ঢাকা ০৭:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অবরুদ্ধ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিপাকে সেবা প্রত্যাশীরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৭:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪
  • ৩ বার

বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপির দ্রুত বাস্তবায়ন ও সকর সরকারি হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির পদে নিয়োগের দাবিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবরুদ্ধ করেছে ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীরা। অধিদপ্তরের দুটি প্রবেশদ্বারই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বাইরে ভিতরে যেমন কেউ ঢুকতে পারছেননা, তেমনি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন কাজে অধিদপ্তরে ঢোকা ব্যক্তিরা কেউই বের পারছেননা।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সম্মিলিত ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থী পরিষদের (সফিশিপ) ব্যানারে আন্দোলন করছেন সরকারি-বেসরকারি ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীরা।

ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীরা বলেন, বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভঙ্গ করা হয়েছে। আমরা আর মৌখিক কোনো আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে যাবনা। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

জানা গেছে, ১৯৭৩ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের অধীনে ৫ বছরের ফিজিওথেরাপি কোর্স চালু করে সরকার। তবে কোর্স চালু করলেও সরকারি কোনো হাসপাতালেই বিএসসি ফিজিওথেরাপিস্টদের জন্য তৈরি করা হয়নি কোনো পদ। ফলে প্রতিবছর সহস্রাধিক ফিজিওথেরাপিস্ট বের হলেও সরকারি হাসপাতালে সেবা দিতে পারছেনা তারা। বেসরকারি হাসপাতালই ভরসা।

ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীরা জানান, সারাদেশে ১৫টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফিজিওথেরাপি কোর্স চালু রয়েছে। এর মধ্যে চারটি সরকারি, ১১টি বেসরকারি। বর্তমানে অধ্যায়নরত রয়েছে দেড় হাজারের মতো।

তারা জানান, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি চালুর উদ্যোগ নেই তৎকালীন সরকার। এজন্য মহাখালীতে জায়গাও নির্ধারিত হয়৷ তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ভিত্তি প্রস্তুরও উদ্বোধন করেন। কিন্তু ২০১৮ সালে অদৃশ্য কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়৷ ওই জায়গায় নার্সদের জন্য ভবন করা হয়।

ঢাকা ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড টেকনোলজির ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থী বজলুল হক আমাদের সময়কে বলেন, সরকার কোর্স চালু করেছে কিন্তু সরকারিতে সরাসরি কোনো পদ তৈরি করেনি। সেখানে ডিপ্লোমা ফিজিওথেরাপিস্টরা সুযোগ পাচ্ছে, সেবা দেওয়া থেকে বঞ্চিত বিএসসি ফিজিওথেরাপিস্টরা। তাদের ভরসা কেবলমাত্র বেসরকারি হাসপাতাল। বর্তমানে সারাদেশে ১৫ হাজারের মতো বিএসসি ফিজিওথেরাপিস্ট রয়েছে। শিক্ষার্থী রয়েছে দেড় হাজারের মতো।

তিনি বলেন, স্বতন্ত্র কলেজ ও সরকারি হাসপাতালে প্রথম শ্রেণিতে নিয়োগের দাবিতে দুই মাস আগে আমরা অধিদপ্তরে আন্দোলন করেছিলাম। সে প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা দুই অধিদপ্তরেই আলাদা কমিটি করবে বলে জানানো হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এক মাস পর কমিটি করে, সভাও হয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। পরবর্তীতে তারা আর আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে আজ অধিদপ্তর অবরুদ্ধ করেছি।

মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন কতটা যৌক্তিক? এমন প্রশ্নের জবাবে বজলুল হক বলেন, ‘বারবার আমাদের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে। কোনো প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। ফলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আমরা অবরুদ্ধ করতে বাধ্য হয়োছি। আমরাও তো ৬০ বছর ধরে ভোগান্তির শিকার। এখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে চাই। অধিদপ্তরের কারও কথায় আমরা আস্থা রাখতে পারছিনা।’

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবরুদ্ধ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বদলি, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অধিদপ্তরে আসা চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা। দুটি প্রবেশদ্বারই বন্ধ করে দেওয়ায় কেউই ভিতরে ঢুকতে পারছেনা, এমনকি কেউ বের হতেও পারছেনা। এতে করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় বাকবিতন্ডায় জড়ান অধিদপ্তরে সেবা নিতে আসা ও আটকে পড়া ব্যক্তিরা।

সরেজমিনে বেলা সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক ও দ্বিতীয় ফটকের দরজা দঁড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরে প্রবেশের চেষ্টায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বার বার কথা বলার চেষ্টা করছেন আগন্তুকরা। বদলির সুপারিশ নিয়ে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে এসেছে ডা. আরিফ৷ কিন্তু ২০ মিনিট ধরে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রবেশদ্বার খুলে দিতে অনুরোধ করেও ঢুকতে পারেননি।

ডা. আরিফ আমাদের সময়কে বলেন, ‘সুনামগঞ্জ থেকে সরাসরি অধিদপ্তরে এসেছি। এসেই এমন অবস্থা দেখছি। অনেকবার অনুরোধ করলাম, ঢুকতে দিচ্ছেনা। এটা তো ঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে কেন কষ্ট দেবে। ঢাকার বাইরে থেকে আমার মতো বহুজন এসেছে। কিন্তু তারা ঢুকতে দিচ্ছেনা। এটা তো কোনো যৌক্তিক কাজ হতে পারেনা।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অবরুদ্ধ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিপাকে সেবা প্রত্যাশীরা

আপডেট টাইম : ০৬:৩৭:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপির দ্রুত বাস্তবায়ন ও সকর সরকারি হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির পদে নিয়োগের দাবিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবরুদ্ধ করেছে ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীরা। অধিদপ্তরের দুটি প্রবেশদ্বারই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বাইরে ভিতরে যেমন কেউ ঢুকতে পারছেননা, তেমনি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন কাজে অধিদপ্তরে ঢোকা ব্যক্তিরা কেউই বের পারছেননা।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সম্মিলিত ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থী পরিষদের (সফিশিপ) ব্যানারে আন্দোলন করছেন সরকারি-বেসরকারি ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীরা।

ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীরা বলেন, বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভঙ্গ করা হয়েছে। আমরা আর মৌখিক কোনো আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে যাবনা। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

জানা গেছে, ১৯৭৩ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের অধীনে ৫ বছরের ফিজিওথেরাপি কোর্স চালু করে সরকার। তবে কোর্স চালু করলেও সরকারি কোনো হাসপাতালেই বিএসসি ফিজিওথেরাপিস্টদের জন্য তৈরি করা হয়নি কোনো পদ। ফলে প্রতিবছর সহস্রাধিক ফিজিওথেরাপিস্ট বের হলেও সরকারি হাসপাতালে সেবা দিতে পারছেনা তারা। বেসরকারি হাসপাতালই ভরসা।

ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীরা জানান, সারাদেশে ১৫টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফিজিওথেরাপি কোর্স চালু রয়েছে। এর মধ্যে চারটি সরকারি, ১১টি বেসরকারি। বর্তমানে অধ্যায়নরত রয়েছে দেড় হাজারের মতো।

তারা জানান, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি চালুর উদ্যোগ নেই তৎকালীন সরকার। এজন্য মহাখালীতে জায়গাও নির্ধারিত হয়৷ তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ভিত্তি প্রস্তুরও উদ্বোধন করেন। কিন্তু ২০১৮ সালে অদৃশ্য কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়৷ ওই জায়গায় নার্সদের জন্য ভবন করা হয়।

ঢাকা ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড টেকনোলজির ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থী বজলুল হক আমাদের সময়কে বলেন, সরকার কোর্স চালু করেছে কিন্তু সরকারিতে সরাসরি কোনো পদ তৈরি করেনি। সেখানে ডিপ্লোমা ফিজিওথেরাপিস্টরা সুযোগ পাচ্ছে, সেবা দেওয়া থেকে বঞ্চিত বিএসসি ফিজিওথেরাপিস্টরা। তাদের ভরসা কেবলমাত্র বেসরকারি হাসপাতাল। বর্তমানে সারাদেশে ১৫ হাজারের মতো বিএসসি ফিজিওথেরাপিস্ট রয়েছে। শিক্ষার্থী রয়েছে দেড় হাজারের মতো।

তিনি বলেন, স্বতন্ত্র কলেজ ও সরকারি হাসপাতালে প্রথম শ্রেণিতে নিয়োগের দাবিতে দুই মাস আগে আমরা অধিদপ্তরে আন্দোলন করেছিলাম। সে প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা দুই অধিদপ্তরেই আলাদা কমিটি করবে বলে জানানো হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এক মাস পর কমিটি করে, সভাও হয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। পরবর্তীতে তারা আর আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে আজ অধিদপ্তর অবরুদ্ধ করেছি।

মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন কতটা যৌক্তিক? এমন প্রশ্নের জবাবে বজলুল হক বলেন, ‘বারবার আমাদের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে। কোনো প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। ফলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আমরা অবরুদ্ধ করতে বাধ্য হয়োছি। আমরাও তো ৬০ বছর ধরে ভোগান্তির শিকার। এখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে চাই। অধিদপ্তরের কারও কথায় আমরা আস্থা রাখতে পারছিনা।’

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবরুদ্ধ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বদলি, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অধিদপ্তরে আসা চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা। দুটি প্রবেশদ্বারই বন্ধ করে দেওয়ায় কেউই ভিতরে ঢুকতে পারছেনা, এমনকি কেউ বের হতেও পারছেনা। এতে করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় বাকবিতন্ডায় জড়ান অধিদপ্তরে সেবা নিতে আসা ও আটকে পড়া ব্যক্তিরা।

সরেজমিনে বেলা সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক ও দ্বিতীয় ফটকের দরজা দঁড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরে প্রবেশের চেষ্টায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বার বার কথা বলার চেষ্টা করছেন আগন্তুকরা। বদলির সুপারিশ নিয়ে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে এসেছে ডা. আরিফ৷ কিন্তু ২০ মিনিট ধরে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রবেশদ্বার খুলে দিতে অনুরোধ করেও ঢুকতে পারেননি।

ডা. আরিফ আমাদের সময়কে বলেন, ‘সুনামগঞ্জ থেকে সরাসরি অধিদপ্তরে এসেছি। এসেই এমন অবস্থা দেখছি। অনেকবার অনুরোধ করলাম, ঢুকতে দিচ্ছেনা। এটা তো ঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে কেন কষ্ট দেবে। ঢাকার বাইরে থেকে আমার মতো বহুজন এসেছে। কিন্তু তারা ঢুকতে দিচ্ছেনা। এটা তো কোনো যৌক্তিক কাজ হতে পারেনা।’