চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির যতো রূপ

চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টিতে(জাপা) দুই গ্রুপের কোন্দলে বিপর্যস্ত। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ ও নগর সভাপতি মাহজাবীন এমপিকে ঘিরে দুই ধারায় বিভক্ত নেতাকর্মীরা। দুই গ্রুপের কার্যালয় ও কার্যক্রম আলাদা। একদিকে চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টি বলতে সোলায়মান আলম শেঠ নিজেকেই বোঝান। কিন্তু নগর সভাপতি মাহজাবীন বলেন, দলে শেঠের অস্তিত্ব নেই।

২০১৪ সালে ৪ জুন সোলায়মান আলম শেঠের নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙ্গে সাংসদ মাহজাবীন মোরশেদকে আহ্বায়ক করে নগর জাপার কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই আহ্বায়ক কমিটি মেনে নিতে পারেননি শেঠের অনুসারীরা। সেই থেকে সোলায়মান শেঠ ও মাহজাবীন মোরশেদকে ঘিরে নেতাকর্মীরা দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েন। সেই কোন্দল এখনো চলমান।

সবশেষ গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর জিইসি মোড়ে একটি কমিউনিটি সেন্টারে মাহজাবীন মোরশেদের অনুসারীরা সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে মাহজাবীন মোরশেদকে সভাপতি ও এয়াকুব চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। তিন মাসের মধ্যে ইউনিট সম্মেলন শেষ করে নগর কমিটি গঠনের শর্তে এ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

শেঠের অনুসারীরা বলছেন, গত বছর জাপার সম্মেলন উপলক্ষে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনো সম্মেলন ও সভা ছাড়াই এসব কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাকে পকেট কমিটি বলা যাবে। এখন এসব নেতাকর্মী দলে ও সরকারি কার্যক্রমে গুরুত্ব পাচ্ছে না। এমননি জাপা দলীয় সাংসদদের বিভিন্ন বরাদ্দেও দলীয় নেতাকর্মীরা গুরুত্ব পাচ্ছেন না। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে।

গত ১ জানুয়ারি ঢাকায় জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ সফল করতে দলের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেয়া হলেও চট্টগ্রামে তা পালন করা হয়েছে পৃথকভাবে। সোলায়মান শেঠ এটি নিয়ে পৃথক প্রস্তুতি সভা করেছেন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা সভাপতি সামশুল আলম মাস্টার ও পটিয়ায় পৃথক প্রস্তুতি সভা করেছেন। ঢাকায় গেছেনও পৃথকভাবে।

তবে দলের নেতাকর্মীদের অভিমত, দলীয় চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ সারাদেশে জঙ্গিবাদবিরোধী সভা-সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু চট্টগ্রাম নগর জাপা এখনো সেই নির্দেশনা পালন করতে পারেনি। এমনকি দলীয় এমপিরাও জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে এখনো সক্রিয় হননি।

তাদের আরো বক্তব্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মান-অভিমান ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। চট্টগ্রাম থেকে অনেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি পেয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে এখনো ঐক্য সৃষ্টি হয়নি। নিজেদের মধ্যে মান-অভিমান জিইয়ে রেখেছেন। তাই দল এগোচ্ছে না।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সার্বিক অবস্থা জানতে চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ সম্প্রতি জানিয়েছেন দলে তার অবস্থানের কথা। নোংরা রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে তিনি দলের হাল ধরে দলকে সুসংহত করার চেষ্টা করছে বলে ও জানান তিনি।

দলে নিজের অন্তভূর্ক্তি ও নিজের রাজনীতি জীবনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, স্কুল জীবনে সরাসরি রাজনীতি না করলেও রাজনীতির পর্দার পিছনের মানুষ ছিলেন। ২০০০ সালে রাজনীতিতে আসেন। ২০০৪ সালে জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম মহানগরের আহব্বায়ক হিসেবে যোগ দেন। তারপর থেকেই তার রাজনীতির জীবন শুরু। পরপর কয়েকটি মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু জিততে পারেননি। ২০১৪ সালে খাগড়াছড়ি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচন করে। কিন্তু সেখানে তার জয় আসেনি।

জয়ী না হওয়ার পিছনে তিনি জাতীয় পার্টির কিছু নেতার নোংরা রাজনীতির কথা উল্লেখ করেন। যার মধ্যে জিয়াউদ্দীন বাবলু অনত্যম বলে দাবি তার। ২০১৪ সালে মেয়র নির্বাচনে তার জয়লাভের কথা থাকলেও সে সময় কি নির্বাচন হয়েছিলো তা দেশব্যাপী দেখেছে বলে জানান তিনি। ক্ষমতাসীন দলের ভোট কারচুপির পরও তিনি ৮ হাজার ৬৭৬ টি ভোট পেয়েছেন বলে জানান।

দলের জন্য কি কাজ করেছেন, এ প্রশ্নের জবাবে সোলায়মান শেঠ বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে দলের সাংগঠনিক কাজ মৃত ছিলো। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর এমপি জিয়াউদ্দিন বাবলু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পর দু দুজন এমপি হয়েছেন। তিন পার্বত্য জেলা পুনঃজীবিত হয়েছে। তাই এখন চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টি বলতে জনগন তাকেই বোঝে। তবে দলের বিরোধ নিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক বড় দলের বিভেদ থাকে। না হলে দল বড় হয় না।
তিনি আরো বলেন, গত ১ জানুয়ারি ঢাকায় জাপার মহাসমাবেশে তার নেতৃত্বে ৬০০ জন লোক গেছে। ৩ পার্বত্য জেলা থেক ৬টি বাসভর্তি এসব নেতাকর্মী গেছে।

তবে তার বিরোধীদের উদ্দেশ্যে শেঠ বলেন, ওরা রাজনীতি করতে আসেনি। ওরা রাজনীতি জানে না। ওরা আখের গোছাতে এসেছে। এরা জাতীয় পার্টির কলঙ্ক। জিয়াউদ্দিন বাবলু দলকে বিভক্তি করেই চলেছে বলে জানান তিনি।
তবে তার বিরুদ্ধে দলের ভিতর থেকে উঠা ভূমিদূস্যতার অভিযোগ খণ্ডন করে জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, তার বাপ-দাদার অনেক সম্পত্তি বেদখলে চলে গেছে। সে এখন সেই সম্পত্তিগুলো পুনরুদ্ধার করতে গেলেই তাকে ভুমিদূস্য বলা হচ্ছে। কিন্তু এসব ধোপে টিকেনি বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে মাহজাবীন মোরশেদ বলেন, যত গর্জে তত বর্ষে না। একা একা ঢোল পেটালে তো হবে না। জাতীয় পার্টিতে শেঠের অস্তিত্ব অতীতেও ছিলো না, বর্তমানেও নেই। শেঠ একজন ভূমিদূস্য।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর