ঢাকা ০৬:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জলে ইলিশ কূলে পুলিশ জেলেদের মুখে হাসি বাংলাদেশে এবার সবচেয়ে বেশি ইলিশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • ২৫২ বার

সাগরে চলছে ইলিশ ধরার মৌসুম। প্রতিদিন বঙ্গোপসাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেদের মুখে হাসি। গত ১০ বছরের বাংলাদেশে এবার সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়েছে। তাই চট্টগ্রাম নগরীর ফিশারিঘাটে প্রতিদিন শত শত ট্রলার ভিড়ছে ইলিশ মাছ নিয়ে। জল থেকে এসব ইলিশ সংগ্রহ করে কূলে আসলে তাদের পোহাতে হচ্ছে না বিড়ম্বনা। মাছ নিয়ে কূলে আসলে চাঁদা দিতে হয় পুলিশকে। এছাড়াও রয়েছে নদী পাড়ের আশেপাশে গড়ে উঠা নানা সংগঠন। সাগর থেকে মাছ ভর্তি ট্রলার আসলেই তাদেরও দিতে হয় চাঁদা।

এসব অভিযোগ করলেন কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের শত শত জেলেরা। কূলে ছাড়াও তাদের সাগরের মাঝখানে প্রতি ট্রলার প্রতি চাঁদা দিতে হচ্ছে জলদস্যুদের। ইলিশ আনন্দে তাদের বেদনার কথাগুলো বললেন জেলেরা ও ট্রলার মালিকরা। তারা বললেন, জলে ইলিশ পেলেও কূলে এসে পুলিশের বিড়ম্বনা বেশি।

জানা যায়, ইলিশ ধরার মৌসুম এলেই জেলেরা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরেন। শত শত ট্রলার নিয়ে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার ফিশারিঘাটে এসে ভিড় জমান। প্রতিদিন ভোর হলেই শুরু হয় মাছের বিকি-কিনি। লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকা। ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এসব জেলেরা। কিন্তু সাগরে গিয়ে তাদের পোহাতে হয় নানা বিড়ম্বনা। জেলেরা জানান, সাগরের জলে গেলে দস্যু আর ঘূর্ণিঝড়ের ভয়, কূলে এলেই দিতে হয় চাঁদা, বাজারে মাছ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। জীবনের তোয়াক্কা না করে জীবিকার টানে সাগর থেকে মাছ ধরে এনে চাঁদা দিতে হচ্ছে পুলিশ ও নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠনকে।

গৌতম দাশ নামের এক জেলে জানান, জীবন বাজি রেখে জেলেরা সাগরে গিয়ে মাছ ধরেন। বিশেষ করে ইলিশ ধরার মৌসুম আসলেই সাগরে গেলেই রয়েছে জলদস্যু আতঙ্ক। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন মোহনায় গভীর রাতে অবস্থান করে জলদস্যুরা। টাকা বা মালামাল না দিলে তারা মাছভর্তি ট্রলার নিয়ে যায়। এমনকি জেলেদের খুন করতেও দ্বিধা করে না। জলদস্যুদের হাতে গত তিন বছরে খুন হয়েছে চার শতাধিক জেলে। দস্যুদের দমনে কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেই বললে চলে।

অন্যদিকে শৈবাল জলদাস নামের অপর এক জেলে অভিযোগ করে বলেন, ইলিশ মাছ ধরতে গিয়ে ঝড় আর জলদস্যুদের হাত থেকে বেঁচে, মাছ ধরে কূলে এলেও পোহাতে হয় নানান বিড়ম্বনা। মাছ ধরে ফিশারিঘাটে এলেই স্থানীয় প্রভাবশালীদের ট্রলার প্রতি চারশ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। ফিশারিঘাট এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি মহল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাঝিদের কাছ থেকে এ চাঁদা আদায় করে। এছাড়াও পুলিশকেও দিতে হয় চাঁদা। প্রতি ট্রলারে ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় তাদের।

ফিশারিঘাট এলাকায় যারা চাঁদা আদায় করেন তাদের মধ্য থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, চাঁদা নয়, জেলেদের কাছ থেকে তারা ঘাট ভাড়া নেন।

এ ব্যাপারে কোতায়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ জসীম উদ্দিন বলেন, ফিশারিঘাটে জেলেদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেওয়া হয়না। জেলেদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে কোনো ভ্রাম্যমান পুলিশ টিম তাদের কাছ থেকে চাঁদা নিলে সেটা ভিন্ন কথা। এ ব্যাপারে যৌক্তিক অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও অন্য কেউ যদি তাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয় থানায় অভিযোগ দিলে এ ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ফিশারিঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, এখন আগের মতো জলদস্যুদের ভয় নেই। জলদস্যু দমনের ব্যাপারে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ট অভিযান পরিচালনা করেছে। ফলে জলদস্যুরা কোস্টগার্ড ও নৌ-বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ সীমানার বাইরে ডাকাতি করছে। কোনো মহাজন জেলেদেরকে ঠকালে আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো। ইলিশ মাছ নিয়ে ট্রলার আসলে পুলিশকে চাঁদা দিতে হয় কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। বলেন, এটি ট্রলার মালিকরা জানে।

জলদস্যূদের ব্যাপারে কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান ক্যাপ্টেন শহীদুল ইসলাম জানান, এখন সাগরে ইলিশ ধরার ভরা মৌসুম। তাই হয়তো জলদস্যুরা একটু সমস্যা করতে পারে। সে ব্যাপারে কোস্টগার্ড সজাগ রয়েছে। তেমন সমস্যা হবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জলে ইলিশ কূলে পুলিশ জেলেদের মুখে হাসি বাংলাদেশে এবার সবচেয়ে বেশি ইলিশ

আপডেট টাইম : ১২:১৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সাগরে চলছে ইলিশ ধরার মৌসুম। প্রতিদিন বঙ্গোপসাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেদের মুখে হাসি। গত ১০ বছরের বাংলাদেশে এবার সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়েছে। তাই চট্টগ্রাম নগরীর ফিশারিঘাটে প্রতিদিন শত শত ট্রলার ভিড়ছে ইলিশ মাছ নিয়ে। জল থেকে এসব ইলিশ সংগ্রহ করে কূলে আসলে তাদের পোহাতে হচ্ছে না বিড়ম্বনা। মাছ নিয়ে কূলে আসলে চাঁদা দিতে হয় পুলিশকে। এছাড়াও রয়েছে নদী পাড়ের আশেপাশে গড়ে উঠা নানা সংগঠন। সাগর থেকে মাছ ভর্তি ট্রলার আসলেই তাদেরও দিতে হয় চাঁদা।

এসব অভিযোগ করলেন কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের শত শত জেলেরা। কূলে ছাড়াও তাদের সাগরের মাঝখানে প্রতি ট্রলার প্রতি চাঁদা দিতে হচ্ছে জলদস্যুদের। ইলিশ আনন্দে তাদের বেদনার কথাগুলো বললেন জেলেরা ও ট্রলার মালিকরা। তারা বললেন, জলে ইলিশ পেলেও কূলে এসে পুলিশের বিড়ম্বনা বেশি।

জানা যায়, ইলিশ ধরার মৌসুম এলেই জেলেরা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরেন। শত শত ট্রলার নিয়ে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার ফিশারিঘাটে এসে ভিড় জমান। প্রতিদিন ভোর হলেই শুরু হয় মাছের বিকি-কিনি। লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকা। ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এসব জেলেরা। কিন্তু সাগরে গিয়ে তাদের পোহাতে হয় নানা বিড়ম্বনা। জেলেরা জানান, সাগরের জলে গেলে দস্যু আর ঘূর্ণিঝড়ের ভয়, কূলে এলেই দিতে হয় চাঁদা, বাজারে মাছ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। জীবনের তোয়াক্কা না করে জীবিকার টানে সাগর থেকে মাছ ধরে এনে চাঁদা দিতে হচ্ছে পুলিশ ও নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠনকে।

গৌতম দাশ নামের এক জেলে জানান, জীবন বাজি রেখে জেলেরা সাগরে গিয়ে মাছ ধরেন। বিশেষ করে ইলিশ ধরার মৌসুম আসলেই সাগরে গেলেই রয়েছে জলদস্যু আতঙ্ক। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন মোহনায় গভীর রাতে অবস্থান করে জলদস্যুরা। টাকা বা মালামাল না দিলে তারা মাছভর্তি ট্রলার নিয়ে যায়। এমনকি জেলেদের খুন করতেও দ্বিধা করে না। জলদস্যুদের হাতে গত তিন বছরে খুন হয়েছে চার শতাধিক জেলে। দস্যুদের দমনে কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেই বললে চলে।

অন্যদিকে শৈবাল জলদাস নামের অপর এক জেলে অভিযোগ করে বলেন, ইলিশ মাছ ধরতে গিয়ে ঝড় আর জলদস্যুদের হাত থেকে বেঁচে, মাছ ধরে কূলে এলেও পোহাতে হয় নানান বিড়ম্বনা। মাছ ধরে ফিশারিঘাটে এলেই স্থানীয় প্রভাবশালীদের ট্রলার প্রতি চারশ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। ফিশারিঘাট এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি মহল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাঝিদের কাছ থেকে এ চাঁদা আদায় করে। এছাড়াও পুলিশকেও দিতে হয় চাঁদা। প্রতি ট্রলারে ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় তাদের।

ফিশারিঘাট এলাকায় যারা চাঁদা আদায় করেন তাদের মধ্য থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, চাঁদা নয়, জেলেদের কাছ থেকে তারা ঘাট ভাড়া নেন।

এ ব্যাপারে কোতায়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ জসীম উদ্দিন বলেন, ফিশারিঘাটে জেলেদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেওয়া হয়না। জেলেদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে কোনো ভ্রাম্যমান পুলিশ টিম তাদের কাছ থেকে চাঁদা নিলে সেটা ভিন্ন কথা। এ ব্যাপারে যৌক্তিক অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও অন্য কেউ যদি তাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয় থানায় অভিযোগ দিলে এ ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ফিশারিঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, এখন আগের মতো জলদস্যুদের ভয় নেই। জলদস্যু দমনের ব্যাপারে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ট অভিযান পরিচালনা করেছে। ফলে জলদস্যুরা কোস্টগার্ড ও নৌ-বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ সীমানার বাইরে ডাকাতি করছে। কোনো মহাজন জেলেদেরকে ঠকালে আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো। ইলিশ মাছ নিয়ে ট্রলার আসলে পুলিশকে চাঁদা দিতে হয় কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। বলেন, এটি ট্রলার মালিকরা জানে।

জলদস্যূদের ব্যাপারে কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান ক্যাপ্টেন শহীদুল ইসলাম জানান, এখন সাগরে ইলিশ ধরার ভরা মৌসুম। তাই হয়তো জলদস্যুরা একটু সমস্যা করতে পারে। সে ব্যাপারে কোস্টগার্ড সজাগ রয়েছে। তেমন সমস্যা হবে না।