ভদ্রলোক চলছেন মোটরসাইকেলে। এর মধ্যে একটি কল এল তার মোবাইল ফোনে। মোটরসাইকেল চালাতে চালাতেই তিনি পকেট থেকে বের করলেন ফোনটি। চলছে তার মোটরসাইকেল, চলছে কথা। একপর্যায়ে কথা শেষ হলো, পকেটে ফোনটা তিনি রাখলেন, বাড়ল মোটরসাইকেলের গতি।
আধুনিক জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে গেছে মোবাইল ফোন। যোগাযোগের জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে ছোট্ট এই যন্ত্রটি। কিন্তু এই যন্ত্রটির ব্যবহারও কখনো কখনো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে ব্যবহারকারীদের অসচেতনতায়।
প্রায়ই দেখা মেলে গাড়ি চালাতে চালাতে মানুষ কথা বলছে মোবাইল ফোনে, রাস্তা পারপারের সময়ও একই দৃশ্য চোখে পড়ে। যেন সময়ের বড়ই অভাব। নিরাপদে পাড়ি দিয়ে পরে কথা বলা যায়-এই বিষয়টি যেন গুরুত্বই পাচ্ছে না এদের কাছে। রেললাইন ধরে আনমনে ফোনে কথা বলতে বলতে হেঁটে চলা মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম না। এই সেদিন রাজধানীতে এভাবে কথা বলতে বলতে ট্রেনের হুইসেল না শুনে এক তরুণের মৃত্যুর খবর এসেছে গণমাধ্যমে। তারপরও টনক নড়ছে না অন্যদের।
গাড়ি চালানো অবস্থায় ফোনে কথা বলা নিষেধ হলেও সেভাবে ব্যবস্থাও নিচ্ছে না পুলিশ। মাঝেমধ্যে পুলিশ সদস্যদেরই এই কাজ করতে দেখা যায়।
প্রায়ই দুর্ঘটনার পর গণমাধ্যমে খবর আসে, চালক ফোনে কথা বলতে বলতে আনমনা হয়ে পড়েছেন। যাত্রীরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও চালকরা পাত্তা দেন না বলে অভিযোগ আছে। প্রায়শ চালকরা মোবাইলে কথা বলছেন আর গাড়ি চালাচ্ছে এবং হঠাৎ হঠাৎ জোরে ব্রেক কষছেন, আর গাড়ির অন্য আরোহীরা হুমড়ি খেয়ে এদিক ওদিক ছিটকে পড়ছেন।
অথবা একটি গাড়ি ফাঁকা রাস্তা পেয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে, হঠাৎই চালক লক্ষ করলেন ঠিক তার গাড়ির সামনেই মোবাইলে কথা বলায় ব্যস্ত কোনো পথচারী… ব্যস, হয় কষে ব্রেক, নয়তো দুর্ঘটনা।
মোশাররফ নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবীকে মগবাজার এলাকায় মোবাইল ফোনে কথা বলা অবস্থায় রাস্তা পার হতে দেখা গেল। এ সময় দ্রুতগামী গাড়িগুলো চলছিল। এই অবস্থায় ফোনে কথা না বললে হতো না?- জানতে চাইলে ওই পথচারী বলেন, ‘জরুরি একটা কল ছিল, আর অফিসে যাওয়ার সময়ও চলে যাচ্ছে। অফিসে যেতে দেরি হলে চাকরিতে সমস্যা হবে। তাই বাধ্য হয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছিলাম।’
‘দুই এক মিনিট দেরি করে তারপর রাস্তা পার হতেন’- এই মন্তব্যের জবাবে ওই পথচারী বলেন, ‘আসলেই এমনটা না করলেও পারতাম।’
পথচারীদের এই প্রবণতায় বিরক্ত বলাকা বাসের চালক আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘যারা মোবাইলে কতা কওয়ার সময় রাস্তা পারায়, হেনা হরেন দিলেও শুনে না। মাঝেমধ্যে হাড বেরেক মারতে হয়। এই সময় আবার যাত্রীরা চিল্লাচিল্লি করে’।
প্রায়ই হার্ডব্রেক কষার সময় পেছনের গাড়িগুলো তা বুঝতে পারে না এবং এ কারণে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় বলেও জানান এই বাস চালক।
মগবাজারের ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা শামীম বলেন, ‘মোবাইল ফোন বা হেডফোন কানে দিয়ে রাস্তা পারাপারের বিরুদ্ধে কোন আইন না থাকায়, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনধরনের আইনি পদক্ষেপ নিতে পারি না।’
কোন গাড়ির চালক যদি গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহর করে, তাদেরকে জরিমানা করা হয় বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তবে এই সংখ্যা খুব বেশি নয় বলে স্বীকার করেন তিনি।