প্রাক্তন আবাসিক সবুজ ময়ূর

প্রাক্তন আবাসিক পাখি ‘সবুজ ময়ূর’। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। ১৯৪০ সালের দিকে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। চির সবুজ বনের বাসিন্দা। বনতলে ঘুরে বেড়ায়। উড়তেও পারে। তবে তেমন একটা গতি নিয়ে উড়তে পারে না। উড়তে গিয়ে বারবার নিচের দিকে নেমে পড়ে। মূলত লেজের লম্বা পালক ওড়ার গতি দাবিয়ে রাখে। তা ছাড়া শরীরের ওজনও ওড়ার গতি আটকে দেয়। অন্যসব ময়ূরের মতো এরাও ঝরা পাতা উল্টিয়ে এবং মাটি আঁচড়ে খাবার খায়। ছোট দলে বিচরণ করে। একটি ময়ূরের অধীনে ৩-৫টি ময়ূরী থাকে। কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে ভোরে এবং গোধূলীলগ্নে। মন ভালো থাকলে পুরুষ পাখি নাচানাচি করে এবং পেখম মেলে কসরত দেখায়। পুরুষ পাখির তুলনায় স্ত্রী পাখি অনেকটাই নিষ্প্রভ। কণ্ঠস্বরও কর্কশ। পুরুষ পাখি ডাকে ‘ইয়েই-অও…’ সুরে। স্ত্রী পাখি ডাকে ‘অ্যাও-অ্যা…’ সুরে। ভয় পেলে কণ্ঠস্বর পাল্টে যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। বর্তমানে বিশ্বে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এরা বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে।
পাখির বাংলা নাম: ‘সবুজ ময়ূর’, ইংরেজি নাম: গ্রীন পিফাউল’(Green Peafowl), বৈজ্ঞানিক নাম: Pavo muticus । এরা ‘বর্মী ময়ূর’ নামেও পরিচিত।
দৈর্ঘ্য ১০০-১১০ সেন্টিমিটার। পেখম ১৫০-১৯০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ও আকার ভিন্ন। পুরুষ পাখির ঘাড়, গলা এবং বুকের পালক আঁশের মতো উঁচু। মাথায় সুঁচালো ঝুঁটি। চোখের পাশে কমলা-ক্রিম রঙের চামড়া। পিঠের পালক গাঢ় সবুজ এবং কালচে-নীল। ডানা ঢাকনি সবুজ। ডানার মধ্যভাগের পালক কিছুটা বাদামি। সবুজ লেজের পেখমের প্রান্তে কালো চক্রের বেগুনি ফোঁটা। দেহতল পিতল সবুজের ওপর কালো টান এবং সবুজ-বেগুনি দাগ। স্ত্রী পাখির পিঠ গাঢ় বাদামি। পিঠের শেষ ভাগ এবং কোমর কালচে-বাদামি। লেজ পীতাভ, বাদামি ও কালো রঙের ডোরা। স্ত্রী পাখির পেখম নেই। অপ্রাপ্তবয়স্কদের সবুজাভ-তামাটে কোমর ছাড়া বাদবাকি দেখতে স্ত্রী পাখির মতো। প্রধান খাবার পোকামকড় কেঁচো, ছোট সাপ, টিকটিকি, রসালো ফল, শস্যবীজ ইত্যাদি।
প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে মে। ঝোঁপের ভেতর মাটিতে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৬-২৮ দিন।
লেখক: আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর