ক্রিকেটে কতো রং, কতো বৈচিত্র্য! শুক্রবার ছিল বিষাদের রাত। ররিবার রাতটা হয়ে গেল অন্যরকম, মহা আনন্দের। হোটেল রেডিসন ব্লুতে মাশরাফিদের পার্টি। সেই পার্টিতে শামিল পুরো দেশও। প্রথম ম্যাচে সহজ জয় হাতছাড়ার কষ্ট ভুলে এদিন ইংল্যান্ডকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে উদ্দীপ্ত টাইগাররা।
মনে রাখার মতো অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করলেন অধিনায়ক মাশরাফি। সঙ্গে তাসকিন আহমেদের অসাধারণ বোলিং, রিয়াদের ব্যাটিং দৃঢ়তা, আর ফাইটার নাসিরের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ৩৪ রানে দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজটা এখন ১-১ এ সমতায়। শেষ ম্যাচটা হয়ে উঠলো ‘ফাইনাল’, যেটি অনুষ্ঠিত হবে বুধবার, চট্রগ্রামে।
দুপুরে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৩৮ করে স্বাগতিকরা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবদান সেখানে ৭৫ রান। অবশ্য এই স্কোরও হওয়ার কথা ছিল না। শেষ দিকে মাশরাফি বিন মোর্তুজার ২৯ বলে ৪৪ ও নাসিরের অপরাজিত ২৭ রানের সুবাদে শেষ পর্যন্ত সম্মানজনক স্কোর দাঁড় করে স্বাগতিকরা।
বড় স্কোরের পূর্বশর্ত হচ্ছে ভালো শুরু।কিন্তু এদিন শুরুটা হলো একেবারেই ম্যাড়মেড়ে। প্রথম ওভার থেকেই বাড়তি সতর্কতা ছিল দুই ওপেনারের।ভয়ডরহীন ক্রিকেটের পরিবর্তে এদিন তামিম-ইমরুলের ব্যাটে ছিল জড়তা।
গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইমরুল কায়েস ফিরলেন ১১ রানে ১৮ বল খেলে। এর কিছুক্ষণ পরই ফাস্ট বোলার ওয়েকসের দ্বিতীয় শিকার হন অপর ওপেনার তামিম ইকবাল। ৩১ বলে ১৪ রান করেন তিনি।
২৬ রানে নেই দুই ওপেনার। শুরুর এই ধাক্কা সামাল দেওয়ার দায়িত্ব ৩,৪, ৫ নম্বরের ব্যাটসম্যানদের। রিয়াদ সেই দায়িত্ব পালন করতে পারলেও সাব্বির রহমান এদিনও ছিলেন ব্যর্থ। শুধু কি ব্যর্থ? আউট হয়েছেন ২১ বলে মাত্র ৩ রান করে। ওয়ানেডেতে এমন বিশ্রি ব্যাটিং কি হয়?
টানা অফফর্মের মধ্য দিয়ে যাওয়া মুশফিক এদিন ভালোই শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই ভালোটা ধরে রাখতে পারেননি। ২৩ বলে ২১ করে ফিরতে হয়েছে ড্রেসিংরুমে। এরপর ১২ বলে মাত্র ৪ রান করে সাকিব আউট হয়ে গেলে মহাবিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
তবে এদিন রিযাদ খুঁজে পান নিজেকে। একপ্রান্ত শুধু আগলেই রাখেননি, রানও করে যান তর তর করে। মুশফিকের সঙ্গে ৫০ রানের পর মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে বাঁধেন ৪৮ রানের জুটি।
কিন্তু ৮৮ বলে ৭৫ রান করার পর আদিল রশিদের অসাধারণ এক বলে এলবি হয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জুটি ভেঙ্গে যাবার পর মোসাদ্দেকও আউট হয়ে যান দ্রুত। ৪৯ বলে ২৯ করার পর সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন এ তরুণ ব্যাটসম্যান।
নাসিরের দিকে চোখ ছিল সবার। প্রায় এক বছর পর একাদশে জায়গা পাওয়া নাসিরের উপর প্রচণ্ড চাপও ছিল। কিন্তু সেই চাপ জয় করলেন নাসির। তিনি যে ভালো ফিনিশার সেটার প্রমাণ দিয়েছেন আবারও। ২৭ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
তবে কাজের কাজটি করে গেছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তুজা। ২৯ বলে ৪৪ রানের ( তিন ছ্কা ও দুই চার) অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মাশরাফির কল্যাণেই শেষ পর্যন্ত ২৩৮ রানের সম্মানজনক স্কোর দাঁড় করাতে পারে বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডের পক্ষে ওয়েকস, আদিল রশিদ ও বেল ২টি করে উইকেট নেন।
ব্যাটিং উইকেট। ২৩৯ রানের টার্গেট শক্তিশালী ইংলিশ ব্যাটিংয়ের কাছে বড় কিছু নয়। তবে শুরুতেই সেই শক্তিশালী ইংলিশ ব্যাটিংকে কাঁপন ধরিয়ে দেন অধিনায়ক মাশরাফি।
ব্যাট হাতে ২৯ বলে ৪৪ রান করার পর বোলিংয়েও আগুন ঝরান ৩৪ বছর বয়সী এ পেসার। প্রথম স্পেলে ৬ ওভার বল করে মাত্র ২১ রান দিয়ে তিন তিনটি উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেন তিনি।
গত দেড় বছর ধরে দলের এক নম্বর স্ট্রাইক বোলার মোস্তাফিজুর রহমান। ইনজুরির কারণে তিনি দলের বাইরে।তাই বাড়তি দায়িত্ব এসে পড়েছে অন্যান্য পেসারদের উপর।
প্রায় প্রতি ম্যাচেই ব্রেক থ্রু হচ্ছে মাশরাফির হাত ধরে। এ ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এদিন রীতিমত আগুনে বোলিং তার।
নিজের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে বধ করে ভিঞ্চকে (৫)। এর পরের উইকেটটি নেন সাকিব। ০ রানে ডাকেটকে ফেরান এ স্পিনার। নিজের তৃতীয় ওভারে পঞ্চম বলে বিপদজনক জেসন রয়কে (১৩) ফিরিয়ে গ্যালারিতে উন্মাদনা এনে দেন মাশরাফি।পরের ওভারেও উইকেট নেন মাশরাফি। এবারের শিকার বেন স্টোকস (০), যিনি গত ম্যাচে হাঁকিয়েছিলেন সেঞ্চুরি।মাশরাফির পেস আগুনে রীতিমত পুড়ছে ইংলিশ ব্যাটিং। মাত্র ২৬ রানে নেই ৪ উইকেট। দারুণ চাপে সফরকারীরা। বাংলাদেশ তখন পুরোপুরি ম্যাচে।
তবে অধিনায়ক জস বাটলার ও বারস্টো ৭৯ রানের জুটি বেঁধে বিপর্যয় অনেকটাই সামলে নেন। এই অবস্থায় জুটি ভেঙ্গে কাজের কাজ করেন তাসকিন আহমেদ। ৩৫ রানে বারস্টোকে ফেরান তিনি।
বাংলাদেশকে আরো স্বস্তি এনে দেন প্রায় এক বছর পর একাদশে ফেরা নাসির। লড়াকু মঈন আলীকে তিনি ফেরান ৪ রানে।
এরপর অধিনায়ক জস বাটলারকে ৫৭ রানে ফিরিয়ে চূড়ান্ত স্বস্তি এনে দেন তাসকিন আহমেদ। তবে এই আউটটা ছিল অন্যরকম ঘটনা। এলবির জোরালো আবেদন করেছিলেন তাসকিন। কিন্তু তাসকিনের সেই আবেদন কানে তুলেননি আম্পায়ার শরফুদৌল্লাহ ইবনে সৈকত। এই অবস্থায় রিভিউ চায় বাংলাদেশ। জেনুইন আবেদন ছিল। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পক্ষে যায় বাংলাদেশের।
নিজের পরের ওভারেই ওয়েকেসকে ৭ রানে ফিরিয়ে দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান তাসকিন। এরপর নিজের প্রথম ওভারে উইলিকে (৯) ফেরান মোসাদ্দেক। অবশ্য শেষ উইকেট জুটি অদিল রশিদ-জ্যাক বল মিলে ৪৫ রান তুলে বাংলাদেশের জয়কে বিলম্বিত করে রাখেন। তবে শেষ উইকেট জুটিও ভাঙ্গেন মাশরাফি। বলকে ২৮ রানে ফেরান তিনি। ইংল্যান্ড অল আউট হয় ২০৪ রানে, ৪৪.৪ ওভারে। আদিল রশিদ ৩৩ রান করে অপরাজিত থাকেন।
৮.৪ ওভারে মাত্র ২৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে জয়ের নায়ক মাশরাফি। ৪৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তাসকিন।এছাড়া সাকিব, মোসাদ্দেক ও নাসির ১টি করে উইকেট নেন।