ঢাকা ০৮:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টিউলিপের ক্ষমা চাওয়া উচিত, বললেন ড. ইউনূস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:১৭:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৬ বার

যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিককে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।পাশাপাশি টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সম্প্রতি প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেছেন, ‘লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পত্তির বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং যদি প্রমাণ হয় শেখ হাসিনা সরকারের সময় যে ব্যাপকভাবে লুটপাট হয়েছে সেখান থেকে সুবিধা পেয়েছেন, তাহলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো উচিত।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে তাকে (টিউলিপ) ও তার পরিবারকে দেওয়া সম্পত্তি ভোগ করার জন্য তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে বিপাকে আছেন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক। এরই মধ্যে দেশটির বিরোধী দল তার পদত্যাগ দাবি করেছে।

টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ‘ব্রিটিশ সরকারের দুর্নীতি দমন মন্ত্রী হয়েছেন টিউলিপ এবং তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হয় না।’

তিনি বলেন, ‘তিনি যখন কাজটি (দুর্নীতি) করেছেন, তখন হয়তো বুঝতে পারেননি। কিন্তু এখন তো বুঝতে পারছেন। এখন আপনার বলা উচিত, আমি দুঃখিত। আমি তখন বিষয়টি (দুর্নীতির) জানতাম না। এখন আমি জনগণের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং পদত্যাগ করছি। কিন্তু তা বলছেন না। বরং নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।’

এরপর সঙ্গে সঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘তার (টিউলিপের) পদত্যাগ করা উচিত-এমন বলাটা আমার কাজ না।’

জানা গেছে, বাংলাদেশেই এখন টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি এবং পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নিজ খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের উপহারের ফ্ল্যাটে থাকা নিয়ে বিতর্ক চলছে তাকে নিয়ে।

অভিযোগের সূত্রে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি বেইডনক ট্রেজারি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা বলেন, ‘কিয়ের স্টারমারের উচিত শিগগির টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করা।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (স্টারমার) তার বন্ধুকে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, কিন্তু সেই মন্ত্রী নিজেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত।’

কেমি তার পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, টিউলিপ এখন সরকারের মনোযোগকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার বিষয়ে পরিণত হয়েছেন। ‘সরকারের উচিত তাদেরই তৈরি করা অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধানে মনোযোগ দেওয়া’, যোগ করেন তিনি।

টিউলিপকে বরখাস্ত করার যুক্তি হিসেবে কেমি উল্লেখ করেন, ‘তার সঙ্গে শেখ হাসিনার শাসনামলের যোগসূত্র নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের (অন্তর্বর্তী) সরকার।’

তবে ইতোমধ্যে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন টিউলিপ। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অব মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস) লউরি ম্যাগনাসকে একটি চিঠি লিখেছেন তিনি। চিঠিতে মন্ত্রী পর্যায়ের কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন টিউলিপ সিদ্দিক।

এর আগে ডাউনিং স্ট্রিট নিশ্চিত করেছে, স্যার লউরি এখন একটি ‘যাচাইকরণ’ (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং) প্রক্রিয়া অনুসরণ করবেন। এ থেকে নির্ধারিত হবে টিউলিপের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত বা অন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

টিউলিপের ক্ষমা চাওয়া উচিত, বললেন ড. ইউনূস

আপডেট টাইম : ০৬:১৭:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিককে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।পাশাপাশি টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সম্প্রতি প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেছেন, ‘লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পত্তির বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং যদি প্রমাণ হয় শেখ হাসিনা সরকারের সময় যে ব্যাপকভাবে লুটপাট হয়েছে সেখান থেকে সুবিধা পেয়েছেন, তাহলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো উচিত।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে তাকে (টিউলিপ) ও তার পরিবারকে দেওয়া সম্পত্তি ভোগ করার জন্য তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে বিপাকে আছেন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক। এরই মধ্যে দেশটির বিরোধী দল তার পদত্যাগ দাবি করেছে।

টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ‘ব্রিটিশ সরকারের দুর্নীতি দমন মন্ত্রী হয়েছেন টিউলিপ এবং তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হয় না।’

তিনি বলেন, ‘তিনি যখন কাজটি (দুর্নীতি) করেছেন, তখন হয়তো বুঝতে পারেননি। কিন্তু এখন তো বুঝতে পারছেন। এখন আপনার বলা উচিত, আমি দুঃখিত। আমি তখন বিষয়টি (দুর্নীতির) জানতাম না। এখন আমি জনগণের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং পদত্যাগ করছি। কিন্তু তা বলছেন না। বরং নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।’

এরপর সঙ্গে সঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘তার (টিউলিপের) পদত্যাগ করা উচিত-এমন বলাটা আমার কাজ না।’

জানা গেছে, বাংলাদেশেই এখন টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি এবং পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নিজ খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের উপহারের ফ্ল্যাটে থাকা নিয়ে বিতর্ক চলছে তাকে নিয়ে।

অভিযোগের সূত্রে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি বেইডনক ট্রেজারি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা বলেন, ‘কিয়ের স্টারমারের উচিত শিগগির টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করা।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (স্টারমার) তার বন্ধুকে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, কিন্তু সেই মন্ত্রী নিজেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত।’

কেমি তার পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, টিউলিপ এখন সরকারের মনোযোগকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার বিষয়ে পরিণত হয়েছেন। ‘সরকারের উচিত তাদেরই তৈরি করা অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধানে মনোযোগ দেওয়া’, যোগ করেন তিনি।

টিউলিপকে বরখাস্ত করার যুক্তি হিসেবে কেমি উল্লেখ করেন, ‘তার সঙ্গে শেখ হাসিনার শাসনামলের যোগসূত্র নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের (অন্তর্বর্তী) সরকার।’

তবে ইতোমধ্যে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন টিউলিপ। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অব মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস) লউরি ম্যাগনাসকে একটি চিঠি লিখেছেন তিনি। চিঠিতে মন্ত্রী পর্যায়ের কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন টিউলিপ সিদ্দিক।

এর আগে ডাউনিং স্ট্রিট নিশ্চিত করেছে, স্যার লউরি এখন একটি ‘যাচাইকরণ’ (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং) প্রক্রিয়া অনুসরণ করবেন। এ থেকে নির্ধারিত হবে টিউলিপের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত বা অন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না।