সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকসহ ২৩ জনকে প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির পৃথক ৫ মামলায় আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দিয়েছেন।
এ সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির ৬ টি মামলার মঙ্গলবার ধার্য তারিখ ছিল। একটি মামলায় গত ১৭ জুন গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। তবে সে গেজেট প্রকাশিত হয়নি। অপর ৫ মামলার ২৩ আসামি পলাতক রয়েছেন মর্মে প্রতিবেদন পাঠয়েছে পুলিশ। তাই আদালত বিজি প্রেসের মাধ্যমে আসামিদের আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়ে তারিখ ২০ জুলাই পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।
গেজেট প্রকাশের নির্দেশ হওয়া অপরা হলেন জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (অব.) প্রকৌশলী সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।
গত ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় নিজের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও সেটি গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গণকর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনসম্মত পারিশ্রমিক না হওয়া সত্ত্বেও, আইনমতে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রি মূলে প্লট গ্রহণ করেন।
মামলাটি তদন্ত করে গত ১০ মার্চ তদন্ত প্রাপ্তে আরো দুই আসামিসহ শেখ হাসিনা, পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন আফনান জান্নাত কেয়া।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউক থেকে ৩০ কাঠা প্লট গ্রহণের পৃথক তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিকসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে ১৩ এপ্রিল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
তিন মামলার মধ্যে একটিতে শেখ রেহানাকে, আরেকটিতে তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও অপর মামলায় মেয়ে আজমিনা সিদ্দিককে প্রধান আসামি করা হয়েছে। টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক এবং শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করা হয়।
তিন মামলায় মোট আসামি ৫৩ জন। এক আসামি অন্য মামলারও আসামি। সে হিসেবে তিন মামলায় মোট ২২ জন আসামির নাম রয়েছে।
এক মামলার আসামি হলেন শেখ রেহেনা, শেখ হাসিনা, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (অব.) প্রকৌশলী সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সহকারি পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ, তদন্ত প্রাপ্তে আসামি শেখ হাসিনার একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
আরেক মামলার আসামিরা হলেন শেখ রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, শেখ হাসিনা, জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল।