ঢাকা ০২:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি ‘না ভোট’ ফিরছে? নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে অংশীজনের মত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৭:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • ২ বার

অবাধ, সুষ্ঠু ও বিতর্কহীন নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে কমিশন। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে অংশীজনের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অনেকগুলো প্রস্তাবনা কমিশনের কাছে জমা পড়েছে। সবগুলো সমন্বিত করে একটি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেবেন কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি জানিয়েছেন, অংশীজনের মতামত নিয়ে নিজেদের মধ্যে বসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে।

সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন : গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উঠে এসেছে। তার মধ্যে অন্যতম রাষ্ট্রপতি পদে সরাসরি ভোটে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপতি হতে হবে দলনিরপেক্ষ। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রার্থী হিসেবে কাউকে মনোনীত না করে ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে হবে।

‘না’ ভোট : অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এমন একটা পদ্ধতি দিতে চায়, যেন একদলীয় শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হয়। সেজন্য যে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার সুযোগ বন্ধের প্রস্তাব এসেছে কমিশনের কাছে। সে ক্ষেত্রে ‘না’ ভোট পদ্ধতি চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন অনেকে। যেন কোনো একজন প্রার্থীকে যোগ্য মনে না করলে তাকে ‘না’ ভোট দিয়ে পরাজিত করে নতুন প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ থাকে। এমন প্রস্তাব কমিশনের কাছে এসেছে।

নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন পদ্ধতি : আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা ছিল পূর্বের সরকারের ত্রুটিপূর্ণ আইন সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন পদ্ধতি চালু করা। সেখানে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে একটি কমিটি হবে। সেই কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেবে। এরপর যোগ্যরা আবেদন করলে তাদের মধ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব এসেছে।

প্রবাসীদের ভোট কাজে লাগানো : জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, বিশে^র বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ৪৮ লাখের বেশি বাঙালি রয়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এই প্রবাসীদের বেশির ভাগই ভোট দানের সুযোগ বঞ্চিত থাকেন। তাই এবার প্রবাসীদের ভোট কাজে লাগাতে চায় সংস্কার কমিশন। তাদের জন্য ইলেট্রনিক ভোট পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব উঠেছে। ইমেইল বা প্রযুক্তির সাহায্যে প্রবাসীরাও যাতে সরকার গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে সেই ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব এসেছে।

রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রের চর্চা : কোনো এক পরিবার বা ব্যক্তির কাছে রাজনৈতিক দল যেন জিম্মি না থাকে সেজন্য দলগুলোতে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠায় একমত পোষণ করেছেন অনেকে। দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক যেন ভোটের মাধ্যমে হয় বা এমন কোনো পদ্ধতি চালু করা যেন একই ব্যক্তি বারবার সভাপতি থাকতে না পারে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন এক শিডিউলে করা : ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন নিয়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং ব্যয় সাশ্রয়ী করতে এসব সংস্থায় এক শিডিউলে ভোটের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করছে সংস্কার কমিশন। এজন্য একাধিক প্রস্তাবনা এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম মেয়র পদে ভোট না করে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে। আর নির্বাচিতরা তাদের প্রশাসনিক কাঠামো ঠিক করবেন। তাদের মধ্যে থেকে একজন মেয়র হবেন। পার্শ^বর্তী দেশে এই পদ্ধতি চালু রয়েছে। আর এক শিডিউলে ভোটে ব্যয় সাশ্রয়ী হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ।

উপজেলায় ‘নারী ভাইস চেয়ারম্যান’ পদ তুলে দেওয়া : কমিশনের কাছে প্রস্তাবনা এসেছে উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান থাকবে না। প্রত্যেকটি উপজেলায় ওয়ার্ড হবে। একটা উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন থাকলে ৩০টি আসন হবে। ৩০ জন নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্ধারণ করবেন। জেলা পরিষদেরও ওয়ার্ড থাকবে বেশি। তখন প্রার্থী হওয়া ও নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বাড়বে। তবে আদিবাসীদের জন্য কতটুকু বাড়বে তা দেখার বিষয়। না বাড়লে তাদের স্থায়ী কমিটিতে নিতে হবে।

সংরক্ষিত নয়, নারীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন : নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার জানান, নারীরা সরাসরি নির্বাচন চেয়েছেন। অনেকে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি চেয়েছেন। নারীবান্ধব নির্বাচন হতে হবে। ইসি ও ইসি কর্মকর্তাদের এক-তৃতীয়াংশ নারী হতে হবে। দলীয় কার্যক্রমে নারী ৩৩ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনী ব্যয় সংকোচন ও নারী আসন ১৫০টি করার কথা বলেছেন। কেউ কেউ ১০০টি আসনের কথাও বলেছেন। অনেকে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চেয়েছেন।

হস্তক্ষেপ রুখে দেওয়ার বিধান : অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কেউ যাতে হস্তক্ষেপ করতে না পারে, তেমন বিধি-বিধান চান নির্বাচন কর্মকর্তারা। কমিশনের কাছে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন তো একা নির্বাচন করে না। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রের সব অর্গান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করে। নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে সংবিধান ও আইনে, সেই ক্ষমতা যেন পুরোপুরি প্রয়োগ করা যায়। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যাতে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কর্মকর্তারা কোনো ধরনের বাধাগ্রস্ত না হন, এটিও নিশ্চিত করতে হবে।

আদিবাসী প্রতিনিধি নিশ্চিতের প্রস্তাব : কমিশনের কাছে আদিবাসী প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন ব্যবস্থায় অবশ্যই আদিবাসীদের প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এটি থাকবে। সংসদে সংরক্ষিত ৫০টি আসন আছে। এটি শুধু দল নয়, পিছিয়ে পড়া ও আদিবাসীসহ যাদের প্রতিনিধি কখনও সংসদে প্রতিনিধি আসেনি তাদের মধ্যে থেকে বাছাই করা হবে।

বিতর্কিত নির্বাচনের জন্য ইসির সাবেকদের বিচারের ব্যবস্থা : বিগত কমিশনগুলো বিতর্কিত নির্বাচন করে শপথ ভঙ্গ ও সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। অনেকেই তাদের বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে।

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে অংশীজনের সঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় অব্যাহত আছে। কমিশন বিভিন্ন মহলের প্রস্তাবনা ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তা তুলে ধরবেন। এ বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা এখনও কোনোটাই চূড়ান্ত করিনি। নিজেরা বসে ভেবে-চিন্তে মতামত দেব। একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য যা করা দরকার তাই করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা বসছি না। তাদের মতামত লিখিতভাবে নেওয়া হবে। দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে সরকার।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি ‘না ভোট’ ফিরছে? নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে অংশীজনের মত

আপডেট টাইম : ১০:৫৭:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

অবাধ, সুষ্ঠু ও বিতর্কহীন নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে কমিশন। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে অংশীজনের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অনেকগুলো প্রস্তাবনা কমিশনের কাছে জমা পড়েছে। সবগুলো সমন্বিত করে একটি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেবেন কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি জানিয়েছেন, অংশীজনের মতামত নিয়ে নিজেদের মধ্যে বসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে।

সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন : গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উঠে এসেছে। তার মধ্যে অন্যতম রাষ্ট্রপতি পদে সরাসরি ভোটে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপতি হতে হবে দলনিরপেক্ষ। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রার্থী হিসেবে কাউকে মনোনীত না করে ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে হবে।

‘না’ ভোট : অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এমন একটা পদ্ধতি দিতে চায়, যেন একদলীয় শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হয়। সেজন্য যে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার সুযোগ বন্ধের প্রস্তাব এসেছে কমিশনের কাছে। সে ক্ষেত্রে ‘না’ ভোট পদ্ধতি চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন অনেকে। যেন কোনো একজন প্রার্থীকে যোগ্য মনে না করলে তাকে ‘না’ ভোট দিয়ে পরাজিত করে নতুন প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ থাকে। এমন প্রস্তাব কমিশনের কাছে এসেছে।

নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন পদ্ধতি : আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা ছিল পূর্বের সরকারের ত্রুটিপূর্ণ আইন সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন পদ্ধতি চালু করা। সেখানে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে একটি কমিটি হবে। সেই কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেবে। এরপর যোগ্যরা আবেদন করলে তাদের মধ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব এসেছে।

প্রবাসীদের ভোট কাজে লাগানো : জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, বিশে^র বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ৪৮ লাখের বেশি বাঙালি রয়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এই প্রবাসীদের বেশির ভাগই ভোট দানের সুযোগ বঞ্চিত থাকেন। তাই এবার প্রবাসীদের ভোট কাজে লাগাতে চায় সংস্কার কমিশন। তাদের জন্য ইলেট্রনিক ভোট পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব উঠেছে। ইমেইল বা প্রযুক্তির সাহায্যে প্রবাসীরাও যাতে সরকার গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে সেই ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব এসেছে।

রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রের চর্চা : কোনো এক পরিবার বা ব্যক্তির কাছে রাজনৈতিক দল যেন জিম্মি না থাকে সেজন্য দলগুলোতে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠায় একমত পোষণ করেছেন অনেকে। দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক যেন ভোটের মাধ্যমে হয় বা এমন কোনো পদ্ধতি চালু করা যেন একই ব্যক্তি বারবার সভাপতি থাকতে না পারে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন এক শিডিউলে করা : ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন নিয়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং ব্যয় সাশ্রয়ী করতে এসব সংস্থায় এক শিডিউলে ভোটের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করছে সংস্কার কমিশন। এজন্য একাধিক প্রস্তাবনা এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম মেয়র পদে ভোট না করে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে। আর নির্বাচিতরা তাদের প্রশাসনিক কাঠামো ঠিক করবেন। তাদের মধ্যে থেকে একজন মেয়র হবেন। পার্শ^বর্তী দেশে এই পদ্ধতি চালু রয়েছে। আর এক শিডিউলে ভোটে ব্যয় সাশ্রয়ী হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ।

উপজেলায় ‘নারী ভাইস চেয়ারম্যান’ পদ তুলে দেওয়া : কমিশনের কাছে প্রস্তাবনা এসেছে উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান থাকবে না। প্রত্যেকটি উপজেলায় ওয়ার্ড হবে। একটা উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন থাকলে ৩০টি আসন হবে। ৩০ জন নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্ধারণ করবেন। জেলা পরিষদেরও ওয়ার্ড থাকবে বেশি। তখন প্রার্থী হওয়া ও নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বাড়বে। তবে আদিবাসীদের জন্য কতটুকু বাড়বে তা দেখার বিষয়। না বাড়লে তাদের স্থায়ী কমিটিতে নিতে হবে।

সংরক্ষিত নয়, নারীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন : নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার জানান, নারীরা সরাসরি নির্বাচন চেয়েছেন। অনেকে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি চেয়েছেন। নারীবান্ধব নির্বাচন হতে হবে। ইসি ও ইসি কর্মকর্তাদের এক-তৃতীয়াংশ নারী হতে হবে। দলীয় কার্যক্রমে নারী ৩৩ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনী ব্যয় সংকোচন ও নারী আসন ১৫০টি করার কথা বলেছেন। কেউ কেউ ১০০টি আসনের কথাও বলেছেন। অনেকে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চেয়েছেন।

হস্তক্ষেপ রুখে দেওয়ার বিধান : অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কেউ যাতে হস্তক্ষেপ করতে না পারে, তেমন বিধি-বিধান চান নির্বাচন কর্মকর্তারা। কমিশনের কাছে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন তো একা নির্বাচন করে না। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রের সব অর্গান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করে। নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে সংবিধান ও আইনে, সেই ক্ষমতা যেন পুরোপুরি প্রয়োগ করা যায়। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যাতে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কর্মকর্তারা কোনো ধরনের বাধাগ্রস্ত না হন, এটিও নিশ্চিত করতে হবে।

আদিবাসী প্রতিনিধি নিশ্চিতের প্রস্তাব : কমিশনের কাছে আদিবাসী প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন ব্যবস্থায় অবশ্যই আদিবাসীদের প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এটি থাকবে। সংসদে সংরক্ষিত ৫০টি আসন আছে। এটি শুধু দল নয়, পিছিয়ে পড়া ও আদিবাসীসহ যাদের প্রতিনিধি কখনও সংসদে প্রতিনিধি আসেনি তাদের মধ্যে থেকে বাছাই করা হবে।

বিতর্কিত নির্বাচনের জন্য ইসির সাবেকদের বিচারের ব্যবস্থা : বিগত কমিশনগুলো বিতর্কিত নির্বাচন করে শপথ ভঙ্গ ও সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। অনেকেই তাদের বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে।

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে অংশীজনের সঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় অব্যাহত আছে। কমিশন বিভিন্ন মহলের প্রস্তাবনা ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তা তুলে ধরবেন। এ বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা এখনও কোনোটাই চূড়ান্ত করিনি। নিজেরা বসে ভেবে-চিন্তে মতামত দেব। একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য যা করা দরকার তাই করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা বসছি না। তাদের মতামত লিখিতভাবে নেওয়া হবে। দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে সরকার।’