চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হওয়ার জন্য আফ্রো-আমেরিকান, ল্যাটিন ও তরুণ ভোটারদের সেভাবে আকৃষ্ট করতে পারেননি ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ২টায় হিলারি তাঁর পরাজয় মেনে নেন। একই সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ অর্থাৎ উল্টা-পাল্টা বক্তব্যের জন্য পটু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন হিলারি।
তবে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত হিলারি জয়ের ব্যাপারে ভীষণ আশাবাদী ছিলেন। ভোটেল ফল শেষে বিজয় ভাষণের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন তিনি। এমন কিছু অঙ্গরাজ্যে হিলারি পরাজিত হন যেগুলোতে সহজেই তাঁর জয় পাওয়ার কথা ছিল। উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানে হিলারি ক্লিনটনের পরাজয় কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না।
এক্সিট পুলে দেখা যায়, মার্কিন মুলুকজুড়েই তিনি বারাক ওবামার চেয়ে খারাপ করেছেন। আফ্রো-আমেরিকান, মেক্সিকান ও সর্বোপরি অভিবাসীদের নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেয়ার পরও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাক্সে এবার ২০১২ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনির চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিন আমেরিকানদের ভোট বেশি পড়েছে।
২০১২ সালে ডেমোক্রেটপ্রার্থী বারাক ওবামা নানা আবেদন নিবেদনের মাধ্যমে আফ্রো-আমেরিকান, ল্যাটিনদের ওপর ভর করে হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় বারের মতো ঢোকতে পেরেছিলেন। তবে এ জন্য তাকে নানা কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছিল তাকে। এবার হিলারির পক্ষে বারাক ওবামা প্রচারাভিযান চালালেও শেষ পর্যন্ত ফলাফল হিলারির অনুকুলে আাসেনি। তবে সামগ্রিকভাবে হিলারি এই গোষ্ঠীকে আস্থায় আনতে পরেননি যেমনটা ওবামা পেরেছিলেন।বুধবার সকালে এক্সিট পুলে দেখা যায়, এবার ৮৮ ভাগ আফ্রো-আমেরিকান ভোটার হিলারিকে ভোট দিয়েছে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়েছে ৮ ভাগ ভোটার এবং ২০১২ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি এই গোষ্ঠীর ভোট পেয়েছিলেন ট্রাম্পের চেয়ে একভাগ কম অর্থাৎ ৭ ভাগ। তবে বারাক ওবামা হিলারির চেয়ে অনেক বেশি ভোট পেয়েছিলেন অর্থাৎ ওবামা পেয়েছিলেন ৯৩ ভাগ।
এছাড়া প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে হিলারির। পপুলার ভোটের হিসাবে হিলারির চেয়ে মাত্র সাড়ে চার লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন ট্রাম্প। এবার ১২ ভাগ আফ্রো-আমেরিকান ভোটার ভোট কেন্দ্রে গিয়েছেন এবং ২০১২ সালে এই গোষ্ঠীর ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী ছিলেন। গতবার ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার হার ছিল তাদের ১৩ ভাগ।
মেক্সিকো সীমান্তে উঁচু দেয়াল নির্মাণ থেকে শুরু করে অভিবাসীদের বিতাড়িত করা, মুসলিমদের আমেরিকায় ঢুকতে নো দেয়াসহ নানা বেপরোয়া মন্তব্যের পরও মাত্র ৬৫ ভাগ ল্যাটিন আমেরিকান হিলারিকে সমর্থন করেছেন এবং এতো কিছুর পরও ল্যাটিন আমেরিকানদের মধ্যে ২৯ ভাগ ট্রাম্পকে ভোট দেন। ২০১২ সালে ওবামা এই অংশটি ৭১ ভাগ ভোট আদায় করতে পেরেছিলেন। মিট রমনি পেরেছিলেন ২৭ ভাগ ভোটারের সমর্থন আদায় করতে।
তাছাড়া হিলারি একজন নারী প্রার্থী। অতীতে কোনো নারীকে প্রেসিডেন্ট করার ইতিহাস নেই আমেরিকায়। ভোটাররা এ নিয়ে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন বলেই মনে হচ্ছে। নারী হিসাবে হিলারি ক্লিনটন যে একমাত্র যোগ্য প্রার্থী-সে সম্পর্কে জনগণের কাছে ইতিবাচক কোনো ইমেজ তুলে ধরতে পারেননি তিনি সেভাবে। এছাড়া হিলারি সম্পর্কে নানা সময়ে ট্রাম্পের বাজে মন্তব্য করে জনসমর্থন আদায় করার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প। শেষঅবদি তা কাজেও লেগেছে।
এছাড়া তরুণ ভোটারদের ওপরও ভর করেছিলেন হিলারি। সেখানেও সুবিধা করতে পারেননি হিলারি। ১৮ থেকে ২৯ বছর বসয়ী তরুণদের মাত্র ৫৪ ভাগ হিলারিকে, ৩৭ ভাগ ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। অথচ ২০১২ সালে বারাক হোসেন ওবামা ৬০ ভাগ এবং মিট রমনি পেয়েছিলেন ৩৭ ভাগ ভোটার।