দেশীয় টিভিনাটকের সেই সমৃদ্ধ দিনগুলি ফুরিয়ে গেছে আগেই, বর্তমান সময়ে চ্যানেলে চ্যানেলে মানহীন নাটকের ছড়াছড়ি। দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে টিভিনাটক থেকে। গোঁজামিল গল্প, খাপ ছাড়া সংলাপ, অনুপযোগী দৃশ্যধারণ, যোগ্য শিল্পীদের অবমূল্যায়নে টিভি নাটকের অবস্থা আজ সংকটাপন্ন। ইদানিংকালের চ্যানেলগুলোর বিদেশি সিরিয়ালপ্রীতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে এই সংকটের কথা।
অশুভ এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আন্দোলনে নেমেছেন নাট্যাঙ্গনের অনেকেই। উত্থাপন করছেন দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় দাবি। সমসাময়িক টেলিভিশন নাটকের এ অবস্থা প্রসঙ্গে পূর্বপশ্চিম’র কথা বলেন গুণী অভিনেত্রী ও নির্মাতা অরুণা বিশ্বাস। তার বক্তব্যে ওঠে আসে ক্ষোভ আর হতাশা।
অরুণা বিশ্বাস বলেন, ‘টিভি নাটকের কথা আমি কি বলবো? আমাদের বলার মত কোনো অবস্থা আছে? এখন তো সবাই অভিভাবক। সবাই কর্তা। কে কার কথা শুনবে? যখন যে সরকার আসে, তখন তাদের লোকজনই নাট্যাঙ্গন দখল করে নেয়। রাতারাতি হয়ে যায় নাটকের অভিভাবক। এসব অনেক আগে থেকেই চলছে। বন্ধ করবে কে?’
তিনি আরো বলেন, ‘কিছুদিন পর আমাদের ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে নামতে হবে। আমাকে কিংবা আমার মত কয়েকজনকে হয়ত নামতে হবে না, কিন্তু, অনেকের অবস্থাই শোচনীয় হয়ে দাঁড়াবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের গুণি কয়েকজন শিল্পীকে বিভিন্ন সংগঠন অনুদান দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে অরুণা বিশ্বাস তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘শিল্পীদের অনুদান দিতে হবে কেন? শিল্পীরা কি ভিক্ষুক? তাদের ভিক্ষা দেয়া হয় কেন? আমার কথা হচ্ছে, শিল্পীদের তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়া হোক। উপযুক্ত মূল্যায়ন করা হোক। একজন শিল্পী দেশের জন্য, দেশের সংস্কৃতির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে যাবেন, আর একটা সময়ে এসে তাকে ভিক্ষা চাইতে হবে। এটা কেন?’
ব্যক্তিগত উদাহরণ টেনে তিনি আরো বলেন, ‘শিল্পীদের মূল্যায়ন এ দেশে কখনই হয়নি। আমার বাবা-মা এ দেশের সংস্কৃতির জন্য কম করেছে? কিন্তু কি পেয়েছে? নতুনদের কেউ তাদেরকে চেনেই না। যখন কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে আপনার বাবার নাম কি? তখন কি বলার থাকে? আমার বাবার মূল্যায়ন যদি সঠিকভাবে হতো, তাহলে আজ এমন প্রশ্নের সম্মুখীন আমাকে হতে হতো না। এটাই আমাদের মূল সমস্যা। আমরা তো আমাদের গুরুজনদেরই ভুলে যাচ্ছি। কিভাবে সামনে এগিয়ে যাবো?’
প্রত্যেকটা দেশ বিশ্বদরবারে পরিচিত হয় তার নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমে। আমাদের গৌরবময় সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ইতিহাস আছে। নাটকের ক্ষেত্রেও আছে আমাদের জৌলুসপূর্ণ স্বর্ণালী অতীত। দিন দিন সেসব হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম জানতেই পারছে না তাদের শেকড়। অথচ, শেকড় বিহীন সম্মুখে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব।