ঢাকা ০৫:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

ফিলিস্তিনের পাশে বাংলাদেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩০:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • ১২ বার

জনতার ঢল আর স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। দুই হাতে শক্ত করে ধরা বাংলাদেশ আর ফিলিস্তিনের পতাকা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সব মানুষের কণ্ঠে প্রতিবাদী স্লোগান। গাজায় চলমান গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে লাখো মানুষ জানান দেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনির পাশে আছি।’ এ সময় ঘোষণা দেওয়া হয় ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কামনায় মোনাজাতে কাঁদেন লাখো মানুষ। এভাবেই গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হলো পূর্বঘোষিত ‘মার্চ ফর গাজা’র বিশাল গণজমায়েত।

‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন নেতা, ইসলামি বক্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। সমাবেশে পাঁচ দফা দাবিতে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এতে ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সব চুক্তি বাতিলের দাবিসহ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ এবং মুসলিম বিশ্বকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানানো হয়।

উদাত্ত আহ্বান বক্তাদের : এ সময় বক্তারা বলেন, দেশে দল-মত, দর্শন ভিন্ন হলেও মানবতার প্রশ্নে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে পুরো বাংলাদেশ। একই সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর নমনীয়তা ও নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করা হয়। বক্তারা জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকা পালনের দাবি জানান।

গণজমায়েতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। বিশ্বমানবতার শত্রু ইসরায়েল ফিলিস্তিনিতে যে গণহত্যা সংঘটিত করেছে, তাকে ধিক্কার জানাতে সারাদেশ থেকে এসেছে এই গণজমায়েত। সারা বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশের মানুষ এই গণহত্যার ধিক্কার জানিয়েছে। আমরাও তাতে শরিক হয়েছি। তবে দুঃখের বিষয়, মুসলিম বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে না এবং ওআইসি নিষ্ক্রিয় রয়েছে। আমরা জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ফিলিস্তিনির পূর্ণ স্বাধীনতা প্রত্যাশা করছি।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গাজায় ইসরায়েলের নিন্দনীয় হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এর প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত এই গণজমায়েতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি। আমরা মনে করছি, এই মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধ না হওয়া জাতিসংঘের ব্যর্থতা, ওআইসির ব্যর্থতা। এটি খুবই নিন্দনীয় এবং উদ্বেগজনক।

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সব দল, মত, চিন্তা-দর্শনের মানুষ মজলুম ফিলিস্তিন ও মজলুম গাজার পাশে আছে, সহাবস্থান করছে। আমরা এক কাতারে দাঁড়িয়ে আজ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই, আমাদের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা, মতগত পার্থক্য, ভিন্নতা থাকতে পারে; কিন্তু মজলুম ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা, ভূমির অধিকারের দাবিতে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।’

সমাবেশে ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে আমরা ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে হতে পারি; কিন্তু আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা ফিলিস্তিন, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা গাজা, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা আল কুদস।’

আজকের এই জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি, আল আকসার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেন আজহারী। তিনি বলেন, ‘আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, এই গণজমায়েতে, এই জনতার গণসমুদ্রে উপস্থিত হয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি, আজকের এই মহাসমুদ্র, জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি, আল আকসার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।’

গণজমায়েতে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক। সমাবেশে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা এবং গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিসহ ফিলিস্তিনের জনগণকে রক্ষা ও নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে অঞ্চলটিতে চলমান গণহত্যার বিচার দাবি করা হয়েছে।

মঞ্চে নেতারা : অনুষ্ঠান মঞ্চে বিভিন্ন মত ও পথের মানুষের উপস্থিতিতে অভিন্ন উদ্দেশ্যে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এর আগে পরে বক্তব্য দেন ইসলামিক চিন্তাবিদ, রাজনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মঞ্চে আরও ছিলেন বিএনপি নেতা যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের রেজাউল করিম; বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক; লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান; গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর; গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান; জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ; এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ।

জনতার ঢল : বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠান শুরুর কর্মসূচি থাকলেও দুপুরের আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ রাজধানী ঢাকার অলিগলি। প্রায় সবখান থেকেই স্লোগান উঠে ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ’, ‘ইসরায়েল নিপাত যাক’, ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন, ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ইজরায়েলি পণ্য, বয়কট বয়কট’, তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন প্রভৃতি। বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মঞ্চে শুরু হয় মূল আয়োজন। সেখান থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাকও দেওয়া হয়। আহতদের সুস্থতা কামনা ও নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। গণজমায়েতে বক্তারা মত-পথ ভুলে সবাই ইসরায়েলি আগ্রসনের বিরুদ্ধে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন মাদ্রাসার ব্যানারে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। ট্রেনের ছাদে করে অনেককে কর্মসূচিতে আসতে দেখা যায়। বিকাল ৪টার দিকে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট তথা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের প্রতিটি রাস্তা লোকে লোকারণ্য ছিল।

এদিকে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির আড়ালে কোনো দুষ্কৃতিকারী যেন অস্থিতিশীল কোনো কিছু ঘটাতে না পারে, সেজন্য রাজধানীর প্রতিটি সড়কে কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশ ও গাজার পতাকা ছাড়া অন্য কোনো পতাকা না আনার জন্য নির্দেশনাও ছিল। তাই ভিন্ন কিছু দেখলে সেগুলো নামিয়ে দিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর সদস্যদের।

সারাদেশ থেকে পাঁচটি পয়েন্ট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন ফিলিস্তিনের সমর্থনে আসা মানুষ। বাংলামোটর থেকে রমনা গেট দিয়ে, কাকরাইল মোড় থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেট দিয়ে, জিরো পয়েন্ট থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসি গেট দিয়ে, বকশীবাজার মোড় থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি গেট দিয়ে এবং নীলক্ষেত মোড় থেকে মিছিল নিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন তারা। মিছিলে বেশিরভাগ মানুষের হাতে দেখা গেছে ফিলিস্তিনের পতাকা আর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ লেখা ব্যানার। বিভিন্ন গন্তব্যের যানবাহন চলছে ধীর গতিতে। শাহবাগ ও আশপাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সন্ধ্যা গড়াবার আগে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে বাড়ি ফেরার জনস্রোত সন্ধ্যা পর্যন্ত লক্ষ করা গেছে।

মোনাজাতে কাঁদলেন লাখো মানুষ : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও শান্তি কামনায় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখো মানুষের চোখে ছিল অশ্রু। ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা, শিশু ও নারীদের মৃত্যু, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকার করুণ বাস্তবতা হৃদয়ে নিয়ে মানুষ প্রার্থনা করেন শান্তির জন্য। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিবের পরিচালিত মোনাজাতে বলা হয়Ñ ইসরায়েল ফিলিস্তিনে যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, তা মানবতার ওপর চরম আঘাত। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষা করেন এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার আলো দেখান।

একই সঙ্গে মোনাজাতে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হওয়া, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধার ও আহতদের সুস্থতা, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ, বিশ্ব নেতাদের বিবেক জাগ্রত হওয়া, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত আগ্রাসনের বিচার চেয়ে দোয়া করা হয়েছে।

ইসরায়েলি পণ্য বর্জনে লিফলেট বিতরণ : কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মানুষের কাছে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ করছে বিভিন্ন সামাজিক ও ছাত্র সংগঠন। লিফলেটে সবাইকে ইসরায়েলি স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানির পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

জমায়েতে যোগ দেয় শিশুরাও : বড়দের পাশাপাশি এই গণজমায়েতে আসে শিশুরাও। ‘এভাবেই আহত ফিলিস্তিনি’ সাজে মিছিলে অংশ নেয় জামায়াতের সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী। শিশুরা তাদের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যান্ডেজ করে এসে গাজার শিশুদের হৃদয়বিদারক অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করে। একজন শিশু ‘বাবা’ সেজে কাঁধে করে নিয়ে আসেন নিজের সন্তানের প্রতীকী মরদেহ। এমন দৃশ্যে কেউ বা গগনবিদারী চিৎকারে দিয়েছেন ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’ স্লোগান।

মিছিলে জুলাই আন্দোলনের আহতরা : এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন জুলাই বিপ্লবে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরাও। ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মিছিল-সমাবেশে যোগ দেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহতরা। এ সময় সাধারণ মানুষদের সঙ্গে তাদেরকেও নারায়ে তাকবিরসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর প্রতিকৃতিতে ধিক্কার : ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং আরব বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের হামলায় নিশ্চুপ থাকার ঘটনা নিয়ে প্রদর্শনী করেছেন কয়েকজন ছাত্র। প্রদর্শনীতে দেখা যায়, নেতানিয়াহুর মুখোশ পরা একজন রক্তের বাটি হাতে নিয়ে হাঁটছেন, যার পুরো শরীরে ফিলিস্তিনি মানুষের রক্ত। তার পাশেই ট্রাম্পের মুখোশ পরা একজন নেতানিয়াহুকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তারও শরীরজুড়ে রক্তের দাগ। অন্যদিকে আরব নেতারা তাদের দুজনের আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন এবং তাদের হাতে চুমু খাচ্ছেন, আনুগত্য প্রকাশ করছেন। এ ছাড়া, তাদের ঠিক পেছনেই সাদা কাফনে মোড়ানো অসংখ্য লাশের প্রতিকৃতি রাখা হয়, যা নেতানিয়াহু, ট্রাম্প ও তার সহযোগী আরব বিশ্বের নেতারা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকার বাইরের ট্রেনে ও মেট্রোরেলে ভিড় : দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীমুখী হয়েছেন মানুষ। রাজধানীর বাইরে থেকে বাস, ট্রাক, ভ্যান ট্রেন, বাইকসহ নানা যানবাহনে আসেন মানুষ। অন্যদিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল কর্মসূচিতে অংশ নিতে মেট্রোরেলে ছিল যারপরনাই ভিড়। অনেকে এমন ভিড় ঠেলে মেট্রোতে উঠতে না পেরে নিচে নেমে হেঁটে রওনা দেন অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণের দিকে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে বজ্রপাতে নিহত ৩ আহত ১

ফিলিস্তিনের পাশে বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ১০:৩০:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

জনতার ঢল আর স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। দুই হাতে শক্ত করে ধরা বাংলাদেশ আর ফিলিস্তিনের পতাকা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সব মানুষের কণ্ঠে প্রতিবাদী স্লোগান। গাজায় চলমান গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে লাখো মানুষ জানান দেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনির পাশে আছি।’ এ সময় ঘোষণা দেওয়া হয় ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কামনায় মোনাজাতে কাঁদেন লাখো মানুষ। এভাবেই গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হলো পূর্বঘোষিত ‘মার্চ ফর গাজা’র বিশাল গণজমায়েত।

‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন নেতা, ইসলামি বক্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। সমাবেশে পাঁচ দফা দাবিতে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এতে ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সব চুক্তি বাতিলের দাবিসহ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ এবং মুসলিম বিশ্বকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানানো হয়।

উদাত্ত আহ্বান বক্তাদের : এ সময় বক্তারা বলেন, দেশে দল-মত, দর্শন ভিন্ন হলেও মানবতার প্রশ্নে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে পুরো বাংলাদেশ। একই সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর নমনীয়তা ও নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করা হয়। বক্তারা জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকা পালনের দাবি জানান।

গণজমায়েতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। বিশ্বমানবতার শত্রু ইসরায়েল ফিলিস্তিনিতে যে গণহত্যা সংঘটিত করেছে, তাকে ধিক্কার জানাতে সারাদেশ থেকে এসেছে এই গণজমায়েত। সারা বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশের মানুষ এই গণহত্যার ধিক্কার জানিয়েছে। আমরাও তাতে শরিক হয়েছি। তবে দুঃখের বিষয়, মুসলিম বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে না এবং ওআইসি নিষ্ক্রিয় রয়েছে। আমরা জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ফিলিস্তিনির পূর্ণ স্বাধীনতা প্রত্যাশা করছি।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গাজায় ইসরায়েলের নিন্দনীয় হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এর প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত এই গণজমায়েতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি। আমরা মনে করছি, এই মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধ না হওয়া জাতিসংঘের ব্যর্থতা, ওআইসির ব্যর্থতা। এটি খুবই নিন্দনীয় এবং উদ্বেগজনক।

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সব দল, মত, চিন্তা-দর্শনের মানুষ মজলুম ফিলিস্তিন ও মজলুম গাজার পাশে আছে, সহাবস্থান করছে। আমরা এক কাতারে দাঁড়িয়ে আজ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই, আমাদের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা, মতগত পার্থক্য, ভিন্নতা থাকতে পারে; কিন্তু মজলুম ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা, ভূমির অধিকারের দাবিতে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।’

সমাবেশে ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে আমরা ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে হতে পারি; কিন্তু আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা ফিলিস্তিন, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা গাজা, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা আল কুদস।’

আজকের এই জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি, আল আকসার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেন আজহারী। তিনি বলেন, ‘আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, এই গণজমায়েতে, এই জনতার গণসমুদ্রে উপস্থিত হয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি, আজকের এই মহাসমুদ্র, জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি, আল আকসার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।’

গণজমায়েতে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক। সমাবেশে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা এবং গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিসহ ফিলিস্তিনের জনগণকে রক্ষা ও নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে অঞ্চলটিতে চলমান গণহত্যার বিচার দাবি করা হয়েছে।

মঞ্চে নেতারা : অনুষ্ঠান মঞ্চে বিভিন্ন মত ও পথের মানুষের উপস্থিতিতে অভিন্ন উদ্দেশ্যে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এর আগে পরে বক্তব্য দেন ইসলামিক চিন্তাবিদ, রাজনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মঞ্চে আরও ছিলেন বিএনপি নেতা যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের রেজাউল করিম; বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক; লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান; গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর; গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান; জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ; এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ।

জনতার ঢল : বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠান শুরুর কর্মসূচি থাকলেও দুপুরের আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ রাজধানী ঢাকার অলিগলি। প্রায় সবখান থেকেই স্লোগান উঠে ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ’, ‘ইসরায়েল নিপাত যাক’, ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন, ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ইজরায়েলি পণ্য, বয়কট বয়কট’, তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন প্রভৃতি। বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মঞ্চে শুরু হয় মূল আয়োজন। সেখান থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাকও দেওয়া হয়। আহতদের সুস্থতা কামনা ও নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। গণজমায়েতে বক্তারা মত-পথ ভুলে সবাই ইসরায়েলি আগ্রসনের বিরুদ্ধে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন মাদ্রাসার ব্যানারে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। ট্রেনের ছাদে করে অনেককে কর্মসূচিতে আসতে দেখা যায়। বিকাল ৪টার দিকে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট তথা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের প্রতিটি রাস্তা লোকে লোকারণ্য ছিল।

এদিকে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির আড়ালে কোনো দুষ্কৃতিকারী যেন অস্থিতিশীল কোনো কিছু ঘটাতে না পারে, সেজন্য রাজধানীর প্রতিটি সড়কে কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশ ও গাজার পতাকা ছাড়া অন্য কোনো পতাকা না আনার জন্য নির্দেশনাও ছিল। তাই ভিন্ন কিছু দেখলে সেগুলো নামিয়ে দিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর সদস্যদের।

সারাদেশ থেকে পাঁচটি পয়েন্ট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন ফিলিস্তিনের সমর্থনে আসা মানুষ। বাংলামোটর থেকে রমনা গেট দিয়ে, কাকরাইল মোড় থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেট দিয়ে, জিরো পয়েন্ট থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসি গেট দিয়ে, বকশীবাজার মোড় থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি গেট দিয়ে এবং নীলক্ষেত মোড় থেকে মিছিল নিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন তারা। মিছিলে বেশিরভাগ মানুষের হাতে দেখা গেছে ফিলিস্তিনের পতাকা আর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ লেখা ব্যানার। বিভিন্ন গন্তব্যের যানবাহন চলছে ধীর গতিতে। শাহবাগ ও আশপাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সন্ধ্যা গড়াবার আগে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে বাড়ি ফেরার জনস্রোত সন্ধ্যা পর্যন্ত লক্ষ করা গেছে।

মোনাজাতে কাঁদলেন লাখো মানুষ : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও শান্তি কামনায় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখো মানুষের চোখে ছিল অশ্রু। ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা, শিশু ও নারীদের মৃত্যু, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকার করুণ বাস্তবতা হৃদয়ে নিয়ে মানুষ প্রার্থনা করেন শান্তির জন্য। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিবের পরিচালিত মোনাজাতে বলা হয়Ñ ইসরায়েল ফিলিস্তিনে যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, তা মানবতার ওপর চরম আঘাত। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষা করেন এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার আলো দেখান।

একই সঙ্গে মোনাজাতে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হওয়া, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধার ও আহতদের সুস্থতা, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ, বিশ্ব নেতাদের বিবেক জাগ্রত হওয়া, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত আগ্রাসনের বিচার চেয়ে দোয়া করা হয়েছে।

ইসরায়েলি পণ্য বর্জনে লিফলেট বিতরণ : কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মানুষের কাছে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ করছে বিভিন্ন সামাজিক ও ছাত্র সংগঠন। লিফলেটে সবাইকে ইসরায়েলি স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানির পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

জমায়েতে যোগ দেয় শিশুরাও : বড়দের পাশাপাশি এই গণজমায়েতে আসে শিশুরাও। ‘এভাবেই আহত ফিলিস্তিনি’ সাজে মিছিলে অংশ নেয় জামায়াতের সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী। শিশুরা তাদের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যান্ডেজ করে এসে গাজার শিশুদের হৃদয়বিদারক অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করে। একজন শিশু ‘বাবা’ সেজে কাঁধে করে নিয়ে আসেন নিজের সন্তানের প্রতীকী মরদেহ। এমন দৃশ্যে কেউ বা গগনবিদারী চিৎকারে দিয়েছেন ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’ স্লোগান।

মিছিলে জুলাই আন্দোলনের আহতরা : এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন জুলাই বিপ্লবে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরাও। ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মিছিল-সমাবেশে যোগ দেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহতরা। এ সময় সাধারণ মানুষদের সঙ্গে তাদেরকেও নারায়ে তাকবিরসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর প্রতিকৃতিতে ধিক্কার : ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং আরব বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের হামলায় নিশ্চুপ থাকার ঘটনা নিয়ে প্রদর্শনী করেছেন কয়েকজন ছাত্র। প্রদর্শনীতে দেখা যায়, নেতানিয়াহুর মুখোশ পরা একজন রক্তের বাটি হাতে নিয়ে হাঁটছেন, যার পুরো শরীরে ফিলিস্তিনি মানুষের রক্ত। তার পাশেই ট্রাম্পের মুখোশ পরা একজন নেতানিয়াহুকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তারও শরীরজুড়ে রক্তের দাগ। অন্যদিকে আরব নেতারা তাদের দুজনের আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন এবং তাদের হাতে চুমু খাচ্ছেন, আনুগত্য প্রকাশ করছেন। এ ছাড়া, তাদের ঠিক পেছনেই সাদা কাফনে মোড়ানো অসংখ্য লাশের প্রতিকৃতি রাখা হয়, যা নেতানিয়াহু, ট্রাম্প ও তার সহযোগী আরব বিশ্বের নেতারা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকার বাইরের ট্রেনে ও মেট্রোরেলে ভিড় : দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীমুখী হয়েছেন মানুষ। রাজধানীর বাইরে থেকে বাস, ট্রাক, ভ্যান ট্রেন, বাইকসহ নানা যানবাহনে আসেন মানুষ। অন্যদিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল কর্মসূচিতে অংশ নিতে মেট্রোরেলে ছিল যারপরনাই ভিড়। অনেকে এমন ভিড় ঠেলে মেট্রোতে উঠতে না পেরে নিচে নেমে হেঁটে রওনা দেন অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণের দিকে।