সমকামিতা ভালোবাসার অধিকার নয়

মাহফুজা মুন্না
সমকামিতার ব্যাপারে আমার অবস্থান বরাবরই “না”। আমি একে ভালোবাসার অধিকার বলতে নারাজ বরং মানসিক বিকার বলতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। কেন?? কারণ জীবকুল (উদ্ভিদ ও প্রাণী) সৃষ্টিগতভাবেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে তা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব থেকে শুরু করে অতিকায় তিমি পর্যন্ত। আণুবীক্ষণিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যেও মেল ফিমেল আছে, এমনকি ক্ষুদ্রাকার ব্যাকটেরিয়ার পর্যন্ত গ্রাম পজেটিভ ও গ্রাম নেগেটিভ সমন্বয়ে গঠিত। তাহলে যারা সমকামী তারা স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তির কি করে ভাবি?? কেন ভাববো না তারা মানসিক বিকারগ্রস্থ???
বাংলাদেশের ঝিনাইদহের যে গ্রামটিতে আত্মহত্যার প্রবনতা খুব বেশী তাদের বলি মানসিক ভারসাম্যহীন, যারা অতিরিক্ত রাগী তাদের বলি মানসিক সমস্যাগ্রস্থ ও চিকিৎসা প্রয়োজন, যারা মদ, গাজা, হেরোইন, ইয়াবা ইত্যাদি নেশায় নেশাগ্রস্থ তাদের বলি মানসিক ভারসাম্যহীন ও চিকিৎসা প্রয়োজন কিন্তু সমকামিদের বেলায় কেন নয়?? কানাডা সরকার যখন সমকামী আইন পাশ করে তখন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “ইতর প্রাণীও তাদের সঙ্গী চিনতে ভুল করে না”।
সৃষ্টির সেরা মানুষ কেন ভুল করবে??কিন্তু মানুষ ভুল করে কারণ তারা মানুষ আর যা কিছু বৈচিত্র্য আর বিকৃতি তা মানুষের মাঝেই বিরাজমান। গিনেজ রেকর্ডগুলো খতিয়ে দেখলেই কিছুটা এর নমুনা মিলবে। আমাদের শিশুরা যদি নাকে আঙ্গুল দিয়ে খুটে তা কি আমরা প্রশ্রয় দেই? না কি যে বাচ্চা আংগুল চুষে তাকে তা করতে দেই?? কেন দেই না? এগুলিওতো ওদের ভালোলাগা।আরও কতো রকম ভালোবাসাতো ছড়িয়ে আসে আশেপাশে যেমন চাচা ভাতিজার প্রেম, শ্যালিকা দুলাভাইয়ের প্রেম, বাবা মেয়েকে ধর্ষণ করে, শিক্ষক ছাত্রিকে। কই এগুলো তো প্রশ্রয় দেই না তবে সমকামিতাকে কেন??আগেরগুলি সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ তাই? না কি ধর্মীয় ভাবে নিষিদ্ধ? সামাজিক আইন বলে কিছু নাই, ধর্মীয় বিধি নিষেধ থেকেই সামাজিকতার উৎপত্তি। ইসলাম ধর্ম সমকামিতাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেছে। শুধু তাই নয়, লূত সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো শুধু সমকামিতার কারণে, পবিত্র কুরআনে সূরা হুদ এ বিস্তারিত দেয়া আছে।
সমকামিতা একটা হুজুগ বলে আমি মনে করি। এর প্রতিকারও সম্ভব বলে মনে করি। নাথিং ইজ ইম্পসিবল, মাদকাশক্তির যদি চিকিৎসা থাকে তবে সমকামিতার কেন নয়? হুজুগ বললাম এই কারণে যে মানুষের কৈশোর ও যৌবনে অনেক হুজুগেপনা থাকে আর এগুলি আসে কোন কিছুর সংস্পর্শ থেকে যেমন, একসময় লাভ স্টোরি সিনেমার কল্যানে ঘরে ঘরে টিন এজ পোলাপান পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করা শুরু করল, তারও আগে সিনেমায় বড়লোকের ছেলে গরিবের মেয়ে নয়তো বড়লোকের মেয়ে গরিবের ছেলে প্রেম কাহিনী অনেককে প্রভাবিত করে অঘটন কুঘটন ঘটেছে, এরপর বয়স্কা রমণীর সাথে প্রেম, অতঃপর সিনেমায় এসেছে সমকামিতা কাজেই এটাই লেটেষ্ট, যা ছিল মনে মনে গুণ গুণ তা এখন আওয়াজ।
যে কারণে বললাম যে সমকামিতার প্রতিকার সম্ভব সেটা আমার দেখা দুটি ঘটনা। একটু ভূমিকা বলে নেই। গ্রামে প্রতি বছর যাত্রাপালা, সার্কাস, কবিগান, আরও ছোট ছোট নাটকপালা হোতো। বড় গৃহস্থ যারা তারা এসব ছোট দল হায়ার করতো, আর্টিস্টরা এদের বাড়িতেই থাকত, এসব আর্টিস্টদের মধ্যে কোন কোন নারী পুরুষের ভুমিকায় অভিনয় করতো আবার কোন কোন পুরুষ নারীর চরিত্রে অভিনয় করতো। এমনই এক বড়োলোক গৃহস্থ বাড়ির মেয়ে নাটক দেখার পর নিজেকে ছেলে সাজাতে পছন্দ করে। ও এমনিতেই একটু পাগলাটে , বড় হয়েছে তাই শাড়ি পরত কিন্তু সাজগোজ করতো না। ও চুপি চুপি ওর ভাইয়ের লুঙ্গি আর শার্ট নিয়ে এসে আমাদের পুকুর পারে পরে অন্যান্য সখিদের দেখাতো। আমাদের পুকুর ছিল বাড়ির ভিতরে, খুব নিরিবিলি, ওদিকে কোন পুরুষের যাওয়া নিষেধ ছিল, পুকুরের পানি রান্নার কাজে ব্যবহার হোতো। পরবর্তীতে দেখি সে সখিদের সাথে অভিনয় করছে, এরপর দেখি ঘনিষ্ঠ সিন, লজ্জা শরমও দেখি কমে যাচ্ছে। একদিন দেখি শাড়ি খুলে ফেলছে তাই দেখে দৌড়ে এসে হাপাতে হাপাতে আম্মাকে এসে বলতেই আম্মা জোরে ডাক দেয়ায় দৌড়ে পালায়। এরপর আম্মা ওর মাকে কিছু বলেছিল কিনা জানি না তবে একদিন শুনি পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে শুনে পালিয়েছে। তার কিছুদিন পর ভালো চাকুরী করে সুদর্শন এক পাত্রের সাথে ওর বিয়ে হয়।
এর প্রায় তিন চার বছর পর কলেজ ছুটি হলে বাড়িতে গিয়ে শুনি ঐ বুজি(বোন)ও বাপের বাড়ি এসেছে। আমার খুব আগ্রহ হোল জানতে যে উনি কেমন আছে। গিয়ে দেখলাম বসে বসে ভীষণ সুন্দর বিশাল এক সিকা বুনছে রঙ্গিন সুতা দিয়ে, লেপ তোষক রাখবে বলে, বুনানো প্রায় শেষ, পাশে শুয়ে আছে ফুটফুটে এক মেয়ে, কি শান্ত হয়ে গেছে বুজি! আমি দুষ্টুমি করলাম, “তুমি কি দুলাভাইয়ের শার্ট আর লুঙ্গি পরো?” হেসে উঠল, লজ্জা পেয়ে বলল, “সর! কি কছ! আমি কি পোলাপান আছি? তোমার দুলাভাই খুব ভালো মানুষ, পরলেও কিছু কবে না তয় ঘরের মইধ্যে”।
তখন সমকামী ব্যাপারটা বুঝতাম না, অনেক পরে যখন বুঝেছি তখন চিন্তা হয়েছিল যে ঐ বুজি কি সমকামিতায় আক্রান্ত হচ্ছিল?? আর একজন ছিল যে বউ জামাই খেলতে চাইত, আমাকে বলত তুই বউ হবি আমি জামাই, আমি যখন কড়া চোখে বলতাম, “বদমাইশ কোথাকার, আম্মাকে বলে দেব”, ব্যস দৌড়ে পালিয়ে যেতো। সেই মেয়েও মহা সুখে ঘরকন্না করছে।
অতঃপর যে কারণে এই লেখা। ধী নামে একটি কার্টুন তৈরী হয়েছে যেখানে ধী নামে মফঃস্বলের একটি মেয়ে আর একটি মেয়ের প্রেমে পরেছে। এই কার্টুন তৈরির উদ্দেশ্য “ভালোবাসার স্বাধীনতা পৌঁছে দেয়া, কে কাকে ভালবাসবে এটা তার নিজের”। এদের শুধু জিজ্ঞেস করতে চাই, “ভালোবাসার স্বাধীনতা নিজের, মৃত্যুর স্বাধীনতা ও কি নিজের? আপনাদের কেউ কেউ বিয়ের পর বাচ্চা হওয়ার পর টের পেয়েছে সে সমকামী(এমন কেউ নিজ দেশে টিকতে না পেরে কানাডাবাসি হয়েছে), এখন সেই বাচ্চা যদি আপনাদের এই জীবন মেনে না নিয়ে আত্মহত্যা করতে চায় সেটা কি আপনি তার স্বাধীনতা ভেবে মেনে নিবেন?”
আমরা কি পারি না একটু সচেতন হতে! পরিবারের বাচ্চাদের দিকে সুনজর রাখতে ! তার কোন আচরন অস্বাভাবিক দেখলে বকাঝকা না করে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে! আমি চাই আর কেউ ধী না হোক, সব মেয়ে মা হোক।
সমকামিতা নিয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি দেয়া হোলঃ
আল কুরআনঃ “এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ? তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ।” (আরাফ ৭:৮১-৮২)
“আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা লুতের জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা অপরাধী।” (২৯:৩১)
“ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স) বলেছেন, অভিশপ্ত সে যে কিনা কোন পশুর সাথে সেক্স করে, আর অভিশপ্ত সে যে কিনা সেটা করে যা লুতের সম্প্রদায় করত।” (আহমাদ:1878)
হাদিসে সমকামিতা রোধের প্রিকশন বা পূর্বসাবধানতা স্বরূপ যে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছেঃ
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স) বলেন, এক পুরুষ আরেক পুরুষের সাথে বা এক নারী আরেক নারীর সাথে ঘুমাতে পারবে না লজ্জাস্থান ঢাকা ব্যতীত। তবে ব্যতিক্রম করা যাবে, শিশপুত্র আর পিতার ক্ষেত্রে মা ও কন্যাশিশুর ক্ষেত্রে।” (আবু দাউদ, 31:4008)
“আবু সাইদ আল খুদ্রি বলেন, রাসুল (স) বলেছেন, একজন পুরুষ আরেক পুরুষের যৌনাঙ্গ দেখবে না। এক নারী আরেক নারীর যৌনাঙ্গ দেখবে না। এক পুরুষ আরেক পুরুষের সাথে অন্তত অন্তর্বাস বা আন্ডারগার্মেন্ট না পরে একই চাদরের নিচে ঘুমাবে না। এক নারী আরেক নারীর সাথে কখনও অন্তত অন্তর্বাস বা আন্ডারগার্মেন্ট না পরে একই চাদরের নিচে ঘুমাবে না।”

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর