অনুরোধে ঢেঁকি গেলা যে কত কঠিন, তা যারা গেলেন তারাই কেবল বলতে পারবেন। নতুন করে যদি কেউ সেই ‘ঢেঁকি গেলার গল্প’ শুনতে চান, তাহলে শুনুন এই দম্পতির গল্প।
‘খাল কেটে কুমির আনা’র কথা অনেকেই শুনেছেন। এটি বহুল প্রচলিত বাংলা প্রবাদ, যার অর্থ ‘বিপদ ডেকে আনা।’ তবে ‘ফেসবুকে ভিডিও দিয়ে অতিথি আনা’ এখন থেকে মনে হয় মেক্সিকোতে বিপদ ডেকে আনার নতুন প্রবাদ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। অন্তত ক্রিসেনসিও ইবারা ও আনাএলডা গার্সিয়া দম্পতির অবস্থা দেখে তা-ই মনে হয়।
ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় মেয়ের জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে বিপদ ডেকেছিলেন এই দম্পতি। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে ১২ লাখেরও বেশি বার শেয়ার হয়েছিল। দিতে হয়েছে ‘আক্কেল সেলামি’ও।
ভিডিও শেয়ার করা লোকেরা বলেছিলেন, তারা জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন। সত্যিই সেসব লোকের অধিকাংশই অনু্ষ্ঠানে এসে হাজির। আর এত লোককে আপ্যায়ন করতে গিয়ে ওই দম্পতির ‘মাথা খারাপ’ হওয়ার মতো অবস্থা।
মেক্সিকোর সান লুইস পোটোসি গ্রামের রুবি ইবারা গার্সিয়া গত ২৬ ডিসেম্বর ১৫ বছরে পা রাখল। তার ‘কিনসেনইয়ারা’ বা ‘১৫তম জন্মদিনের মাধ্যমে শিশুকাল থেকে যৌবনকালে পদার্পণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষে চলতি মাসের শুরুর দিকে তার বাবা ক্রিসেনসিও ইবারা ও মা আনাএলডা গার্সিয়া তাকে নিয়ে ফেসবুকে একটি দাওয়াত দেন প্রতিবেশী ও বন্ধুদের উদ্দেশে।
ভিডিওতে ক্রিসেনসিও ইবারা বলেন, ‘হ্যালো, কেমন আছেন? এই ২৬ ডিসেম্বর আমাদের কন্যা রুবি ইবারা গার্সিয়ার ১৫তম জন্মদিনের পার্টিতে আপনারা আমন্ত্রিত।’ এ সময় তিনি তিনটি স্থানীয় ব্যান্ডদলের নাম ঘোষণা করেন। এ ছাড়া ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীকে ১০ হাজার পেসো (৪৯০ ডলার) পুরস্কার দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন। সবশেষে তিনি বলেন, ‘এখানে সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে আমন্ত্রিত।’ এ সময় তার মেয়ে রুবি পাশে দাঁড়িয়ে হাসছিল।
তবে তারা ফেসবুকে সেই দাওয়াতের ভিডিওটি কাস্টমাইজ করতে ভুলে যান। পাবলিক করে দেওয়া সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।
ফেসবুকের এই নিমন্ত্রণ ক্রিসেনসিও ইবারা ও আনাএলডা গার্সিয়া দম্পতি মূলত প্রতিবেশী ও বন্ধুদের উদ্দেশে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই সেই অনুষ্ঠানের অতিথি হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ক্রিসেনসিও ইবারা বিনয়ে ‘ঢেঁকি গিলে’ আগ্রহীদের না করতে পারেননি। এক টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি নিশ্চিত করেন যে, কাউকেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।
ইবারার জন্মদিনে ১২ লাখ মানুষ না এলেও নেহাত কম লোক আসেননি। তাদের সামাল দিতে ও আপ্যায়ন করতে হিমশিম খেতে হয় ইবারার বাবা-মাকে।
ফেসবুকে এক বার্তায় আগত অতিথিদের উদ্দেশে রুবি বলে, ‘আপনারা যারা অনুষ্ঠানে এসেছেন দয়া করে হতাশ হবেন না। আসলেই অনেক লোক এসেছে এবং কীভাবে সবকিছু সামাল দেওয়া যায়, আমরা সেই চেষ্টা করছি। আমি আপনাদের ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করছি। আপনাদের জন্যই এ অনুষ্ঠান।’
অনুষ্ঠানে গোলাপ ফুলের ডিজাইনের পোশাক পরিহিত রুবিকে সত্যিকারের রুবির (চুনি রত্ন) মতোই দেখাচ্ছিল। তবে অনুষ্ঠান চলাকালে তাকে বেশ কয়েকবার অস্বস্তি বোধ করতে দেখা যায়। এত লোকের কোলাহলে তার ‘মাথা নষ্ট’ হওয়ার উপক্রম। একবার তো সে প্রায় কেঁদেই দিয়েছিল।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে রুবি ও তার পরিবার মিডিয়া ও তাদের আরোপিত নিয়ম যারা মানেনি সেসব লোকদের প্রতি বেশ বিরক্ত ছিলেন। মূলত, এত লোককে আপ্যায়ন করতে গিয়ে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা হয় তাদের। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে, তারা আসলে এত লোক আসুক সেটা চাননি। আবার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় যারা অতিথি হতে চেয়েছেন, তাদেরও না বলতে পারেননি।
একটি উন্মুক্ত মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান উপলক্ষে বেশ কয়েকটি বিশালাকার কেক কাটা হয়। আগত অতিথিদের জন্য বেশ কয়েকটি প্যান্ডেল টাঙানো হয়।
স্থানীয় আইনপ্রণেতা রবার্তো আলেজান্দ্রো সেগোভিয়া হার্নান্দেজ জানান, রুবির জন্মদিন উপলক্ষে নিরাপত্তার জন্য সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আকাশে ড্রোন দিয়ে অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করা হয়।