পেশাগত জীবনে অন্যসব সেক্টরের মতোই পুলিশ বিভাগে কর্মরত নারী সদস্যরাও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। উপপরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের শতকরা ৩ ভাগ এ ধরনের ঘটনার শিকার হলেও নারী কনস্টেবলদের মধ্যে ১০ ভাগের বেশি সদস্য যৌন হয়রানির শিকার হন। ক্যাডার পর্যায়ের নারী পুলিশরাও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বাইরে নন।
এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের (সিএইচআরআই)।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও সিএইচআরআই আয়োজিত ‘সমতার কঠিন পথে বাংলাদেশের নারী পুলিশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক নারী পুলিশ যৌন হয়রানির শিকার হলেও অভিযোগ দায়ের করা হয় না। কারণ নারী পুলিশ সদস্যদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে পুরুষ কর্মকর্তারা সংবেদনশীল নন।
এতে বলা হয়, পুলিশ বিভাগ নারীদের কাজ করার জন্য একটি ভালো জায়গা। যেখানে দিন দিন নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে পুলিশ বিভাগে নারী সদস্য ১১ হাজার ৩৮ জন। এটি পুলিশের মোট জনবলের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পদে মাত্র একজন নারী আছেন। এ ছাড়া পুলিশের জ্যেষ্ঠ পদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব কম। নেতৃত্ব ও মাঠপর্যায়ের ব্যবহারিক ভূমিকা থেকে তাদের দূরে রাখা হয়।
গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পুলিশ বিভাগে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ জেন্ডার নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের (সিএইচআরআই) পরিচালক মায়া দারুওয়ালা বলেন, পুলিশ হলো ইউনিফর্ম পরা নাগরিক। জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী হওয়ায় পুলিশ বিভাগেও নারীদের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। এ জন্য তাদের প্রয়োজনীয় যাতায়াত-সুবিধা, মাতৃত্বকালীন সেবা নিশ্চিত করা এবং যৌন হয়রানির বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। পুলিশ বিভাগে নারী-পুরুষের সমতা বিধান করা হলে সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে।
গোল টেবিল বৈঠকে বাংলাদেশের শিক্ষিত নারীদের নিয়ে সম্প্রতি করা এক জরিপের তথ্য উল্লেখ করে জাতিসংঘের নারীবিষয়ক আঞ্চলিক প্রতিনিধি ক্রিস্টিন হান্টার দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের অধিকাংশ নারী সদস্য এখন শুধু ডেস্ক কেন্দ্রিক নন, থানাতেও কাজ করতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (লজিস্টিকস অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) ও বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন্স নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) সভাপতি মিলি বিশ্বাস বলেন, একটা সময় পুরুষ সহকর্মীরা পুলিশে নারীর অংশগ্রহণকে নেতিবাচক হিসেবে দেখলেও সে মনোভাবের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।
সভাপতির বক্তব্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, জনগণ পুলিশের কাছে আস্থা চায়। আস্থা পেলে সেখানে নারী-পুরুষ আলাদা কোনো বিষয় নয়। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে নারী পুলিশরা দক্ষতার সঙ্গে তাদের কাজ করতে পারেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন সিএইচআরআইর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার অদিতি দত্ত, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সালমা আলী, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফওজিয়া খন্দকার, বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক অ্যাঞ্জেলা গোমেজ, নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক রওশন আরা, জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক তহবিলের জেন্ডার বিশেষজ্ঞ শামীমা রহমান প্রমুখ।