বেড়াতে এসেছেন।
নীলা আক্তার তার বন্ধুর সঙ্গে এখানে ঘুরতে এসেছেন। তারা প্রায়ই এখানে বেড়াতে আসেন বলে জানালেন।
আহসান মঞ্জিল দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্বাংশের গম্বুজযুক্ত অংশকে বলা হয় প্রাসাদ ভবন বা রংমহল। এবং পশ্চিম দিকের আবাসিক প্রকোষ্ঠাদি নিয়ে গঠিত ভবনকে বলা হয় অন্দর মহল।
প্রাসাদ ভবনটি আবার দুটি অংশে বিভক্ত। মাঝখানে গোলাকার কক্ষের উপর অষ্টকোন বিশিষ্ট উচু গম্বুজটি অবস্থিত। পূর্বাংশে দোতলায় বৈঠকখানা, গ্রন্থাগার, কার্ডরুম ও তিনটি মেহমান কক্ষ রয়েছে। এবং পশ্চিমাংশে রয়েছে একটি নাচঘর ও কয়েকটি আবাসিক কক্ষ। আহসান মঞ্জিলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল দোতলা থেকে সরাসরি প্রাসাদের আঙ্গিনায় নামার সুপ্রশস্ত সিঁড়ি যা বুড়িগঙ্গার দিকে অবস্থিত। সকল বয়সের দর্শনার্থী এখানে ছবি তোলেন এবং বাচ্চাদের আনন্দে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখা যায়।
নিচতলায় পূর্বাংশে রয়েছে ডাইনিং হল, পশ্চিমাংশে বিলিয়ার্ড কক্ষ, দরবার হল ও কোষাগার। প্রাসাদ ভবনের উভয় তলায় উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে সুপ্রশস্ত বারান্দা।
আহসান মঞ্জিলের তথ্যকর্মীর কাছ থেকে জানা যায়, আহসান মঞ্জিলের ৩১টি কক্ষের মধ্যে ২৩টি কক্ষ বিভিন্ন প্রদর্শনীর জন্য, নয়টি কক্ষ লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে প্রাপ্ত ফ্রিৎজকাপ কর্তৃক ১৯০৪ সালে তোলা ছবির সঙ্গে মিলিয়ে সাজানো হয়েছে। আহসান মঞ্জিলের তোষাখানা কোকারিজ কক্ষে থাকা তৈজসপত্র এবং নওয়াব এস্টেটের পুরানো অফিস এডওয়ার্ড হাউস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা চার হাজার সাতটি।
এখানে ঘুরতে আসলে দর্শনার্থীরা নবাবি আমলের অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। নবাবদের সময়ে ঢাকায় ফিল্টার করা পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়। নবাব ‘আব্দুল গনি’ আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা শহরে ফিল্টার করা পানীয় জলের ব্যবস্থা করেন। নবাবদের অবদানে ঢাকায় প্রথম চালু হয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যয়ে তিনি এ বিজলি বাতির ব্যবস্থা করেন।
এখানে বড়দের জন্য জাদুঘরে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা এবং ছোটদের পাঁচ টাকা। এছাড়াও বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য ৭৫ টাকা টিকিট মূল্য। প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো টিকিট কাটতে হয় না। আগে থেকে আবেদন করলে ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে জাদুঘরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। বহিরাঙ্গনে ভাড়ার বিনিময়ে চলচ্চিত্রায়নের ব্যবস্থাও করা যায়।
দর্শক চাইলেই এখানে এসে ভ্রমণের মাধ্যমে চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি ঐতিহাসিক জ্ঞানার্জনও করতে পারেন। তাই ছুটির দিন বা হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসুন ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিলে।