এখন পদ্মফুলের মৌসুম না। কিন্তু ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার লাল মাটির পাহাড় এলাকার পাহাড় অনন্তপুর গ্রামের বড়বিলা বিলে অকাল মৌসুমেও ফোটে পদ্মফুল। এই ফুল ব্যবহৃত হয় দেশের বিভিন্ন স্থানের পূজামণ্ডপে। ফলে দুর্গাপূজায় বড়বিলার এই ফুলের কদর অনেক।
এখানে পদ্মপাতা জলে টলমল। যত দূর চোখ যায়, শুধু পদ্মপাতার সারি। তারই মধ্যে ফুটছে নতুন কুঁড়ি। স্থানীয় লোকজন অতি যত্নে তোলেন পদ্মবাগানের ফুল।
পদ্মের সদ্য ফোটা কুঁড়ি প্রতিবার দুর্গাপূজা এলে পাড়ি জমায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের জেলা-উপজেলায়, এমনকি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। দুর্গাপূজায় স্থানীয় লোকজন এই বিলের পদ্মফুল তুলতে পেরে খুশি। আর তার জন্য ভালো দামও পান তারা।
পাহাড় অনন্তপুর গ্রামের মানুষ কাজের ফাঁকে পদ্মবাগানের খেয়াল রাখেন। বিলের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে থাকা পদ্মবাগান দেখভাল করেন তারা। পর্যটকরা চাইলে তাদের উপহার দেন পদ্মফুল।
প্রতিবারই দুর্গাপূজায় পদ্মফুলের আকাল পড়ে। সে ময়মনসিংহ হোক, কিংবা ঢাকা। কিন্তু বড়বিলা বিল ভরা থাকে পদ্মফুলে। এখানকার বাসিন্দাদের আছে পদ্মফুল ফোটানোর আনন্দ, ভালোবাসার আনন্দ।
দুর্গাপূজায় কেন পদ্মফুলের প্রয়োজন।
জানা যায়, অসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ দেবতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন, তারা ব্রহ্মার দেওয়া কঠিন বরের ভেতরেই আলো দেখতে পান। ব্রহ্মা বর দেওয়ার সময় বলেছিলেন, কোনো পুরুষের হাতে মহিষাসুরের মৃত্যু হবে না, এখানে নারীর কথা উহ্য রাখা হয়েছে। তার মানে নারীর হাতে মহিষাসুরের পরাস্ত হওয়ায় কোনো বাধা নেই।
তখন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবের আহ্বানে দশভুজা যে নারীমূর্তির আবির্ভাব হলো, তিনি দেবী দুর্গা। যেহেতু মহাপরাক্রমশালী মহিষাসুরের সঙ্গে লড়তে হবে, দুই হাতে লড়াই করা সম্ভব নয় বলেই দেবী দুর্গাকে দশভুজারূপে কল্পনা করা হয়েছে। দুর্গা আবির্ভূত হওয়ার পর দুর্গার দশ হাত মারণাস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত করে দেওয়া হলো। শিব দিলেন ত্রিশূল, বিষ্ণু দিলেন চক্র, ইন্দ্র দিলেন তীর-ধনুক, তরবারি, ঢাল, বিষধর সর্প, তীক্ষ্ণ কাঁটাওয়ালা শঙ্খ, বিদ্যুৎবাহী বজ্রশক্তি এবং একটি পদ্মফুল।