জুমের পাহাড়ের ‘জুম্ম মরিচ’

জুমের মরিচ। মরিচকে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা নিজস্ব ভাষায়ও একাধিক নামে চিনে। তবে জুম্ম মরিচ বা জুমের মরিচ, ধান্য মরিচ বা ধানি মরিচ, চিকন মরিচ এই নামগুলো সবার কাছে পরিচিত। মরিচটি যেমনি ঝাল তেমনি স্বাদও অন্য মরিচের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। মরিচটি তরকারি বা সালাদে আলাদা স্বাদ তৈরি করে। মরিচটি আকারে ছোট। মরিচের ভেতরে দানার পরিমাণ বেশি। তবে এই মরিচের ঝাল অন্য মরিচের চেয়ে প্রায় ২/৩ গুণ বেশি।
পার্বত্যাঞ্চলের আদিবাসীদের কাছে মরিচটি বেশ জনপ্রিয়। এই মরিচের মৌসুমে অন্য মরিচ সাধারণত খেতে চায় তারা। স্থানীয় বাজারগুলোতে এই মরিচের দাম সাধারণ মরিচের  চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি থাকে। বর্তমানে এই মরিচ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকা।
পার্বত্য শহর গুলোতে আদিবাসীদের হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে সাধারণ মরিচের চেয়ে এই মরিচ দিয়ে বেশি রান্না করা হয়। এই মরিচরে স্বাদ বাঙালী ছাড়াও ভিনদেশি যাদের ধারণা আছে তারা খেতে যান এসব হোটেল রেস্টুরেন্টে।
এই মরিচের চাষ হয় জুমে। জুম হল আদিবাসীদের নিজস্ব কৃষি চাষ পদ্ধতি। উঁচু পাহাড়ে খাড়া ঢালে জুম চাষ হয়। এতে এক সঙ্গে ধান, মরিচ, আদা, হলুদ, তুলা, তিল, ভুট্টা,  মারফাসহ বিভিন্ন কৃষি দ্রব্য চাষ হয়।
ধানের সাথী ফসল হিসেবে এই মরিচের চাষ হয় বলে একে ধান্য বা ধানি মরিচ বলে থাকে। উঁচু পাহাড়ের মাটিতে কম পানিতেও বাঁচে এই মরিচের গাছটি। মার্চের শেষ দিকে-এপ্রিলের সারা মাসে জুমে দা দিয়ে গর্ত করে বীজ বোনা হয়। অনেকে বীজ জুমে ছিটিয়ে দেয়। দা দিয়ে মাটি খুড়ে বীজ বপন করলে বীজ থাকার নিশ্চয়তা থাকে। আর ছিটালে বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ঝোপযুক্ত গাছে মরিচগুলো উর্ধ্বমূখী বা খাড়া অবস্থায় থাকে। বীজ বপনের তিন চার মাসের মাথায় ফলন আসতে শুরু করে। সারা বছর এই মরিচটি পাওয়া গেলেও এপ্রিলে এই মরিচ কম ধরে বা ধরে না। এই মরিচ কাঁচা অবস্থায় সাদা ও সবুজ হয়। পাকলে লাল ও কমলা রঙের হয়। এই মরিচের রোগ ও পোকার আক্রমণ কম। সারও প্রয়োগ করতে হয় না। তবে বর্তমানে পাহাড়ের মাটির উর্বরতা কমায় জুম চাষীরা সার প্রয়োগ করে থাকেন।
যাদের বাড়ির আঙ্গিনায় ২/৩টি এই মরিচের গাছ থাকে তাহলে সেই পরিবারের জন্য সারা বছর মরিচের চিন্তা করতে হয় না। পুরো পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারে কয়েকটি মরিচের গাছ।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর