বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে বড় ভাইয়া আপুদের মুখে র্যাগ ডে’র কথা অনেক শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স শেষে একটা দিনে নাকি বন্ধু-বান্ধবী সবাই মিলে রঙ মাখামাখি করে, নাচানাচি করে, সারা ক্যাম্পাস জুড়ে হৈ হুল্লোড় করে বেড়ায়। এই গল্পগুলো শুনে মনে হতো এমন দিন কি আমার জীবনে আসবে। বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে এমন মজা করার সুযোগ কি আমি পাব।
বড় ভাইয়া-আপুদের কাছ থেকে এমন আরও অনেক মোটিভেশনাল কথা শুনে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণ হয় ২০১২ সালে। ‘খ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়ে ভর্তি হই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। এই বিভাগে ‘খ’ এবং ‘ঘ’ উভয় ইউনিট থেকেই ভর্তি হওয়া যায়। আমাদের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয় ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হই তখন সিনিয়র ভাইয়া-আপুদের র্যাগ ডে পালন করা দেখে মনে হতো কবে আমাদের র্যাগ ডে আসবে। আবার মনে হতো চার বছর তো অনেক সময়। কবে শেষ হবে গ্রাজুয়েশন। আর কবে করবো র্যাগ ডে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার পর দেখলাম সময় যেন খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কি করে যে চার বছর পার করে ফেললাম টেরই পেলাম না।
আর কয়েকদিন পরই আমাদের অষ্টম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। তাই জোরেসোরেই নেয়া হয় র্যাগ ডে’র প্রস্তুতি। দিন ঠিক করা হয় ২৮ নভেম্বর, সোমবার। যথাসময়ে সবার কাছ থেকে টাকাও তোলা হয়।
র্যাগ ডে নিয়ে কারও মধ্যে আগ্রহ কম ছিল না। ছেলে-মেয়ে সবার মধ্যে আলাদা রকমের আগ্রহ কাজ করছিলো। অবশ্য ড্রেস নিয়ে মেয়েদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা একটু বেশিই ছিল। কোন রঙের ড্রেস হবে, কাপড় কোথা থেকে কেনা হবে, কোথা থেকে বানানো হবে এসব নিয়ে বান্ধবীরা খুবই ব্যস্ত সময় পার করেছে।
সব প্রস্তুতি শেষে ২৮ নভেম্বর আমরা ক্লাসের সকলে একত্রিত হই আমাদের ডিপার্টমেন্টে। শুরু হয় উৎসব। সকলেই যার যার সাদা টি-শার্ট পরে নেয়। তারপর শুরু হয় টি-শার্টে লেখালেখি। কাপড়ের উপর লেখালেখির অনুশীলনটা এদিন সবাই ভালোভাবেই করে নিয়েছে। বন্ধু-বান্ধবীদের মনে যেসব কথা জমে ছিলো তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে টি-শার্টের উপর। অনেকের টি-শার্টে তো শেষমেশ লেখার জায়গাই ছিল না।
ডিপার্টমেন্ট থেকে এই পর্বটা সেরে সবাই প্রস্তুত হয় র্যালির জন্য। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে থেকে আমাদের র্যালি শুরু হয়। এখান থেকেই শুরু হয় রঙ মাখামাখির খেলা। ক্লাসের কিছু সংখ্যক বন্ধু-বান্ধবীর আগে থেকে নাচের অভ্যাস থাকলেও বেশিরভাগের নাচের অভ্যাস ছিল না। কিন্তু তাতে কী। এদিনই দেখা যায় সকলের নাচের প্রতিভা। নতুন নতুন ভঙ্গিতে ‘আয়রন বয়েজ অ্যান্ড লেডিদের’ নাচ দেখতে ভ্রাম্যমাণ দর্শকদেরও ছিল খুব আগ্রহ।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন থেকে শুরু করে ভিসি চত্ত্বর, জগন্নাথ হলের পাশ দিয়ে শহীদ মিনার হয়ে কার্জন হল এবং তারপর টিএসএসি এর পুরো পথটাই নেচে গেয়ে মুখর করে তুলেছিল ‘আয়রনরা’। ও বলে রাখি, আমাদের ডিপার্টমেন্টের সংক্ষিপ্ত নাম ‘আইআর’। আর সেমিস্টার পদ্ধতিতে আমরা সপ্তম ব্যাচ। তাই আমাদের ব্যাচের নাম আমরা রেখেছি আইআর অন সেভেন (আয়রন-সেভেন)।
লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।