ঢাকা ০৪:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চীনের সঙ্গে ৫০ বছরের নয়, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ২ হাজার বছরের পুরোনো

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫৮:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৪ বার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ৫০ বছরের নয়, ঐতিহাসিকভাবে এই সম্পর্ক দুই হাজার বছরের পুরনো। আমরা দুই দেশের মধ্যে গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচি আরও বাড়াতে চাই।

রবিবার (২০ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে চীনের ইউনান প্রদেশ ও বাংলাদেশস্থ চীন দূতাবাসের উদ্যোগে আয়োজিত ‘চীন-বাংলাদেশ পিপল-টু-পিপল এক্সচেঞ্জ ইয়ার: ইউনান এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপাচার্য এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সহআয়োজক ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীনের ইউনান প্রদেশের গর্ভনর ওয়াং ইউবো, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, ডিনবৃন্দ, চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে চিকিৎসা গবেষণা ও প্রশিক্ষণকে এগিয়ে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে চীনের ইউনান পিকিং ক্যান্সার হাসপাতাল এবং কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আগে চীন ও বাংলাদেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিলো।

এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান আরও বলেন, আমরা মনে করি ইউনান প্রদেশ আমাদের পরিবারের অংশ। আমি আশা করি এই আয়োজনটি একটি নতুন চ্যাপ্টারের উন্মোচন করেছে। এটি আমাদের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

চীনের রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপাচার্য বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫৪ শতাংশ ছাত্রী রয়েছে। তাদের আবাসনের সমস্যা প্রকট। তারা এই সমস্যা দূর করার জন্য ক্রমাগত দাবি জানিয়ে আসছিলো। চীন তাদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে। চীন সরকারের অর্থায়নে ছাত্রীদের জন্য একটি আবাসিক হল নির্মাণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা বিনিময়ের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুই দেশের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে চীনের একটি শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে শুধু ভাষাগত দক্ষতাই অর্জন করছে না, বরং একই সঙ্গে চীনের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গেও পরিচিত হচ্ছে।

উপাচার্য আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক শিক্ষা বিনিময়ও সমভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। এই বছর চীনের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থী বাংলা পড়তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে। চীনের শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলে পৃথকভাবে থাকার ব্যবস্থা করেছি। ভাষা বিনিময় এবং পারস্পরিক বোঝাপোড়ার ক্ষেত্রে এটি আমাদের অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ। এই ধরনের উদ্যোগ শিক্ষা, গবেষণা এবং এর বাইরেও গভীর সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করে।

চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, এরইমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চীনের শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাধিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। যা যৌথ গবেষণা, ফ্যাকাল্টি এবং শিক্ষার্থী বিনিময়ের পথ প্রশস্ত করেছে। আজ আরেকটি মাইলফলক তৈরি হয়েছে। চিকিৎসা গবেষণা ও প্রশিক্ষণকে এগিয়ে নিতে আমরা ইউনান ক্যান্সার হাসপাতালের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম তার বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে চীনের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের কঠিন সময়ে আহতদের চিকিৎসা দিতে চীন সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উঁচু মাত্রায় পৌঁছেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-গবেষণা, সংস্কৃতি, যোগাযোগসহ সকল ক্ষেত্রে দুই দেশের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে ‘চায়না-সাউথ এশিয়া ইউথ এক্সচেঞ্জ উইক’ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করা হয়। সিনেট ভবনের মিলনায়তনের বাইরে ইউনান প্রদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ১৭টি বুথ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রদর্শনী করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের সঙ্গে ৫০ বছরের নয়, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ২ হাজার বছরের পুরোনো

আপডেট টাইম : ০৭:৫৮:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ৫০ বছরের নয়, ঐতিহাসিকভাবে এই সম্পর্ক দুই হাজার বছরের পুরনো। আমরা দুই দেশের মধ্যে গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচি আরও বাড়াতে চাই।

রবিবার (২০ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে চীনের ইউনান প্রদেশ ও বাংলাদেশস্থ চীন দূতাবাসের উদ্যোগে আয়োজিত ‘চীন-বাংলাদেশ পিপল-টু-পিপল এক্সচেঞ্জ ইয়ার: ইউনান এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপাচার্য এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সহআয়োজক ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীনের ইউনান প্রদেশের গর্ভনর ওয়াং ইউবো, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, ডিনবৃন্দ, চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে চিকিৎসা গবেষণা ও প্রশিক্ষণকে এগিয়ে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে চীনের ইউনান পিকিং ক্যান্সার হাসপাতাল এবং কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আগে চীন ও বাংলাদেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিলো।

এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান আরও বলেন, আমরা মনে করি ইউনান প্রদেশ আমাদের পরিবারের অংশ। আমি আশা করি এই আয়োজনটি একটি নতুন চ্যাপ্টারের উন্মোচন করেছে। এটি আমাদের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

চীনের রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপাচার্য বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫৪ শতাংশ ছাত্রী রয়েছে। তাদের আবাসনের সমস্যা প্রকট। তারা এই সমস্যা দূর করার জন্য ক্রমাগত দাবি জানিয়ে আসছিলো। চীন তাদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে। চীন সরকারের অর্থায়নে ছাত্রীদের জন্য একটি আবাসিক হল নির্মাণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা বিনিময়ের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুই দেশের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে চীনের একটি শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে শুধু ভাষাগত দক্ষতাই অর্জন করছে না, বরং একই সঙ্গে চীনের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গেও পরিচিত হচ্ছে।

উপাচার্য আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক শিক্ষা বিনিময়ও সমভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। এই বছর চীনের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থী বাংলা পড়তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে। চীনের শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলে পৃথকভাবে থাকার ব্যবস্থা করেছি। ভাষা বিনিময় এবং পারস্পরিক বোঝাপোড়ার ক্ষেত্রে এটি আমাদের অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ। এই ধরনের উদ্যোগ শিক্ষা, গবেষণা এবং এর বাইরেও গভীর সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করে।

চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, এরইমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চীনের শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাধিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। যা যৌথ গবেষণা, ফ্যাকাল্টি এবং শিক্ষার্থী বিনিময়ের পথ প্রশস্ত করেছে। আজ আরেকটি মাইলফলক তৈরি হয়েছে। চিকিৎসা গবেষণা ও প্রশিক্ষণকে এগিয়ে নিতে আমরা ইউনান ক্যান্সার হাসপাতালের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম তার বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে চীনের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের কঠিন সময়ে আহতদের চিকিৎসা দিতে চীন সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উঁচু মাত্রায় পৌঁছেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-গবেষণা, সংস্কৃতি, যোগাযোগসহ সকল ক্ষেত্রে দুই দেশের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে ‘চায়না-সাউথ এশিয়া ইউথ এক্সচেঞ্জ উইক’ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করা হয়। সিনেট ভবনের মিলনায়তনের বাইরে ইউনান প্রদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ১৭টি বুথ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রদর্শনী করে।