ঢাকা ০৪:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাকরি অধ্যাদেশ দাবি না মানলে ঈদের ছুটি শেষে দীর্ঘ কর্মবিরতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:২৩:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫
  • ১২ বার

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে থেকে আন্দোলন করছেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। দাবি না মানলে ঈদের ছুটি শেষে অফিস চালুর পর দীর্ঘ কর্মবিরতিতে যাবেন বলে জানান তারা।

চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে– এমন বিধান রেখে গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন হয়। এরপর ২৫ মে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে উত্তাল সচিবালয় | News Now Bangla

সরকারি কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে অবহিত করছেন। এটি বাতিল করার জন্য সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও কয়েকজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনকারী কর্মচারীরা।

dhakapost

দাবি না মানলে দীর্ঘ কর্মবিরতি

জানা গেছে, দাবি না মানলে ঈদের ছুটি শেষে অফিস চালুর পর দীর্ঘ কর্মবিরতিতে যাবেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। এ কর্মসূচিতে দেশের অন্য সব সরকারি অফিসের কর্মচারীদেরও সম্পৃক্ত করা হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম জানান, আমাদের দাবি না মানা হলে অফিস চালুর পর বড় পরিসরে আন্দোলনে যাব। বড় ধরনের কর্মবিরতি পালন করব এবং সেই কর্মসূচিতে সারা দেশের সব অফিসের কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করা হবে।

সরকারি কর্মচারী অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজও সচিবালয়ে বিক্ষোভ – Daily Uttor  Dokkhin উত্তরদক্ষিণ

 

তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটির পর অফিস খোলা হলে আমরা সবাই আবার বসব। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

যা আছে আলোচিত অধ্যাদেশে

অধ্যাদেশে সরকারি কর্মচারীদের (আইনানুযায়ী সব সরকারি চাকরিজীবী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী) চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো– সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন; এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।

এমন কর্মসূচি দেবো কল্পনাও করতে পারবেন না'

 

 

এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়, দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া, চাকরি থেকে অপসারণ বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দণ্ড দেওয়া যাবে।

 

অধ্যাদেশে বলা হয়, অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। আর অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে তাকে কেন দণ্ড আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে দণ্ড আরোপ করা যাবে। এভাবে দণ্ড আরোপ করা হলে দোষী কর্মচারী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। যদিও আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারবেন।

যে যুক্তি দিচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা

অধ্যাদেশটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছে।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল না হলে সচিবালয়ে আন্দোলন চলবে

 

সংগঠনটির মতে, এ অধ্যাদেশ জারি হলে বিভাগীয় মামলার পরিবর্তে শুধু একটি লেটার দিয়ে চাকরিচ্যুতি বা দণ্ড দেওয়া যাবে, কিছু স্বার্থবাদী কর্মকর্তার কাছে কর্মচারীরা ব্যক্তিগত দাসে পরিণত হবেন, ক্ষমতার অপব্যবহার বেশি হবে, বিভিন্ন কারণে অপছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে নাজেহাল হবেন, চাকরি হারানোর সুযোগ তৈরি হবে, অপছন্দ হলে কর্মকর্তার রোষানলে পড়বেন, একজন অভিযোগকারী কর্মকর্তা নিজেই তদন্তকারী ও বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন, ভয়ভীতির কারণে সরকারি কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত হবে।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের মতে, নারী সহকর্মীদের ভীত সন্ত্রস্ত পরিবেশে কাজ করতে হবে, কেউ কেউ রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণেও চাকরিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, এমনকি কেউ কেউ ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের কারণেও কর্মকর্তার রোষানলে পড়তে পারেন, দেশ ও জাতির সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মচারীদের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা সংকুচিত হবে, কর্মচারীদের ন্যায্যতা-প্রাপ্যতার দাবিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দারুণভাবে বাধার সৃষ্টি করবে, ব্যাপকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার হবে।

অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে, বললেন দুই উপদেষ্টা

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ কিছু ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

কালো আইন' বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ - Swadesh Bangla

কর্মচারীদের স্মারকলিপি পাওয়ার পর ৩ জুন আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, এই অধ্যাদেশের ব্যাপারে তাদের (কর্মচারীদের) অনেক আপত্তি আছে। তাদের আপত্তিগুলো শোনার পূর্ণ মানসিকতা সরকারের রয়েছে। যত দূর জানি, এ বিষয়ে উপদেষ্টা পর্যায়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে আপত্তিগুলো ভালো করে শোনা ও বিবেচনা করা এবং সুপারিশ করার। কমিটি প্রস্তাব দেবে। অধ্যাদেশটি উপদেষ্টা পরিষদে পাস হয়েছে, তাই উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপিত হবে।

dhakapost

এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। অপপ্রয়োগের সুযোগ থাকা কখনো প্রত্যাশিত ব্যাপার হতে পারে না। ভালো করে শোনা ও বোঝার জন্যই কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

এর আগে গত ১ জুন অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন কর্মচারীরা। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অধ্যাদেশটি দেখেছি। উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজনের নজরে এই জিনিসটা এনেছি। এখানে কিছু প্রভিশন আছে, যেগুলো অপপ্রয়োগের সম্ভাবনা আছে।’

আইন উপদেষ্টাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন

উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সুচিন্তিত সুপারিশ প্রণয়নে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।

দাবি না মানলে ছুটি শেষে দীর্ঘ কর্মবিরতি

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন– বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ হাসান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য নিতে পারবে। গঠিত কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

চাকরি অধ্যাদেশ দাবি না মানলে ঈদের ছুটি শেষে দীর্ঘ কর্মবিরতি

আপডেট টাইম : ০৭:২৩:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে থেকে আন্দোলন করছেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। দাবি না মানলে ঈদের ছুটি শেষে অফিস চালুর পর দীর্ঘ কর্মবিরতিতে যাবেন বলে জানান তারা।

চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে– এমন বিধান রেখে গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন হয়। এরপর ২৫ মে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে উত্তাল সচিবালয় | News Now Bangla

সরকারি কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে অবহিত করছেন। এটি বাতিল করার জন্য সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও কয়েকজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনকারী কর্মচারীরা।

dhakapost

দাবি না মানলে দীর্ঘ কর্মবিরতি

জানা গেছে, দাবি না মানলে ঈদের ছুটি শেষে অফিস চালুর পর দীর্ঘ কর্মবিরতিতে যাবেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। এ কর্মসূচিতে দেশের অন্য সব সরকারি অফিসের কর্মচারীদেরও সম্পৃক্ত করা হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম জানান, আমাদের দাবি না মানা হলে অফিস চালুর পর বড় পরিসরে আন্দোলনে যাব। বড় ধরনের কর্মবিরতি পালন করব এবং সেই কর্মসূচিতে সারা দেশের সব অফিসের কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করা হবে।

সরকারি কর্মচারী অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজও সচিবালয়ে বিক্ষোভ – Daily Uttor  Dokkhin উত্তরদক্ষিণ

 

তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটির পর অফিস খোলা হলে আমরা সবাই আবার বসব। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

যা আছে আলোচিত অধ্যাদেশে

অধ্যাদেশে সরকারি কর্মচারীদের (আইনানুযায়ী সব সরকারি চাকরিজীবী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী) চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো– সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন; এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।

এমন কর্মসূচি দেবো কল্পনাও করতে পারবেন না'

 

 

এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়, দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া, চাকরি থেকে অপসারণ বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দণ্ড দেওয়া যাবে।

 

অধ্যাদেশে বলা হয়, অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। আর অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে তাকে কেন দণ্ড আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে দণ্ড আরোপ করা যাবে। এভাবে দণ্ড আরোপ করা হলে দোষী কর্মচারী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। যদিও আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারবেন।

যে যুক্তি দিচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা

অধ্যাদেশটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছে।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল না হলে সচিবালয়ে আন্দোলন চলবে

 

সংগঠনটির মতে, এ অধ্যাদেশ জারি হলে বিভাগীয় মামলার পরিবর্তে শুধু একটি লেটার দিয়ে চাকরিচ্যুতি বা দণ্ড দেওয়া যাবে, কিছু স্বার্থবাদী কর্মকর্তার কাছে কর্মচারীরা ব্যক্তিগত দাসে পরিণত হবেন, ক্ষমতার অপব্যবহার বেশি হবে, বিভিন্ন কারণে অপছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে নাজেহাল হবেন, চাকরি হারানোর সুযোগ তৈরি হবে, অপছন্দ হলে কর্মকর্তার রোষানলে পড়বেন, একজন অভিযোগকারী কর্মকর্তা নিজেই তদন্তকারী ও বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন, ভয়ভীতির কারণে সরকারি কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত হবে।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের মতে, নারী সহকর্মীদের ভীত সন্ত্রস্ত পরিবেশে কাজ করতে হবে, কেউ কেউ রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণেও চাকরিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, এমনকি কেউ কেউ ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের কারণেও কর্মকর্তার রোষানলে পড়তে পারেন, দেশ ও জাতির সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মচারীদের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা সংকুচিত হবে, কর্মচারীদের ন্যায্যতা-প্রাপ্যতার দাবিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দারুণভাবে বাধার সৃষ্টি করবে, ব্যাপকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার হবে।

অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে, বললেন দুই উপদেষ্টা

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ কিছু ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

কালো আইন' বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ - Swadesh Bangla

কর্মচারীদের স্মারকলিপি পাওয়ার পর ৩ জুন আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, এই অধ্যাদেশের ব্যাপারে তাদের (কর্মচারীদের) অনেক আপত্তি আছে। তাদের আপত্তিগুলো শোনার পূর্ণ মানসিকতা সরকারের রয়েছে। যত দূর জানি, এ বিষয়ে উপদেষ্টা পর্যায়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে আপত্তিগুলো ভালো করে শোনা ও বিবেচনা করা এবং সুপারিশ করার। কমিটি প্রস্তাব দেবে। অধ্যাদেশটি উপদেষ্টা পরিষদে পাস হয়েছে, তাই উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপিত হবে।

dhakapost

এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। অপপ্রয়োগের সুযোগ থাকা কখনো প্রত্যাশিত ব্যাপার হতে পারে না। ভালো করে শোনা ও বোঝার জন্যই কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

এর আগে গত ১ জুন অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন কর্মচারীরা। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অধ্যাদেশটি দেখেছি। উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজনের নজরে এই জিনিসটা এনেছি। এখানে কিছু প্রভিশন আছে, যেগুলো অপপ্রয়োগের সম্ভাবনা আছে।’

আইন উপদেষ্টাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন

উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সুচিন্তিত সুপারিশ প্রণয়নে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।

দাবি না মানলে ছুটি শেষে দীর্ঘ কর্মবিরতি

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন– বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ হাসান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য নিতে পারবে। গঠিত কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব।