এই গাছগুলো ছিল বন বেগুনের চারা। এক ধরনের আগাছা। বনের মধ্যেই জন্ম। কোনো কাজে লাগে না। সেই বেগুনের চারার সঙ্গে টমেটো গাছের চারা কলম করে চাষ করা হচ্ছে শীতের সবজি টমেটো। এই পদ্ধতিতে টমেটোর ফলনও দ্বিগুন। কুমিল্লা নগরীর বজ্রপুর এলাকার বাসিন্দা মো. ইসমাইল তার বাসার ছাদে এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করছেন। তার দেখাদেখি এলাকার আরও অনেকেই এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ শুরু করেছেন।
ইসমাইল হোসেন দীর্ঘদিন দুবাইতে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেছেন। দেশে ফিরে তার বাসার ছাদে এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ শুরু করেন। সিলেটের পাহাড়ি এলাকা থেকে বন বেগুনের বীজ সংগ্রহ করে প্রথমে চারা দেন। চারাগুলো পলি ব্যাগে এক মাস রাখার পর উন্নত জাতের টমেটোর চারার সঙ্গে কলম করেন। এর ২০ থেকে ২৫ দিন পর কলম করা চারা রোপন করেন। এই পদ্ধতিতে চাষ করা টমেটোর তিনি নাম দিয়েছেন ‘বেকার টমেটো’।
শুরুর দিকে বাসার ছাদে ডাটা, লাউ, পুঁইশাক চাষ করলেও পরে ইসমাইল হোসেন টমেটো চাষ শুরু করেন। বর্তমান তার ছাদ জুড়েই টমেটো গাছ। পাঁচ তলা বাড়ির ছাদে ইট-মাটি দিয়ে বেড তৈরি করে তাতে বেকার টমেটোর চাষ করছেন। নিজেই গাছের পরিচর্যা করেন। সব গাছেই ভালো ফলন হয়েছে। শীতের শুরুতেই পাঁকতে শুরু করেছে এই টমেটো।
ইসমাঈল জানান, তিনি দুবাইতে নিরাপত্তা বাহিনীতে কাজ করতেন। দেশে ফিরে এসে ব্যবসায় নিয়োজিত হন। পাশাপাশি বাসার ছাদে সবজি চাষ শুরু করেন। তবে বর্তমানেই টমেটো চাষেই মন দিয়েছেন তিনি।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, টমেটো বর্ষাকালে নষ্ট হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বন বেগুনের (এক ধরনের আগাছা জাতীয় গাছ) সঙ্গে কলম করলে বর্ষায় আর গাছ নষ্ট হবে না। এ চারা থেকে বেশি ফলন পাওয়া যায়। গাছে রোগের আক্রমণ কম হয়। তার কাছ থেকে চারা নিয়ে প্রতিবেশীরাও বাসার ছাদে এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করছে বলে জানান ইসমাইল।
‘বেকার টমেটো’র নামকরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসমাইল হোসেন বলেন, বন বেগুন এক ধরনের আগাছা। কোনো কাজে লাগে না। বনের মধ্যেই ‘বেকার’ পড়ে থাকে। তাই এই নামকরণ।
চাষ পদ্ধতি
এক মাস বয়সী বন বেগুনের চারা পলি ব্যাগে নিতে হবে। সেখানে এক মাস রাখার পর উন্নত জাতের এক মাস বয়সী টমেটোর সঙ্গে কলম করতে হবে। তারপর কলম করা চারা ২০ থেকে ২৫দিন পর রোপন করতে হবে। সাধারণ টমেটো গাছ থেকে দুই থেকে তিন কেজি টমেটো হলেও কলম করা টমেটো গাছ থেকে দ্বিগুন ফলন পাওয়া যায়।
হর্টিকালচার সেন্টার কুমিল্লার উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ইসমাঈল সাহেবের ছাদের টমেটো বাগান পরিদর্শন করেছি। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। অন্যরাও এরকম করে ছাদে টমেটো ও সবজি চাষ করে বিষমুক্ত সবজি পেতে পারেন।’