ঢাকা ১২:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওর এলাকায় ৪৬ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:১৬:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৬
  • ১১২৭ বার

হাওর এলাকায় ৪৬ প্রজাতির মাছ সংকটাপন্ন, আধা সংকটাপন্ন ও বিলুপ্তির তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে কিছু মাছ একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হাওরের মাছ রক্ষা ও উৎপাদন বাড়াতে পরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন।জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় একটি জরিপ চালানো হয়। জরিপের ফল অনুযায়ী তখন হাওরে ১৪৭ প্রজাতির মাছ ছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে ৪৬ প্রজাতির মাছ সংকটাপন্ন, খুবই সংকটাপন্ন ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ৪৬ জাতের মধ্যে ৩২ প্রজাতির ছোট মাছ রয়েছে। ছোট মাছের মধ্যে মধু পাবদা, ছোট পাবদা, বোথালি ও রানি একেবারে পাওয়া যাচ্ছে না। বড় মাছের মধ্যে নানিদ, কাজলী, পাঙ্গাশ এখন হাওরে নেই। গত দুই বছরে হাওরে মহাশোল দেখা যায়নি।

একসময় সুরমা নদীতে পাঙ্গাশ পাওয়া গেলেও এখন নদী-হাওর কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। হাওরের জলমহাল ব্যবস্থাপনা ও মাছ ধরার সঙ্গে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে জড়িত আছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্বপাগলা ইউনিয়নের দেখার হাওরপারের গ্রাম ইনাতনগরের আবদুল করিম (৭০)। তিনি জানান, একসময় হাওরে প্রচুর মাছ ছিল। দিনে দিনে কমছে। অনেক মাছের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। হাওরের সুস্বাদু গনিয়া ও রুই মাছ এখন কমে গেছে। এ জন্য তিনি ইজারা নীতিমালা না মানা, অবাধে পোনা নিধন ও মাছের অতি আহরণকে দায়ী করেন।

সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের আবদুল্লাপুর গ্রামের মানিক মিয়া (৬০) বলেন, ‘হাওরের মাছ রক্ষা করতে হলে ডিম ছাড়ার সময় থেকে পোনা বড় হওয়া পর্যন্ত কোনাজাল, কারেন্ট জালসহ সব ধরনের ঘন জালের ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।’সুনামগঞ্জ শহরের চারজন শিক্ষিত তরুণ মুজাম্মেল হক, সৈয়দ মুহাম্মদ মনোয়ার, হেলাল আহমদ ও দেওয়ান গণিউল সালাদীন ১৫ বছর আগে জলমহাল ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত হন। দেখার হাওরে পরিবেশসম্মত জলমহাল ব্যবস্থাপনায় ২০০৭ সালে তাঁরা জাতীয় পুরস্কার পান। আলাপকালে তাঁরা জানান, জলমহাল নীতিমালায় আছে, প্রথম দুই বছর বিলের উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মাছের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে ইজারাদারকে। দুই বছর কোনো মাছ ধরা যাবে না। মাছ ধরতে হবে তৃতীয় বছরে। কিন্তু বাস্তবে এটা মানা হচ্ছে না। হেলাল আহমদ বলেন, ‘জলমহালে প্রতিবছর মাছ ধরা বন্ধ করে পাইল ফিশারিজের নিয়ম (তিন বছরের) মানলেই হাওরে আবার মাছের উৎপাদন বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে সংকটাপন্ন মাছগুলোও রক্ষা পাবে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হাওর এলাকায় ৪৬ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে

আপডেট টাইম : ০৩:১৬:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

হাওর এলাকায় ৪৬ প্রজাতির মাছ সংকটাপন্ন, আধা সংকটাপন্ন ও বিলুপ্তির তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে কিছু মাছ একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হাওরের মাছ রক্ষা ও উৎপাদন বাড়াতে পরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন।জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় একটি জরিপ চালানো হয়। জরিপের ফল অনুযায়ী তখন হাওরে ১৪৭ প্রজাতির মাছ ছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে ৪৬ প্রজাতির মাছ সংকটাপন্ন, খুবই সংকটাপন্ন ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ৪৬ জাতের মধ্যে ৩২ প্রজাতির ছোট মাছ রয়েছে। ছোট মাছের মধ্যে মধু পাবদা, ছোট পাবদা, বোথালি ও রানি একেবারে পাওয়া যাচ্ছে না। বড় মাছের মধ্যে নানিদ, কাজলী, পাঙ্গাশ এখন হাওরে নেই। গত দুই বছরে হাওরে মহাশোল দেখা যায়নি।

একসময় সুরমা নদীতে পাঙ্গাশ পাওয়া গেলেও এখন নদী-হাওর কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। হাওরের জলমহাল ব্যবস্থাপনা ও মাছ ধরার সঙ্গে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে জড়িত আছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্বপাগলা ইউনিয়নের দেখার হাওরপারের গ্রাম ইনাতনগরের আবদুল করিম (৭০)। তিনি জানান, একসময় হাওরে প্রচুর মাছ ছিল। দিনে দিনে কমছে। অনেক মাছের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। হাওরের সুস্বাদু গনিয়া ও রুই মাছ এখন কমে গেছে। এ জন্য তিনি ইজারা নীতিমালা না মানা, অবাধে পোনা নিধন ও মাছের অতি আহরণকে দায়ী করেন।

সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের আবদুল্লাপুর গ্রামের মানিক মিয়া (৬০) বলেন, ‘হাওরের মাছ রক্ষা করতে হলে ডিম ছাড়ার সময় থেকে পোনা বড় হওয়া পর্যন্ত কোনাজাল, কারেন্ট জালসহ সব ধরনের ঘন জালের ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।’সুনামগঞ্জ শহরের চারজন শিক্ষিত তরুণ মুজাম্মেল হক, সৈয়দ মুহাম্মদ মনোয়ার, হেলাল আহমদ ও দেওয়ান গণিউল সালাদীন ১৫ বছর আগে জলমহাল ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত হন। দেখার হাওরে পরিবেশসম্মত জলমহাল ব্যবস্থাপনায় ২০০৭ সালে তাঁরা জাতীয় পুরস্কার পান। আলাপকালে তাঁরা জানান, জলমহাল নীতিমালায় আছে, প্রথম দুই বছর বিলের উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মাছের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে ইজারাদারকে। দুই বছর কোনো মাছ ধরা যাবে না। মাছ ধরতে হবে তৃতীয় বছরে। কিন্তু বাস্তবে এটা মানা হচ্ছে না। হেলাল আহমদ বলেন, ‘জলমহালে প্রতিবছর মাছ ধরা বন্ধ করে পাইল ফিশারিজের নিয়ম (তিন বছরের) মানলেই হাওরে আবার মাছের উৎপাদন বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে সংকটাপন্ন মাছগুলোও রক্ষা পাবে।’