ঢাকা ০৯:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বকফুলের বড়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৭:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ১৫১৮ বার

ময়মনসিংহে এক যুগ আগেও গৃহস্থের বাড়ির আঙিনায় দেখা মিলত বকফুল গাছের। ভোজনরসিক বাঙালির প্রতিটি ঘরে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের মাঝে খাবারে বিশেষ মাত্রা যোগ করত বকফুলের বড়া বা ভাজা বকফুল। এই ফুল খাবারের উপকরণ ছাড়া কোলাচার বা পূজায় ব্যবহারের নজির নেই। ঘর সাজাতে কিংবা নারীদের খোঁপায় ফুলের ব্যবহার দেখা গেলেও বকফুল সেখানে অনুপস্থিত। এ ফুলের কদর খাবারের উপকরণ বড়াতেই।

ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রতিবাড়িতেই বক ফুলের বড়া একটি প্রচলিত খাবার। চালের গুড়ার পেস্টকে পানি মিশিয়ে পাতলা করে এতে হলুদ ও লবন মিশিয়ে বকফুল চুবিয়ে বড়া করে তৈরি করা হয়। আকৃতিতে বকফুল গাছ বড় হয়। শীতে ফুল দেয়। অতিবৃষ্টিতে এই গাছ মারে যায়।

এক সময় ময়মনসিংহ অঞ্চলে এ ফুল বিক্রি হত না। সংগ্রহকারীরা ‘কুডা’ (বড় লাঠি) দিয়ে পেড়ে এফুল কুড়িয়ে সংগ্রহ করতেন। এখন মাঝে-মধ্যে এই ফুল বাজারে দেখা মেলে। ভালো দামেও তা বিক্রি হয়।

বক ফুল শিম ও মটর গোত্রীয় গাছ। কিন্তু গাছ দেখতে মোটেই শিম বা মটরের মত নয়। ফুলের গড়নের কিছুটা মিল থাকলেও পাতা ও গাছের সাথে কোন মিল নেই। তবে ধৈঞ্চা গাছের সাথে কিছুটা মিল আছে। বক ফুল গাছ ধৈঞ্চা গাছের চেয়ে বড় ও মজবুত।

অঞ্চল ভেদে এ গাছের অনেক নাম আছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বক, বকে, বগ, বকফুল, বগফুল, অগন্তা, অগাতি ইত্যাদি। তবে এ গাছটি বকফুল নামেই বেশি পরিচিত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বকফুল গাছ জন্মে, বিশেষ করে বাংলাদেশে।

বকফুলের উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম শেষবানিয়া গ্রেন্ডিফ্লোরা। ফুলের রং বকের মত সাদা বলেই হয়তো এর নামকরণ করা হয়েছে বকফুল। এদেশে তিন রংয়ের বকফুল দেখা যায়- সাদা, লাল, গোলাপী। লাল রংয়ের বকফুলের জাত এসেছে থাইল্যান্ড থেকে। এজন্য একে থাই বকফুল বলা হয়। বিভিন্ন দেশে বকফুল সব্জি হিসেবে খাওয়া হয়। সাধারণত না ফোটা ফুল সব্জি হিসেবে খাওয়া হয়। বাংলাদেশে বহুকাল থেকে বকফুল ভেজে খাওয়ার প্রচলন আছে। বকপাখির মত আকৃতি হওয়ায় হয়তো এর নামকরণ করা হয়েছে বকফুল।

অনেকগুলো ফুল সব্জির মত তেল, মরিচ, ও হলুদ ইত্যাদি দিয়ে রেঁধেও খাওয়া যায়। বকফুল গাছের প্রতিটি অংশই ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। জ্বর, ফোলা ও ব্যাথা বেদনা সারাতে এ গাছের মূল ব্যবহার করা হয়। বাতের ব্যথায় এ গাছের শিকড় চুর্ন জলের সাথে গুলে ব্যাথার জায়গায় ঘষলে বা লাগালে বা প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। এ গাছের বাকল বসন্ত রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে। চুলকানি ও পাঁচড়া সারাতে বাকল চুর্ণ ব্যবহার করা যায়। কৃমি ও জ্বর সাড়াতে এ গাছের পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায় বলে কবিরাজদের দাবি।

বাঙালির পরম্পরার খাবারের উপকরণ এই বকফুল আর আগের মত দেখা না মিললেও কদর কমেনি মোটেও।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বকফুলের বড়া

আপডেট টাইম : ১১:৫৭:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬

ময়মনসিংহে এক যুগ আগেও গৃহস্থের বাড়ির আঙিনায় দেখা মিলত বকফুল গাছের। ভোজনরসিক বাঙালির প্রতিটি ঘরে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের মাঝে খাবারে বিশেষ মাত্রা যোগ করত বকফুলের বড়া বা ভাজা বকফুল। এই ফুল খাবারের উপকরণ ছাড়া কোলাচার বা পূজায় ব্যবহারের নজির নেই। ঘর সাজাতে কিংবা নারীদের খোঁপায় ফুলের ব্যবহার দেখা গেলেও বকফুল সেখানে অনুপস্থিত। এ ফুলের কদর খাবারের উপকরণ বড়াতেই।

ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রতিবাড়িতেই বক ফুলের বড়া একটি প্রচলিত খাবার। চালের গুড়ার পেস্টকে পানি মিশিয়ে পাতলা করে এতে হলুদ ও লবন মিশিয়ে বকফুল চুবিয়ে বড়া করে তৈরি করা হয়। আকৃতিতে বকফুল গাছ বড় হয়। শীতে ফুল দেয়। অতিবৃষ্টিতে এই গাছ মারে যায়।

এক সময় ময়মনসিংহ অঞ্চলে এ ফুল বিক্রি হত না। সংগ্রহকারীরা ‘কুডা’ (বড় লাঠি) দিয়ে পেড়ে এফুল কুড়িয়ে সংগ্রহ করতেন। এখন মাঝে-মধ্যে এই ফুল বাজারে দেখা মেলে। ভালো দামেও তা বিক্রি হয়।

বক ফুল শিম ও মটর গোত্রীয় গাছ। কিন্তু গাছ দেখতে মোটেই শিম বা মটরের মত নয়। ফুলের গড়নের কিছুটা মিল থাকলেও পাতা ও গাছের সাথে কোন মিল নেই। তবে ধৈঞ্চা গাছের সাথে কিছুটা মিল আছে। বক ফুল গাছ ধৈঞ্চা গাছের চেয়ে বড় ও মজবুত।

অঞ্চল ভেদে এ গাছের অনেক নাম আছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বক, বকে, বগ, বকফুল, বগফুল, অগন্তা, অগাতি ইত্যাদি। তবে এ গাছটি বকফুল নামেই বেশি পরিচিত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বকফুল গাছ জন্মে, বিশেষ করে বাংলাদেশে।

বকফুলের উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম শেষবানিয়া গ্রেন্ডিফ্লোরা। ফুলের রং বকের মত সাদা বলেই হয়তো এর নামকরণ করা হয়েছে বকফুল। এদেশে তিন রংয়ের বকফুল দেখা যায়- সাদা, লাল, গোলাপী। লাল রংয়ের বকফুলের জাত এসেছে থাইল্যান্ড থেকে। এজন্য একে থাই বকফুল বলা হয়। বিভিন্ন দেশে বকফুল সব্জি হিসেবে খাওয়া হয়। সাধারণত না ফোটা ফুল সব্জি হিসেবে খাওয়া হয়। বাংলাদেশে বহুকাল থেকে বকফুল ভেজে খাওয়ার প্রচলন আছে। বকপাখির মত আকৃতি হওয়ায় হয়তো এর নামকরণ করা হয়েছে বকফুল।

অনেকগুলো ফুল সব্জির মত তেল, মরিচ, ও হলুদ ইত্যাদি দিয়ে রেঁধেও খাওয়া যায়। বকফুল গাছের প্রতিটি অংশই ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। জ্বর, ফোলা ও ব্যাথা বেদনা সারাতে এ গাছের মূল ব্যবহার করা হয়। বাতের ব্যথায় এ গাছের শিকড় চুর্ন জলের সাথে গুলে ব্যাথার জায়গায় ঘষলে বা লাগালে বা প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। এ গাছের বাকল বসন্ত রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে। চুলকানি ও পাঁচড়া সারাতে বাকল চুর্ণ ব্যবহার করা যায়। কৃমি ও জ্বর সাড়াতে এ গাছের পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায় বলে কবিরাজদের দাবি।

বাঙালির পরম্পরার খাবারের উপকরণ এই বকফুল আর আগের মত দেখা না মিললেও কদর কমেনি মোটেও।