ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, কারণ পরিস্থিতি সামরিক সংঘাতে রূপ নেয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। এই কারণে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আজ (৫ মে) একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক আয়োজন করতে যাচ্ছে, যা দুই দেশের উত্তেজনা ও চলমান সংঘর্ষের বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
বৈঠকের মূল বিষয় হবে পেহেলগামে ঘটিত সন্ত্রাসী হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত। পাকিস্তানের অনুরোধে এই বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা জাতিসংঘে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও ভারতের একতরফা পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরবে। পাকিস্তান তাদের কূটনৈতিক উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সঠিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখতে চায়।
পেহেলগামে হামলার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে এবং সীমান্তে আতারি-ওয়াঘা স্থলসীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতের এই পদক্ষেপকে পাকিস্তান “যুদ্ধ ঘোষণার শামিল” বলে উল্লেখ করেছে এবং পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান তাদের আকাশসীমায় ভারতীয় বিমান চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া, পাকিস্তান “আবদালি” ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে, যা ভারতের কর্মকর্তারা “খোলামেলা উসকানি” হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
এই পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়া বিশেষভাবে জানিয়েছে, তারা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত, যদি দুই দেশ সম্মত হয়। তবে, দক্ষিণ এশিয়ায় এই উত্তেজনা ও সীমান্তে সংঘর্ষের কারণে অঞ্চলটির স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে।
উল্লেখ্য, ভেটো ক্ষমতার অধিকারী নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য — চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও — কাউন্সিলের ১০টি অস্থায়ী সদস্য হলো— আলজেরিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, গায়ানা, পাকিস্তান, পানামা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরা লিওন, স্লোভেনিয়া এবং সোমালিয়া। আর চলতি মে মাসের জন্য জাতিসংঘের এই সংস্থার সভাপতিত্ব করছে গ্রিস।
জাতিসংঘের এই বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে, কারণ এটি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন নিবিড় নজর রাখছে এই বৈঠকের ফলাফলের দিকে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তথ্যসূত্র : এনডিটিভি