ঢাকা ১২:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুরাকীর্তির ঐতিহ্যে বর্ণিল ‘খাদি উৎসব’২০১৬’ ৯ ডিসেম্বর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৬:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৬
  • ৪৩৩ বার

খাদি বা খদ্দর আমাদের অতি প্রাচীন বস্ত্র। তুলা থেকে সুতা হওয়ার পর বাড়তি অংশ দিয়ে চরকায় সুতা কেটে তাঁতে বুনন করা কাপড়কে খাদি বলা হয়। এখন আর এই খাদি কাপড় সেভাবে পাওয়া যায় না।

তবে আশার কথা হচ্ছে, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ সেই খাদি বা খদ্দরকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াসে এগিয়ে এসেছেন এই সময়ের ফ্যাশন ডিজাইনাররা। শুধু তাই নয়, চরকায় সুতা কাটা, অফহোয়াইট মোটা কাপড় আর অমসৃণ টেক্সচার- খাদি সম্পর্কে প্রচলিত এ ধারণা বদলেও দিয়েছেন তারা। রঙে, বাহারে আর উপস্থাপনায় খাদি এখন দারুণ উজ্জ্বল।

সেইসব বর্ণিল খাদি বস্ত্রের হাজারো পণ্য নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত হতে যাচ্ছে ‘খাদি উৎসব’২০১৬’। গত বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আগামী ০৯ ডিসেম্বর ঢাকায় এ উৎসবের আয়োজক ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশ।

গতবারের খাদি উৎসবে শখের হাঁড়ি, কাগজ কাটা, আলপনার মতো ঐতিহ্যবাহী লোকজ উপকরণগুলো আধুনিক সময়ের উপযোগী করে উপস্থাপন করেন তৃণমূলের শিল্পী ও শহুরে ডিজাইনাররা। টেকসই চিরন্তন ‘সবুজ’ বাংলাদেশি পণ্যকে তুলে ধরে তৃণমূলের শিল্পীদের সঙ্গে খাদি ক্রেতাদের সংযোগ স্থাপন করা হয়।

আর এবারের থিম হচ্ছে- ‘হেরিটেজ আর্কিটেকচার’।

সোনারগাঁওয়ের পানাম সিটি, রাজশাহীর বাঘা মসজিদ, দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির, নওগাঁর পাহাড়পুরসহ ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন স্থাপনার গায়ে আদি নকশা আছে। এবার সেগুলোকে নানাভাবে কাপড়ে উপস্থাপন করে খাদি উৎসবে অংশ নিতে যাচ্ছেন ডিজাইনাররা।

পাশাপাশি এবারের উৎসবটি আন্তর্জাতিক রূপও পাচ্ছে, যা বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া ও আশিয়ান দেশগুলোর ঐতিহ্যের বস্ত্রশিল্পের সংযোগ ঘটাবে। বাংলাদেশি ছাড়াও এ দু’অঞ্চলের চার দেশের ফ্যাশন ডিজাইনাররা অংশ নিতে আসবেন খাদি উৎসবকে আরও বর্ণিলভাবে রাঙাতে।

এবারের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন মোট ২৪ জন ডিজাইনার। এর মধ্যে ১৭ জন বাংলাদেশি ছাড়াও ভারত থেকে চারজন এবং নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়া থেকে একজন করে অংশ নিচ্ছেন।

খাদি উৎসবে অংশ নেওয়া দেশি ১৭ জন ডিজাইনার হচ্ছেন- মাহিন খান, এমদাদ হক, চন্দনা দেওয়ান, লিপি খন্দকার, বিপ্লব সাহা, মুমু মারিয়া ইসলাম, শৈবাল সাহা, ফারাহ্‌ আনজুম বারী, কুহু, শাহরুখ আমিন, নওশিন খায়ের, হুমায়রা খান, তেনজিং চাকমা, ফারাহ্‌ দিবা, ফায়জা আহমেদ, রিফাত রেজা রাকা ও উর্মি। আর দেশের বাইরে থেকে আসছেন ৭ জন- কারিশমা খান, অনুজ শর্মা, গৌরব গুপ্ত ও মায়াঙ্ক শ্রদ্ধা নিগম(ভারত), সোনালি ধর্মওয়ার্দেনা (শ্রীলংকা), এডরিক অং (মালয়েশিয়া) এবং অ্যান্টি গুরুং (নেপাল)।

উৎসবের আয়োজক ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহিন খান বলেন, ‘খাদি হচ্ছে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। চরকা কাটা সুতা এবং হ্যান্ডলুমে তৈরি হয় খাদি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে খাদির ব্যবহার বেড়েছে। আমাদের এখানে হয়েছে ঠিক উল্টোটা। অথচ খাদি কাপড় শতভাগ পরিবেশবান্ধব’।mahin-khan-final

‘বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যকে ঘিরেই আমাদের কাজ। আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে যেই খাদি কাপড় তার মূল্য ও মর্যাদা শুধু আমরাই বুঝবো। সেজন্যই এবার দ্বিতীয়বারের মতো খাদি উৎসবের আয়োজন করেছি আমরা’।

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতের কাপড় কেমন হওয়া উচিত’ সেটা নিয়েই ভাবনা আমাদের। চরকায় কিভাবে আরো মিহি সুতা কাটা যায় এবং সুতার মান কিভাবে আরো উন্নত করা যায়, এ নিয়ে দেশে-বিদেশে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। এসব তুলে ধরে ঐতিহ্যের সেই খাদির পুনরুজ্জীবনই আমাদের লক্ষ্য’।

আয়োজকরা জানান, এক সময় খাদি কাপড় বলতে কেবল শালই ছিল। রং ছিল অফহোয়াইট। খাদি এখন বর্ণিল। শালের গণ্ডি পেরিয়ে শাড়ি, কামিজ, পনচো, টপ, কুর্তা, গাউন, লং জ্যাকেট, কামিজ, পাঞ্জাবি, কটি- সবই তৈরি হচ্ছে খাদি কাপড় দিয়ে। নানা রঙে, নানা শেডে।

খাদি উৎসবে এবারও খাদির সেসব ভিন্ন ভিন্ন রূপ, বহুমাত্রিক ব্যবহার আর নানা ভাবনা তুলে ধরবেন ডিজাইনাররা। বিশেষ করে এবারের মোটিফ, প্যাটার্ন, রং- সবই নিয়েছেন বাংলাদেশেরই পুরাকীর্তির ঐতিহ্য থেকে।

‘খাদি তৈরিতে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে চাই আমরা, যেন আরো উন্নতমানের খাদি কাপড় তৈরি করা যায়, যা সারা বছরই পরা যাবে। এতে ক্রেতাদেরও যেমন লাভ হবে, খাদি শিল্পীরাও তেমনি প্রণোদনা পাবেন। আর খাদির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকেই তুলে ধরা যাবে’- যোগ করেন খাদি উৎসবের আয়োজক মাহিন খান।

এবারের উৎসবে সহায়তা দিচ্ছে বেঙ্গল, গ্রিন ডেল্টা, ত্রিশেমি, স্কয়ার, সিটি ব্যাংক, কাজী চা, সেইলর, বিএমডব্লিউ, দ্য ওয়ে ঢাকা হোটেল, পিজা হাট এবং প-শ-মি সোয়েটারস্‌।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

পুরাকীর্তির ঐতিহ্যে বর্ণিল ‘খাদি উৎসব’২০১৬’ ৯ ডিসেম্বর

আপডেট টাইম : ১১:২৬:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

খাদি বা খদ্দর আমাদের অতি প্রাচীন বস্ত্র। তুলা থেকে সুতা হওয়ার পর বাড়তি অংশ দিয়ে চরকায় সুতা কেটে তাঁতে বুনন করা কাপড়কে খাদি বলা হয়। এখন আর এই খাদি কাপড় সেভাবে পাওয়া যায় না।

তবে আশার কথা হচ্ছে, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ সেই খাদি বা খদ্দরকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াসে এগিয়ে এসেছেন এই সময়ের ফ্যাশন ডিজাইনাররা। শুধু তাই নয়, চরকায় সুতা কাটা, অফহোয়াইট মোটা কাপড় আর অমসৃণ টেক্সচার- খাদি সম্পর্কে প্রচলিত এ ধারণা বদলেও দিয়েছেন তারা। রঙে, বাহারে আর উপস্থাপনায় খাদি এখন দারুণ উজ্জ্বল।

সেইসব বর্ণিল খাদি বস্ত্রের হাজারো পণ্য নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত হতে যাচ্ছে ‘খাদি উৎসব’২০১৬’। গত বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আগামী ০৯ ডিসেম্বর ঢাকায় এ উৎসবের আয়োজক ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশ।

গতবারের খাদি উৎসবে শখের হাঁড়ি, কাগজ কাটা, আলপনার মতো ঐতিহ্যবাহী লোকজ উপকরণগুলো আধুনিক সময়ের উপযোগী করে উপস্থাপন করেন তৃণমূলের শিল্পী ও শহুরে ডিজাইনাররা। টেকসই চিরন্তন ‘সবুজ’ বাংলাদেশি পণ্যকে তুলে ধরে তৃণমূলের শিল্পীদের সঙ্গে খাদি ক্রেতাদের সংযোগ স্থাপন করা হয়।

আর এবারের থিম হচ্ছে- ‘হেরিটেজ আর্কিটেকচার’।

সোনারগাঁওয়ের পানাম সিটি, রাজশাহীর বাঘা মসজিদ, দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির, নওগাঁর পাহাড়পুরসহ ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন স্থাপনার গায়ে আদি নকশা আছে। এবার সেগুলোকে নানাভাবে কাপড়ে উপস্থাপন করে খাদি উৎসবে অংশ নিতে যাচ্ছেন ডিজাইনাররা।

পাশাপাশি এবারের উৎসবটি আন্তর্জাতিক রূপও পাচ্ছে, যা বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া ও আশিয়ান দেশগুলোর ঐতিহ্যের বস্ত্রশিল্পের সংযোগ ঘটাবে। বাংলাদেশি ছাড়াও এ দু’অঞ্চলের চার দেশের ফ্যাশন ডিজাইনাররা অংশ নিতে আসবেন খাদি উৎসবকে আরও বর্ণিলভাবে রাঙাতে।

এবারের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন মোট ২৪ জন ডিজাইনার। এর মধ্যে ১৭ জন বাংলাদেশি ছাড়াও ভারত থেকে চারজন এবং নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়া থেকে একজন করে অংশ নিচ্ছেন।

খাদি উৎসবে অংশ নেওয়া দেশি ১৭ জন ডিজাইনার হচ্ছেন- মাহিন খান, এমদাদ হক, চন্দনা দেওয়ান, লিপি খন্দকার, বিপ্লব সাহা, মুমু মারিয়া ইসলাম, শৈবাল সাহা, ফারাহ্‌ আনজুম বারী, কুহু, শাহরুখ আমিন, নওশিন খায়ের, হুমায়রা খান, তেনজিং চাকমা, ফারাহ্‌ দিবা, ফায়জা আহমেদ, রিফাত রেজা রাকা ও উর্মি। আর দেশের বাইরে থেকে আসছেন ৭ জন- কারিশমা খান, অনুজ শর্মা, গৌরব গুপ্ত ও মায়াঙ্ক শ্রদ্ধা নিগম(ভারত), সোনালি ধর্মওয়ার্দেনা (শ্রীলংকা), এডরিক অং (মালয়েশিয়া) এবং অ্যান্টি গুরুং (নেপাল)।

উৎসবের আয়োজক ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহিন খান বলেন, ‘খাদি হচ্ছে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। চরকা কাটা সুতা এবং হ্যান্ডলুমে তৈরি হয় খাদি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে খাদির ব্যবহার বেড়েছে। আমাদের এখানে হয়েছে ঠিক উল্টোটা। অথচ খাদি কাপড় শতভাগ পরিবেশবান্ধব’।mahin-khan-final

‘বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যকে ঘিরেই আমাদের কাজ। আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে যেই খাদি কাপড় তার মূল্য ও মর্যাদা শুধু আমরাই বুঝবো। সেজন্যই এবার দ্বিতীয়বারের মতো খাদি উৎসবের আয়োজন করেছি আমরা’।

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতের কাপড় কেমন হওয়া উচিত’ সেটা নিয়েই ভাবনা আমাদের। চরকায় কিভাবে আরো মিহি সুতা কাটা যায় এবং সুতার মান কিভাবে আরো উন্নত করা যায়, এ নিয়ে দেশে-বিদেশে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। এসব তুলে ধরে ঐতিহ্যের সেই খাদির পুনরুজ্জীবনই আমাদের লক্ষ্য’।

আয়োজকরা জানান, এক সময় খাদি কাপড় বলতে কেবল শালই ছিল। রং ছিল অফহোয়াইট। খাদি এখন বর্ণিল। শালের গণ্ডি পেরিয়ে শাড়ি, কামিজ, পনচো, টপ, কুর্তা, গাউন, লং জ্যাকেট, কামিজ, পাঞ্জাবি, কটি- সবই তৈরি হচ্ছে খাদি কাপড় দিয়ে। নানা রঙে, নানা শেডে।

খাদি উৎসবে এবারও খাদির সেসব ভিন্ন ভিন্ন রূপ, বহুমাত্রিক ব্যবহার আর নানা ভাবনা তুলে ধরবেন ডিজাইনাররা। বিশেষ করে এবারের মোটিফ, প্যাটার্ন, রং- সবই নিয়েছেন বাংলাদেশেরই পুরাকীর্তির ঐতিহ্য থেকে।

‘খাদি তৈরিতে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে চাই আমরা, যেন আরো উন্নতমানের খাদি কাপড় তৈরি করা যায়, যা সারা বছরই পরা যাবে। এতে ক্রেতাদেরও যেমন লাভ হবে, খাদি শিল্পীরাও তেমনি প্রণোদনা পাবেন। আর খাদির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকেই তুলে ধরা যাবে’- যোগ করেন খাদি উৎসবের আয়োজক মাহিন খান।

এবারের উৎসবে সহায়তা দিচ্ছে বেঙ্গল, গ্রিন ডেল্টা, ত্রিশেমি, স্কয়ার, সিটি ব্যাংক, কাজী চা, সেইলর, বিএমডব্লিউ, দ্য ওয়ে ঢাকা হোটেল, পিজা হাট এবং প-শ-মি সোয়েটারস্‌।